২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তা তালিকায় ৪ মোবাইল নম্বর ৩০৬ বার!

প্রকাশিত: ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২০

২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তা তালিকায় ৪ মোবাইল নম্বর ৩০৬ বার!

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা সহায়তা খসড়া তালিকায় হবিগঞ্জের এক ইউপি চেয়ারম্যানের চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ১৬২ জনের নামের সঙ্গে। এছাড়া চেয়ারম্যানের এক স্বজনের নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ৯৯ জনের নামের বিপরীতে।

Manual7 Ad Code

অনেক স্থানে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম দেয়া হয়েছে তালিকায়। অনেক সম্পদশালীর নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আত্মীয়-স্বজন কারো নামই তালিকা থেকে তেমন বাদ পড়েনি।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, লাখাই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬ হাজার ৭২০টি পরিবার নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা করে সরকারি অর্থ সহায়তা পাবেন।

এর মধ্যে লাখাই ইউনিয়নে ১ হাজার ১৯৪ জন, মোড়াকরি ইউনিয়নে ১ হাজার ১১৩, মুড়িয়াউক ইউনিয়নে ১ হাজার ১৭৬, বামৈ ইউনিয়নে ১ হাজার ২৪৬, করাব ইউনিয়নে ১ হাজার ৬ ও বুল্লা ইউনিয়নে ৯৮৫ জন।

এর প্রেক্ষিতে প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে খসড়া তালিকা জমা দেন। প্রায় প্রতিটি তালিকায়ই মারাত্মক অসঙ্গতি ধরা পড়ে।

দেখা গেছে, একটি মোবাইল নম্বর একাধিক ব্যক্তির নামের পাশে, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি এবং অধিকতর সচ্ছল পরিবারও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এমন অসঙ্গতি ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নড়ে চড়ে বসে উপজেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী যাচাই বাছাই শুরু করে।

চেয়াম্যানের দেয়া তালিকায় পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মুড়িয়াউক ইউনিয়নের নগদ টাকা পাওয়ার তালিকায় ১ হাজার ১৭৬ জনের নাম রয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই মিয়ার নিকটাত্মীয় আনোয়ারের মোবাইল ০১৯৪৪৬০৫১৯৩ নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ৯৯ জনের নামের বিপরীতে।

চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই আক্তার মিয়ার ০১৭৪৪১৪৯২৩৪ নম্বর ৯৭ জনের এবং চাচা শাকিল হকের ০১৭৮৬৩৭৪৩৯১ নম্বর ৬৫ জনের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে।

চেয়ারম্যানের আরেক নিকটাত্মীয় নবীর মিয়ার ০১৭৬৬৩৮০২৮৪ নম্বর দেয়া হয়েছে ৪৫ জনের নামে। ১০/১২ জন করে নাম ব্যবহার করা হয়েছে অন্তত ৩০টি নম্বরে। ৩০/৩৫টি নম্বর একাধিক নামের সঙ্গে প্রদান করা হয়েছে।

Manual7 Ad Code

ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো হিন্দু পরিবারের বসবাস না থাকলেও তালিকার ৯৫৮, ৯৬৫ ও ৯৭৩ সিরিয়ালের তিনটি নাম হিন্দু ব্যক্তির।

আবার ওই ইউনিয়নের সম্পদশালী আক্কল আলীর ছেলে সাহাব উদ্দিনের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকার ১৬১ ও ১৬৩ নম্বরে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নাম দেয়া হয়েছে।

তালিকার ৯৫১, ৮৫৫, ৮৫৩, ৮৫২, ৮৫১ ও ৭৮৪ নম্বরের ছয়জন একই পরিবারের সদস্য।

Manual1 Ad Code

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুড়িয়াউ ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই যুগান্তরকে বলেন, আমরা মাত্র ৭৩০টি নাম দিয়েছি। এখানে ওয়ার্ড মেম্বাররাও দিয়েছেন। তালিকা তৈরি করতে হয়েছে পিআইও অফিসে গিয়ে। সেখানে কম্পিউটারে টিপলে এক নম্বর থেকে আরেক নম্বর উঠে যায়। এ কারণেই হয়তো একই নম্বর একাধিক ব্যক্তির নামের পাশে উঠেছে। এছাড়া তালিকা তৈরি করার জন্য সময়ও দেয়া হয়নি। যাদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার হয়েছে তারা কেউ আমার আত্মীয় নন। তারা সবাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের আত্মীয়। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ নম্বরগুলো তালিকায় তুলে দেয়া হয়েছে।

ভাইস চেয়ারম্যানের আত্মীয়দের নম্বর তার তালিকায় কীভাবে উঠেছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটিতো বলতে পারছি না। আমার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে কেউ তুলে দিয়েছেন।

লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মুশফিউল আলম আজাদ জানান, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নেই এমন ঘাপলা রয়েছে। চেয়ারম্যানরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের নাম এবং মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। অনেকেই আবার ভুয়া নাম দিয়ে নিজেদের আত্মীয়দের মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। শুরুতেই তাদের দেয়া তালিকায় ত্রুটি ধরা পড়েছে। ফলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে। আরও পরে ধরা পড়লে তাদের চেয়ারম্যান পদও হারাতে হতো। ভাগ্য ভালো যে প্রাথমিক পর্যায়েই ধরা পড়েছে। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল চেয়ারম্যানদের তালিকা যেন যাচাই বাছাই করা হয়। এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ তালিকা যাচাই বাছাই করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসি কান্ত হাজং জানান, এটি প্রাথমিক তালিকা। এখানে চেয়ারম্যানরা ত্রুটি বিচ্যুতি করেছেন। এগুলো হতে পারে বলে আগেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল চেয়ারম্যানদের তালিকা যেন যাচাই বাছাই করা হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রাথমিক পর্যায়েই তালিকায় ত্রুটি ধরা পড়ে। এখন যাচাই বাছাই করার জন্য ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাঠকর্মী, উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা এ দায়িত্ব পালন করছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা যাচাই বাছাই করছেন। যারা সহায়তা পাওয়ার যোগ্য কেবল তাদেরই এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আজই শনিবার তারা যাচাই বাছাইকৃত তালিকা হস্তান্তর করবেন বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, এটি খসড়া তালিকা। এ তালিকা যাচাই বাছাই চলছে। এরপর তা চূড়ান্ত করা হবে। তালিকায় ঘাপলা থাকলে কাউকে টাকা দেয়া হবে না। শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা যাচাই বাছাই করছেন।

Manual2 Ad Code

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর ও শ্রমজীবীদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবার আড়াই হাজার টাকা করে সহায়তা পাবেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..