টাঙ্গুয়ার হাওরের তলিয়ে যেতে পারে ৫ হাজার একর জমির বোরো ধান

প্রকাশিত: ১০:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০১৮

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের বোরো ফসলরক্ষা নজরখালী ক্লোজার বাঁধের একাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে।’ এ অবস্থায় ওই হাওরে সহ আশে পাশে থাকা ছোট বড় কয়েকটি হাওরে আবাদকৃত প্রায় ৫ হাজার একর বোরো ফসল যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে যাবার আশংকায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাজারো কৃষক পরিবার।’

স্থানীয় কৃষক ও পাউবো সুত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের তদারকিতে থাকা রামসার প্রকল্পভুক্ত টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী ক্লোজার বাঁধটি প্রতি বছরের ন্যায় চলতি বছর টাঙ্গুয়ার হাওর সহব্যবস্থাপনা কমিটির তত্বাবধানে টাঙ্গুয়ার হাওরের জলমহাল পারমিটের অর্থ থেকে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।’

অভিযোগ রয়েছে বাঁধটি নির্মাণ কাজের সময় দুর্মুজ, প্যালাসাইটিং না করায় বাঁেধর কাজ মজবুত ভাবে করা হয়ে উঠেনি।’ নজরখালী বাঁেধর আশে পাশে টাঙ্গুয়ার হাওর সহ আশে পাশে থাকা এ্যারাইল্ল্যা কোনা, গইন্ন্যাকুড়ি, লামারগুল, টানেরগুল, মাঝেরগুল, নান্দিয়া, টুঙ্গামারা, সোনাডুবি, গলগলিয়া, শামসাগর হাওর মিলে প্রায় ৫ হাজার একর জমির ধান স্থানীয় কৃষকরা আবাদ করেছেন। এখন ওই বাঁধ ধান পাকার আগেই ফাটল ও দেবে যাওয়ায় কৃষকরা বোরো ফসল গোলায় তোলা নিয়ে নতুন করে শংকিত হয়ে পড়েছেন।’

টাঙ্গুয়ার হাওর সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ খসরুল আলম বলেন,‘বিগত বছর হাওরের সকল ফসল ডুবির কারনে এ বছর বাঁধটি নির্মাণের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওর সহ ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়ার পর বাঁধটি নির্মাণের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের ধর্মপাশার মধ্যনগরের উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের বাদল মিয়াকে প্রকল্প চেয়ারম্যান ও তাহিরপুরের শ্রীপুর উওর ইউনিয়নের ওয়াহিদ মিয়াকে সেক্রেটারী করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে বাঁধটি নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়।

টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ এলাকার কৃষক তাহিরপুরের গোলাবাড়ি গ্রামের গোলাম মোস্তফা (৫৫) বললেন,‘নজরখালি বাঁধের কাজটি শুরু থেকেই দায়সারা ভাবে করা হয়েছে, যে কারনে এখন বাঁধ দেবে একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।’

উপজেলার নোয়ান্দ গ্রামের কৃষক রিয়াজ উদ্দিন (৪২) বললেন, বাঁেধর কাজের শুরুতেই আমরা বলেছি দুর্মুজ করে বাঁধে মাটি ফেলার জন্য কিন্তু প্রকল্প কমিটির লোকজন আমাদের কোন কথাই শুনেননি।’তিনি আরো বলেন,‘বর্তমানে ধান কাঁটার পুরো মৌসুম। এ অবস্থায় হাওরপারের লোকজন তার নিজের ধান কাটবে না বাঁধ রক্ষায় দৌড়াবে ?।

তাহিরপুরের শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খসরুল আলম বৃহস্পতিবার জানান, টাঙ্গুয়ার হাওর সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন এ বাঁধটি বিলের পারমিটের টাকা দিয়ে প্রতি বছরই নির্মাণ করে থাকেন। এ বছর কাজটি ভালভাবে না করার কারণেই এ সমস্যা দেখা দিয়েছে এমনকি স্থানীয় কৃষকরাও আমাকে ওই বাঁধের ফাঁটল ও দেবে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, পুন:রায় বাঁধটি সংস্কার না করা হলে ওই বাঁধের ওপর নির্ভরশীল ছোট বড় কয়েকটি হাওরের প্রায় ৫ হাজার একর জমির ধান যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী ক্লোজার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান বাদল মিয়ার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঁধের কাজে কোন অনিয়ম হয়নি, যে পরিমাণ বরাদ্দ ছিল আমরা সেই পরিমাণ কাজই করেছি। তিনি আরো বলেন, এরপর আমরা বুধবার সকালে ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিক লাগিয়েছি ওই বাঁধের ফাটলে পুন:রায় মাটি ভরাটের জন্য।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান হোসেন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি ক্লোজার বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নয়।’ বাঁধ নির্মাণ যেহেতু টাঙ্গুয়ার হাওর সহব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন সম্পন্ন করেছেন সেক্ষেত্রে উনারদেরই ওই বাঁধ রক্ষায় যা যা করণীয় দ্রুত সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুর্ণেন্দু দের মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে কল রিসিভ না করায় উনার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..