সিলেট ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০১৮
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বিয়ের প্রলোভনে ৪র্থ শ্রেনীর এক ছাত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে উপজেলার জয়চন্ডি ইউনিয়নের গৌড়িশংকর গ্রামের লৈয়ারহাই গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে লম্পট সামছার অরফে আজাদ (২৮)। দীর্ঘদিনের এই অনৈতিক সম্পর্কের ফলশ্রুতিতে ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হলে পরিবারের সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তারা ছাত্রীটিকে ডাক্তারী পরীক্ষা নীরিক্ষা করলে সে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ধরা পড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নিকট ভিকটিমের পরিবার একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে। এই নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে তদন্ত করে জানা যায়, পাশের বাড়ির দুর-সম্পর্কের এক খালার ঘরে টেলিভিশন দেখতে যায় একটি সরকারী বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী রুমি (ছদ্ধনাম)। নিয়মিত যাওয়া আসার সময় পরিচয় হয় গৌরিশংকর এলাকার লৈয়ারহাই গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে লম্পট সামছার অরফে আজাদ (২৮) নামের বখাটের সাথে। এই সুযোগে রুমিকে তার ওই খালার বাড়ির পাশেই অবস্থিত নির্জন বাঁশ-ঝাড়ের ঝুপে নিয়ে যায় আজাদ। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে ওই লম্পট। একই সময় এই অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে মুখ খুললে মেরে ফেলবে বলে হুমকী দেয় ছামছার অরফে আজাদ। এভাবে ২/১ দিন পরপর রুমিকে হুমকী দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে আজাদ।
এদিকে রুমি (ছদ্ধনাম) ভয়ে এই ঘটনা কাউকে বলেনি। কিন্তু সে তো এটাই বুঝে উঠতে পারছিলো না যে তার জীবনে বড় ধরনের একটা দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে। তার শারীরিক পরিবর্তনে তার মায়ের সন্দেহ হয়। ঘরে ভাবী তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে নিশ্চুপ থাকে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বড় ভাই প্রবাস থেকে এসে বিষয়টি নিয়ে তাকে চাপ দেন। এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে যে আজাদ তার সাথে খারাপ কিছু করেছে। কাউকে কিছু বললে মেরে ফেলারও হুমকী দিতে থাকে। তাই সে কাউকে কিছু বলেনি।
শারীরিকভাবে অক্ষম জীবিত পিতা সয্যাশয়ী। পরিবারের ৯ সদস্যকে নিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যেই সংসার পরিচালনা করছেন বড় ভাই। তার উপর ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’। কিভাবে বিষয়টি সামাল দিবে ভাই বুঝে উঠতে পারছেন না। দ্বারস্ত হলেন লম্পট আজাদের পরিবারের সদস্যদের ঘরে। তারাও দুর দুর করে তাড়িয়ে দিলেন। আজাদের বোনের জামাই শাহিদ মিয়া, আজাদের বড় ভাই রম মিয়া এমনকি লম্পটের মা ও তাদের গালিগালাজ করে বিতারিত করেন। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে এসিড দিয়ে রুমি (ছদ্ধনাম)-র শরীর জ¦লসে দেয়ার হুমকী দেয় আজাদের বড় ভাই।
পরিবারের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদককে জানান, এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে তারা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজ উদ্দিন লবিক এর সহায়তা চান তারা। ইউপি সদস্য এবিষয়ে কোন সুরাহা করতে না পেরে তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। একপর্যায়ে গত ৮ জুন (শুক্রবার) তারা কুলাউড়া থানায় আসলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম মুসা থানার এসআই সনক কান্তি দাশকে লম্পট আজাদকে আটকের নির্দেশ দেন। এসআই ওই লম্পটের বাড়ি গিয়ে তাকে খুঁজে পাননি। যদিও গণম্যাধমকে ওসি জানিয়েছেন তিনি আগে বিষয়টি জানতেন না।
এদিকে কোনভাবেই এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বেশ অসহায় বোধ করছে ভিকটিমের পরিবার। হন্যে হয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে গিয়েও কোন সমাধান পাচ্ছেনা তারা। তার উপর লম্পট আজাদের পরিবার থেকে আসছে উৎকোচের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার প্রস্তাব নতুবা হুমকী।
সরজমিনে নির্যাতিত ছাত্রীর বাড়িতে গেলে ভিকটিম জানায় কিভাবে হুমকি ধামকি আর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একের পর এক শারীরিক নির্যাতন করেছে গৌরিশংকর এলাকার লৈয়ারহাই গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে লম্পট ছামছার অরফে আজাদ।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের ১২ তারিখে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়েটিকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে পাশের একটি বাঁশ-ঝাড়ে নিয়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে।
নির্যাতিত মেয়েটি জানায় ‘বিয়ের প্রলোভন আর নানা হুমকি দিয়ে কয়েকদিন পর পর একটি বাঁশ-ঝাড়ে নিয়ে আমার সাথে শারীরিক মেলামেশা করেছে লৈয়ারহাই গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে ছামছার অরফে আজাদ।
এবিষয়ে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামীম মুসা বলেন, আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি অভিযোগ হয় অবশ্যই আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন -‘ আজ (১১ জুন) মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমাকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন।’
কুলাউড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার চৌধুরী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বী জানান-‘ আমি ঘটনাটা শুনেছি। আমরা ভিকটিম পরিবারকে আইনি সহায়তা করব’।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd