সিলেট-তামাবিল-জাফলং মহাসড়ক বর্ষার শুরুতেই দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০১৮

মিনহাজ উদ্দিন :: দীর্ঘদিন থেকে বছরজুড়ে দুর্ভোগ ভোগান্তি যেন নিত্যকার ঘটনা সিলেটের তামাবিল মহাসড়কে। জাফলং মোহাম্মদপুর, মামার দোকান, বল্লাঘাট অংশের নামে মাত্র সংস্কার কাজ করা হয় আবার মুহূর্তেই তা ভেঙে যায় অল্প সময়ে। সারা বছরই সিলেটের প্রকৃতিকন্যা জাফলং বেড়াতে পর্যটক দর্শনার্থীরা দুর্ভোগ,ভোগান্তির শিকার হন। বর্ষা মৌসুম হতে না হতেই ওই সড়কটিতে দুর্ভোগ-ভোগান্তির আগমনী বার্তা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি কদিনের বৃষ্টিপাতে কাদা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে পুরো মামার দোকান বাজার, বল্লাঘাট, মোহাম্মদপুর এলাকা। কাদা পানিতে সর্বত্র একাকার ওই সড়কটিতে যানবাহনের পাশাপাশি কাদা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে চরম দুর্ভোগে যাতায়াত করছেন পর্যটক, দর্শনার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। সরজমিন ঘুরে জানান যায়, জাফলংয়ে প্রতিদিন বেড়াতে আসেন কয়েক হাজার পর্যটক, দর্শনার্থী। বছর শেষে এ হিসাব কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যায়। বাস, ট্রাক, মাইক্রোতে করে এসব পর্যটক দর্শনার্থীরা জাফলং বেড়াতে আসেন। তাদের আগমনের সুবাদে জাফলংয়ে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক পর্যটকবাহী যানবাহনের আগমনও ঘটে। এসব দর্শনার্থী ও পর্যটকবাহী যানবাহনের পাশপাশি জাফলং পাথর কোয়ারি ও তামাবিল স্থলবন্দর থেকে বিভিন্ন ধরনের পাথর, বালিসহ নানা পণ্য নিয়ে আসা কয়েক হাজার ট্রাক, ট্রাক্টরও ওই সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করে থাকে। যাতায়াতের জন্য এই সড়কটিই একমাত্র অবলম্বন হওয়ায় থাকে যানযটের মতো যন্ত্রণাও নিত্যকার চিত্র। সংস্কার না হওয়ার কারণে সড়কটিতে বাধ্য হয়ে কাদা পানি, গর্ত আর হতাহতের আশঙ্কাসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সড়কটির ওপর দিয়ে চলাচল করছেন যানবাহন ও পথচারী।  এমতাবস্থায় হঠাৎ করে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে পথচারী, দর্শনার্থী হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর সদরের বাসিন্দা আনহার মিয়া। জাফলং বেড়াতে আসা এই পর্যটক জানান, জাফলং একটি দৃষ্টিনন্দন স্পট। এখানে মানুষ ভ্রমণে আসে তার মনের অসারতাকে দূরীকরণে। মনকে ভালো প্রাণচাঞ্চল্যময় করতে এসে শুধু যাতায়াত বিড়ম্বনায় পড়ে নানাবিধ দুর্ভোগ, যন্ত্রণার মুখোমুখি হচ্ছেন। আলম এশিয়া নামের একটি পরিবহনের একজন বাসচালক আবদুস সালাম জানান, আমরা বছরে কয়েকবার পর্যটক নিয়ে আসি, সড়ক সংস্কার না হওয়ার কারণে এখানে এসে প্রতিবারই যাতায়াত যন্ত্রণায় বিড়ম্বনার শিকার হই। আমি মনে করি এ দুর্ভোগের কারণে জাফলংয়ে পর্যটক উপস্থিতি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে এবং দ্রুত সংস্কার না হলে পর্যটক হ্রাস কেউ ঠেকাতে পারবে না। মামার বাজারের ফার্মাসিস্ট ব্যবসায়ী ডা. আওলাদ হোসেন। তিনি জানান, সড়কটি বেহাল দীর্ঘদিন থেকে। বিশেষ করে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের নলজুরী থেকে বল্লাঘাট পর্যন্ত শেষ ৫ কিলোমিটার সড়ক হাজার হাজার গর্ত, খনাখন্দ এবং যানবাহন ও মানুষজন চলাচলও অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। সংস্কারহীন এ সড়ক দিয়েই কাদা পানি মাড়িয়ে জাফলং ভ্রমণে আসা যানবাহনগুলো চলতে হচ্ছে জনদুর্ভোগ, ভোগান্তি দূরীকরণে তিনি দ্রুত সড়কটির বেহাল ৫ কিলোমিটার অংশ সংস্কার দাবি করেন। পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মিনহাজুর রহমান জানান, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের মোহাম্মদপুর-মামার দোকান ও বল্লাঘাট এলাকায় সড়কটির ভঙ্গুর, খানাখন্দ অংশটির সংস্কার না হওয়ায় জনমনে কিছুটা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তবে, সড়ক সংস্কারে ১৯০ কোটি টাকার মেঘা প্রকল্পও ইতিপূর্বে একনেকে পাস হয়েছে। টেন্ডারসহ প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করে অচিরেই হয়তো ওই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়ে যাবে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী নেতা জানান, উক্ত সড়ক বিনষ্টের নেপথ্যে রয়েছে এখানকার অদূরে পাহাড়ের ওপরে গড়ে ওঠা কয়েকটি অপরিকল্পিত স্টোন ক্রাশিং জোন। আমার মতে সড়ক সংস্কারের আগে ওই এলাকার আশপাশের গড়ে ওঠা এসব অপরিকল্পিতভাবে স্টোন ক্রাশিং জোন অন্যত্র স্থানান্তর অথবা উচ্ছেদ করে সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করা হোক। কেননা, এটা না করলে সড়কটির সংস্কার করার মাস খানের ভেতরেই আবার যেই লাউ সেই কদুতে রূপান্তর হবে সড়কটি। তাই পরিকল্পনানুসারে এ কাজ করা দরকার। অন্যথায় এ খাতে বিনিয়োগ করে সরকারি টাকার এ শ্রাদ্ধ করার কোনো দরকার নেই, আমি বিষয়টি সরকারের নজরে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে কথা হলে সরকারের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ জানান, আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। এ সড়ক সংস্কারে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ আগেও ছিল বর্তমানেও অব্যাহত আছে। অচিরেই সড়কটির সংস্কার কাজের শুভ সূচনা দেখতে পাবেন।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..