সিলেটে মেয়াদোত্তীর্ন পচা খেজুর ফের দোকানে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ১:১০ পূর্বাহ্ণ, মে ১০, ২০১৯

সিলেটে মেয়াদোত্তীর্ন পচা খেজুর ফের দোকানে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

সিলেটে রোজার প্রথম দিনেই অভিযানে ফেলে দেওয়া মেয়াদোত্তীর্ন খেজুর ময়লার ভাগাড় থেকে তুলে ফের দোকানে নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। আগেও বিভিন্ন অভিযানে জব্দ করা পচা, মেয়াদোত্তীর্ন বিস্কুট, সেমাইসহ বিভিন্ন পণ্য ডাস্টবিনে ফেলার পর সেখান থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে। এতে জব্দকৃত এসব পণ্য ধ্বংশের প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন ওঠেছে।

গত মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে দক্ষিন সুরমা এলাকার ফল বাজারে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর। এসময় মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর রাখার দায়ে দক্ষিন সুরমার ফল বাজারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও প্রায় ১২ টন পচা খেজুর জব্দ করে ভ্রাম্যমান আদালত। জব্দ করা এসব পচা খেজুর একটি ট্রাকে বোঝাই করে সিলেটের হুমায়ন রশিদ চত্বর সংলগ্ন সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের রাস্তার পাশে একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়।

বুধবার (৮ মে) বিকেলে স্থানীয় জনতার সামনেই বস্তা ভর্তি পচা খেজুরগুলো ময়লার ভাগাড় থেকে দোকানী ও রেস্তোরার মালিকরা কর্মচারীদের দিয়ে তুলিয়ে আনেন।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সূত্রে জানা যায়, দোকান কর্মচারীরা দিনভর ভাগাড় থকে পচা খেজুর সংগ্রহ করে। ময়লার ভাগাড় থেকে নিয়ে যাওয়া খেজুরের বস্তাগুলো ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লাযুক্ত ছিল। বিকেলে খেজুরগুলো একটি ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে জনতা দেখে ফেলায় হতভম্ব হয়ে পড়েন দোকান কর্মচারীরা। এসময় লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে দোকান কর্মচারীরা সটকে পড়েন।

ময়লায় ফেলা নষ্ট খেজুর তুলে এনে বিক্রি করে ক্রেতাদের সাথে ব্যবসায়িরা প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রমজানে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিযান পরিচালনা করছে। এর জন্য অব্যশই তাদের ধন্যবাদ দিতে হয়। তবে তাদের এই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হতো না যদি জব্দকৃত পণ্য ধ্বংশ প্রক্রিয়াটা আরো শক্ত হতো। যেসব দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল সেসব দোকানে আবারো অভিযান দেওয়া হোক। এসব অপরাধের জন্য ব্যবসায়িদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক। এবং জব্দকৃত পণ্য পুড়িয়ে দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যদি নীতি নৈতিকতা না থাকে তবে সে দেশের সাধারণ মানুষের উপড়ও সেটার প্রভাব পরে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের নীতি নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। কোনো নীতিবান মানুষ এই পচা খেজুর ময়লার ভাগাড় থেকে তুলে এনে বিক্রি করতে পারেন না। যেহেতু এত ঘৃন্য কাজ মানুষ স্বাছন্দে করছে তাই বুঝতে হতে হবে রাষ্ট্রের অনৈতিক কাজের প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর ব্যপকভাবে পড়েছে। তাই এসব রোধ করতে সম্মিলিত ভাবে কাজ করা ও জন সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেন ফারুক মাহমুদ চৌধুরী।

এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিদফতর সিলেটের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ভাগাড় ফেলা পচা খেজুর তুলে এনে বিক্রি করার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে যদি এরকম কাজ করা হয় তবে এটা অনেক দুঃখজনক ও ভয়াবহ। যে জিনিস ময়লায় ফেলে দেওয়া হয়েছে সেগুলো তুলে এনে বিক্রি করা মানুষগুলো কতটুকু নীতি নৈতিকতা আছে।

তিনি বলেন, জব্দকৃত পণ্য ধ্বংশ করতে সব জায়গায় আমরা বুলডোজার ব্যবহার করতে পারি না। যে এলাকায় অভিযান হয় সে এলাকার নর্দমা, ডোবায়ায় পণ্যগুলো ফেলে দিয়ে ধ্বংশ করি। এখন যদি ব্যবসায়িরা ডোবা থেকে, ময়লা থেকে পণ্য আবার তুলে আনেন তাহলে এসব ধ্বংশের প্রক্রিয়ায় আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।

তিনি বলেন, যে বা যারা পচা খেজুর সংগ্রহ করেছে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। ধরতে পারলে আইন অনুযায়ি শাস্তি দেওয়া হবে তাদের।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..