সিলেট ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৫৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই কুলাউড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র দক্ষিণ বাজারে অবস্থিত একটি সরকারী স্কুলে তিনটি বাণিজ্যিক দোকানকোটা নির্মাণ অব্যাহত আছে। ব্যস্ততম দক্ষিণ বাজারে অবস্থিত প্রাচীনতম বশিরুল হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে পৌর মেয়র শফি আলম ইউনুছ এর অর্থায়নে এই ভবন নির্মাণ কার্যক্রম চলছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জেলা শিক্ষা অফিস কার্যালয়ের নির্দেশনায় একটি তদন্ত পরিচালনা করছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপজেলা কিংবা জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের কোন কর্মকর্তার অনুমোদন না নিয়ে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এহেন কার্যক্রম পরিচালনা করায় স্থানীয় জনসাধারণ, বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। এদিকে পৌর মেয়র নিজে এই নির্মাণ কাজের জন্য প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ধার দিচ্ছেন বলে সূত্র থেকে জানা গেছে। পরবর্তীতে দোকানের ভাড়া কিংবা সিকিউরিটি উত্তোলন করে সেই ধারের টাকা পরিশোধ হবে এমনটা জানিয়েছেন কেউ কেউ।
সরেজমিনে রবিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের সামনের ব্যস্ত সড়কটিতে বেশ ঢালাওভাবে বিদ্যালয়ের গাঁ ঘেঁষে দোকানকোটা নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কের উপড়েই রাখা হয়েছে নির্মাণাধীন ইট, বালু ও বিভিন্ন কাঁচামাল। পথচারীসহ জনসাধারণ চরম অস্বস্থিতে রাস্তা পারাপার হচ্ছে।
১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের গেইটের সামনে কোন জায়গা না থাকায় অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের নানা রকম বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হচ্ছে। সংকুচিত এই সড়কটিতে বিদ্যালয়ের গাঁ ঘেঁষে প্রতিনিয়ত গাড়ি চলাচল করছে। এই সড়কে সাধারণ পথচারীদের দাঁড়ানোর মতো কোন ফুটপাত নেই। দ্রুত বেগে বিদ্যালয়ে ঢুকতে হয় আবার দ্রুত বেগে বিদ্যালয় গেইট থেকে বের হতে হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ।
কুলাউড়া থেকে কাদিপুর এবং ভূকশীমইল ইউনিয়নে যাতায়াতের জন্য ১২ থেকে ১৫ ফুট প্রশস্ত একমাত্র সড়কটি দক্ষিণ বাজারের বুকের উপর দিয়ে বইছে। তাছাড়া প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বাজারের কাঁচামাল উঠা-নামা করতে বড় বড় গাড়ি অবস্থান নেয়। এতে সারাক্ষণ জঞ্জাল লেগেই থাকে। এছাড়াও টমটম স্ট্যান্ড, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান এর যত্রতত্র অবস্থানে জনমনে ক্ষোভ লেগেই থাকে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাইযূম এর সাথে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র শফি আলম ইউনুছ বলেন- ‘স্কুলের বাচ্চাদের টিফিনের খরচ বহন করার স্বার্থে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া এই জমিটা পরিত্যক্ত হিসেবে মানুষ ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখতো। অনেক বলার পরও কেউ ময়লা ফেলা বন্ধ করেনি। তাছাড়া যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে স্কুলের গেইটের সামনে সব সময় গ্যাঞ্জাম লেগেই থাকে।’
দোকানকোটা তৈরির অর্থায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুলের স্বার্থে আমি টাকা ধার দিচ্ছি। আমার কোন লাভ-স্বার্থ নেই। তিনি বলেন, আমার আগের পরিচালনা কমিটি এই নির্মাণের জন্য রেজ্যুলেশন পাশ করে কিন্তু তারা তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আমি তা বাস্তবায়ন করছি’।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান বলেন- ‘ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমি তদন্ত করতে ওই স্কুলে গিয়েছিলাম। শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে কথা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলছেন, কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে দোকানকোটা নির্মাণ করা হচ্ছে। দোকানকোটা নির্মাণের জন্য মেয়র টাকা ধার দিয়েছেন। পরে দোকানকোটার ভাড়ার আয় থেকে তা সমন্বয় করা হবে। তবে শিক্ষা অফিস এ ব্যাপারে কোনো অনুমতি দেয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এভাবে বাণিজ্যিক স্থাপনা করার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আছে কি না সে সংক্রান্ত কোনো পরিপত্রও চোখে পড়েনি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন- ‘আমি মৌখিকভাবে কাজ বন্ধের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। সরকারী জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কতটুকু বৈধতা পায় তা শিক্ষা বিভাগকে সমন্বয় করে খতিয়ে দেখছি’।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd