বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ : সিলেটজুড়ে নানা আয়োজন

প্রকাশিত: ৫:৩৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০১৮

বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ : সিলেটজুড়ে নানা আয়োজন

আবুল হোসেন :: স্বাগত বাংলা নববর্ষ। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে শুক্রবার ১৪২৪ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে শনিবার যুক্ত হলো নতুন বছর ১৪২৫।

জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করল বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতে দেশ। সারাদেশের ন্যায় সিলেটজুড়ে থাকে বর্ষবরণের নানা আয়োজন।

বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উপলক্ষ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। এ দেশের সহজ-সরল গ্রামবাসী আবহমানকাল ধরে বছরের শেষ দিনকে ‘চৈত্রসংক্রান্ত্রি’ হিসেবে পালন করে আসছে। এই দিনে গ্রামে গ্রামে মেলা হয়, নাগরদোলা বসে, পুতুলনাচ হয়, যাত্রাপালা হয়, অর্থাৎ উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর বিপুল আয়োজনে মেতে ওঠে সারা দেশের মানুষ। যেহেতু এটি বাংলা নববর্ষ, তাই বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য দিয়ে রাঙানো হয় এই উৎসব। খাজনা দিয়ে যেমন বছরের শেষ দিনে সরকারের কাছ থেকে দায়মুক্ত হয় মানুষ, তেমনি যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করে ব্যবসায়ীদের (দোকানিদের) কাছ থেকেও দায়মুক্তির দিন এটি। প্রতিটি ব্যবসায়ী তাই এই দিন ‘হালখাতা’ খুলে বসেন। অর্থাৎ তাঁরা বকেয়ার খাতাটি হালনাগাদ করে নেন। একে একে দেনাদারেরা আসেন, দেনা পরিশোধ করেন, দোকানিরা তাঁদের মিষ্টি পরিবেশন করেন, কোলাকুলি করেন। এভাবে একটি আনন্দঘন এবং উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে অতীতের সব দায়দেনা মিটিয়ে নতুন বছরের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের মানুষ।

১৯৬৭ সালে ছায়ানটের শিল্পীরা পয়লা বৈশাখে রমনার বটমূলে সমবেত হয়ে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ এই রবীন্দ্রসংগীতটি পরিবেশন করেন। সেই থেকে ঢাকায়, রমনার বটমূলে, নববর্ষ উদ্যাপনের প্রথা শুরু হয়, যা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে বড় শহরগুলোতে। যেহেতু এটি ঐতিহ্যের সমারোহ ঘটানোর দিন, তাই ধীরে ধীরে এই উৎসবে যুক্ত হয় পান্তা-ইলিশ, নানান রকমের ভর্তা, পিঠা-পায়েস।

নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ জাতির উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সিলেটেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।

বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারাদেশ। বর্ষবরণের এ উৎসব আমেজে মুখরিত হয় বাংলার চারদিক। সব কিছু উপেক্ষা করে বাঙালি মিলিত হয় তার সর্বজনীন অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। দেশের পথেÑঘাটে, মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকে কোটি মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য, আর উৎসব মুখরতার বিহ্বলতা।

বর্ষবরণে সরকারি অনুষ্ঠান ছাড়াও সিলেট জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজন। বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। এ জন্য বর্ষ বরণের উৎসবকে সামনে রেখে বাঙালীয়ানা সাজে সেজেছে নগরীর মার্কেট, বিপনী বিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নতুন জামা-কাপড় কিনতে ব্যস্ত থাকেন মানুষ। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য। একটি মার্কেটে বৈশাখী কাপড় কিনতে এসেছেন তাসলিমা বেগম সুন্নাহ এবং লাভলী আক্তার। তারা বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালীর একটি উৎসবের দিন। এ দিন পরিবার নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাব। অনেক আনন্দ করব। তাই নতুন জামা-কাপড় কিনতে এসেছি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..