সিলেট ৬ই মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ | ২১শে রজব, ১৪৪২ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:০৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
Sharing is caring!
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ধর্মঘটের কবলে পড়ে এবার চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জে একশিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির নাম জহিরুল ইসলাম (২দিন)। সে উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ গ্রামের মইনুল ইসলামের ছেলে। সোমবার দুপুরে গনিগঞ্জ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এরআগে রোববার বড়লেখায় ধর্মঘটে শ্রমিকরা এম্বুলেন্স আটকে রাখায় সাত দিনের এক শিশু মারা যায়।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জে মারা যাওয়া শিশুর পরিবারের অভিযোগ, নিমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু জহিরুলকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আসতে চাইলে শ্রমিকদের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে চিকিৎসার অভাবে গ্রামেই মৃত্যু হয় শিশু জহিরুলের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মইনুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বেগম রোববার রাতে নিজ বাড়িতে পুত্রসন্তান প্রসব করেন। ঠাণ্ডাজনিত কারণে নবজাতক সোমবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবজাতকের বাবা মইনুল ইসলাম সন্তানকে নিয়ে গনিগঞ্জ বাজারে নিয়ে পল্লী চিকিৎসকের কাছে যান। পল্লী চিকিৎসক শিশুটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে শিশুর বাবা মইনুল ইসলাম বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে শ্রমিক নেতাদের কাছে গেলে তারা কঠোর ভাষায় জানান, কেউ মরে গেলেও সড়ক দিয়ে যাওয়া যাবে না। গাড়ি সংগ্রহ করে হাসপাতালে আসতে চাইলে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে রাখে এবং যেতে দেয়নি। এক পর্যায়ে দুপুর ১২টায় বাবার কোলেই নবজাতকের মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে মইনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,‘ কি দুষ ছিল আমার ছেলের। জন্মের পরপরই পৃথিবীর আলো-বাতাস পাওয়ার আগেই পরিবহন শ্রমিকদের ঘর্মঘটের কারণে সে মৃত্যুকেই বরণ করতে হয়েছে তার। ’
গনিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন জানান, আমরা সকাল থেকে শ্রমিকদের হাতে পায়ে ধরে বলেছি, কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথা শুনেনি। বাবার কোলে সন্তানের মৃত্যু আমরা কোনভাবেই মানতে পারছি না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদ বলেন,‘ পরিবহন শ্রমিকদের এ নৈরাজ্য কোনভাবেই মানা যায় না। সরকারের উচিত এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। না হয় একসময় জনগণ এসব ঘটনার বিচার করবে।
স্থানীয়রা আরও জানান, নিমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু জহিরুলকে সুনামগঞ্জ নিয়ে আসতে চাইছিল তার পরিবার। গণিগঞ্জ বাজারের পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন পেলেও ভয়ে আসতে চায়নি কোন চালক। সিএনজি ও অটোরিকশা পেলেও পরিবহন শ্রমিকদের বাধার কারণে সদর হাসপাতালে আসতে চায়নি কেউ। অসুস্থ শিশুটিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একাধিক গাড়ির চালককে অনুরোধ করলেও গাড়ি ভাঙা ও শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করার ভয়ে কেউ সাহস করেনি। এক পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করে শিশু জহিরুল ইসলাম।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন,‘ যানবাহন না পাওয়ার কারণে একটি অসুস্থ শিশুকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়নি, যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি সত্য হলে খুবই মর্মান্তিক। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
………………………..
Design and developed by best-bd