ছাতক হাসপাতালে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ : হুমকীর মুখে স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত: ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০১৮

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ছাতকের কৈতক হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার-নার্সদের দায়িত্বে অবহেলা ও প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার ৪টি উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাক্তরসহ প্রায় পূর্নাঙ্গ জনবল থাকা সত্বেও ডাক্তার-নার্সরা বাড়তি আয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারনে ছাতকসহ জগন্নাপুর, দোয়ারাবাজার ও দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলার দুই থেকে তিন লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কৈতক হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসা সেবার মুখ থুবড়ে পড়েছে।

ছাতক-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে জাউয়াবাজার ইউনিয়নের কৈতক পয়েন্টে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০ শয্যা বিশিষ্ট কৈতক হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এলাকার সচেতন মানুষের সহযোগিতায় হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার গুনগত মান বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি উপজেলার দক্ষিনাঞ্চলসহ দোয়ারবাজার, দক্ষিন সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থসেবা ক্ষেত্রে অনেকটা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

হাসপাতালের কার্যক্রমের অগ্রতির কারনে বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধিন জোট সরকারের আমলে সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলনের সহযোগীতায় এ হাসপাতালকে ১০ শয্যা থেকে ২০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। চলতি বছরের গত ৪ ফেব্রুয়ারী উপজেলার দক্ষিন খুরমায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন শেষে চেচান এলাকায় উদ্বোধনী সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কৈতক হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার ঘোষনা দেন।

কিন্তু হাসপাতালে সার্বিক অগ্রগতি চলমান থাকলে বর্তমানে চিকিৎসা সেবা চলছে তার বিপরীতমুখী। দুর-দুরান্ত থেকে রোগীরা এসে হাসপাতালে ডাক্তারদের সান্নিধ্যে যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। জরুরী বিভাগসহ হাসপাতালের সরকারি চেম্বার গুলো প্রায় সব সময়ই থাকে ফাঁকা। কর্মরত ডাক্তাররা সরকারি দায়িত্ব পালনের চেয়ে বাসায় বসে প্রাইভেট চিকিৎসা দিয়ে বাড়তি উপার্জনে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে বেশির ভাগ সময়ে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের ইনচার্জসহ নিয়োগ প্রাপ্ত সকল ডাক্তারই হাসপাতালে না এসে বাসায় রোগী দেখছেন নিয়মিত। একই সাথে অভিজ্ঞ নার্সরাও বাসায় খুলে বসেছেন প্রাইভেট চেম্বার। দেখলে মনে হবে, ডাক্তার ও নার্সের সরকারি বাসা যেন এক-একটি ডাক্তারী প্রাইভেট চেম্বারসহ ফার্মেসী। গাইনী ও প্রসূতী বিষয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশীর ভাগ সময়ই নার্সদের বাসার চেম্বারে সিকিৎসা নিতে বাধ্য করা হয়।

অফিস চলাকালীন সময়েও নার্সদের সরকারি বাসায় দীর্ঘ লাইনে গাইনী ও প্রসূতী রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। প্রাইভেট চিকিৎসা প্রদান নিয়ে ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে বিরোধও লক্ষ করা গেছে বিভিন্ন সময়ে। হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. মোজাহারুল ইসলাম নিজ ক্ষমতাবলে প্রায়ই ছুটির অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন বলে স্থানীয় ও হাপাতালে আসা রুগীদের সুত্রে জানা গেছে।

তিনিও তার সরকারি বাসায় খুলেছেন রোগী দেখার প্রাইভেট চেম্বার। এখানে বাসার চেম্বারে বসেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রাইভেটে ভিজিট নিয়ে চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকার অভিযোগও রয়েছে একাধিক ডাক্তার ও নার্সদের বিরুদ্ধে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এবং ডাক্তারদের সরকারি চেম্বারে রোগীরা এসে ডাক্তারের খুঁজ করলে ছুটিতে আছেন অথবা চেম্বারে রয়েছেন এমনিইভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে বছরের অধিকাংশ সময়ই ছুটির অজুহাতে দায়িত্বে অবহেলা করে যাচ্ছেন এখানের চিকিৎসা সেবায় কর্মরত সকল ডাক্তার ও নার্সরা।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..