কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরেও সক্রিয় প্রতারকচক্র

প্রকাশিত: ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২০

কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরেও সক্রিয় প্রতারকচক্র

Manual7 Ad Code

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি প্রতারকচক্র বন্দিদের স্বজনদের কাছ থেকে নানা উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। বন্দি অসুস্থ, মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে, মামলা হবে, অন্য কারাগারে চালান করে দেয়া হবে- মোবাইলে স্বজনদের কাছে এরকম তথ্য জানিয়ে ভয় দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

শনিবার এমন একটি প্রতারক চক্রের এক নারী সদস্যকে আটক করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

প্রতারক নারীর নাম রানু আক্তার (৩৫)। পরে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। প্রতারণার শিকার নাসিমা আক্তার এ ঘটনায় রানুসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

নাসিমা আক্তার জানান, তার বাড়ি সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায়। জমিজমা সংক্রান্ত একটি মামলায় তার ছোট ভাই হুমায়ুন কবিরকে কয়েকদিন আগে গ্রেফতার করে সাভার থানা পুলিশ। এরপর থেকে হুমায়ুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

গত বৃহস্পতিবার ছোট ভাইকে দেখতে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। এ সময় এক মহিলা তার কাছে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মোবাইল দিয়ে একটি কল করার অনুরোধ করেন।

ওই মহিলা জানান, তার স্বামী কারাগারে বন্দি। তাকে দেখতে এসেছেন। কিন্তু মোবাইলের টাকা শেষ হয়ে গেছে। বাসায় জরুরি একটি ফোন করা দরকার। এ কথা বলে নাসিমা আক্তারের মোবাইল নিয়ে কোথাও ফোন দেন। এরপর তিনি সাভারে ফিরে যান।

নাসিমা আক্তার আরও জানান, শুক্রবার কারাগারের লোক পরিচয় দিয়ে তার মোবাইলে ফোন করে একব্যক্তি।

এ সময় ওই ব্যক্তি বলেন, আপনার ভাই কারাগারের ভেতরে অন্য আসামিদের সঙ্গে মারামারি করেছে। তার বিরুদ্ধে নতুন করে একটি মামলা হবে। পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে। পুলিশ আসলে হুমায়ুনকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে। যে মামলা দেয়া হচ্ছে এতে ৭ বছরেও সে জামিন পাবে না। এমনকি আপনার ভাইকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বান্দরবন কারাগারে চালান করে দেয়া হবে।

ওই ব্যক্তি নাসিমা আক্তারকে আরও বলেন, এ সব থেকে ভাইকে যদি রক্ষা করতে চান দ্রুত বিকাশ করে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। এত টাকা পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করেন নাসিমা আক্তার। অনেক কথাবার্তার পর ভাইকে এ বিপদ থেকে রক্ষায় নাসিমা আক্তার ওই প্রতারকের দেয়া বিকাশ নাম্বারে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।

শনিবার সাভার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে ভাইকে দেখতে আসেন নাসিমা। ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জানতে পারেন তার সঙ্গে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। তিনি প্রতারিত হয়েছেন। সাক্ষাৎ শেষে কারা ক্যান্টিনের সামনে ওই মহিলাকে (যিনি নাসিমার মোবাইল দিয়ে কল করেছিল) দেখতে পান নাসিমা।

এ সময় তাকে ধরে ফেলেন তিনি। হৈচৈ শুনে কারা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে রানু আক্তার নামের ওই নারীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

Manual2 Ad Code

পুলিশ হেফাজতে থাকা রানু আক্তার প্রতারণার কথা স্বীকার করে জানান, তার কাজ হচ্ছে কৌশলে বন্দির সঙ্গে সাক্ষাতে আসা স্বজনদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা। টার্গেট করা স্বজনদের কাছ থেকে মুঠোফোন দিয়ে পরিবারের কথা বলে তিনি ফোন করে চক্রের অন্য সদস্যের কাছে।

এতে করে সহজেই স্বজনের মোবাইল নম্বরটি তাদের হাতে চলে আসে। পরে চক্রের সদস্যরা বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে স্বজনদের বাধ্য করেন বিকাশে টাকা পাঠাতে। ১২টি মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে পারলে তিনি ৫ হাজার টাকা কমিশন পান।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার শিল্পী আক্তার বলেন, কারারক্ষীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। আমরা আটক নারীকে অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রতারণার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

শুধু নাসিমা আক্তার নন, এ রকম প্রতারণার ঘটনা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি স্বজনদের সঙ্গে প্রায়ই ঘটছে বলে জানা গেছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই শাহ আলম জানান, ১০-১২ দিন আগে একই কায়দায় তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র।

Manual8 Ad Code

তিনি আরও জানান, মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় তার আত্মীয় সজিব কারাবন্দি রয়েছেন। কয়েকদিন পূর্বে সজিবের বড় ভাই সোহেলের কাছে মোবাইলে একব্যক্তি কারারক্ষী পরিচয় দিয়ে জানান, সজিব কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

জরুরি ভিত্তিতে ৩০ হাজার টাকা না পাঠালে তাকে বাঁচানো যাবে না। পরে সোহেল বিকাশের মাধ্যমে তার কাছে ১৫ হাজার টাকা পাঠান।

বিষয়টি শোনার পর এসআই শাহ আলম সোহেলকে নিয়ে কারাগারের সামনে গিয়ে ওই নম্বর (যে নম্বর দিয়ে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছিল) ফোন করে নিজের পরিচয় দিয়ে প্রধান ফটকের সামনে আসতে বলেন। এরপর ওই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

Manual2 Ad Code

এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম যুগান্তরকে বলেন, এরকম অভিযোগ মাঝে মধ্যে আমরাও পাই। এমন অভিযোগে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় এ ঘটনায় স্বজনদের সচেতন হতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে সরকারিভাবে তার চিকিৎসা করা হয়, এখানে টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। একইভাবে কেউ যদি মারামারি করে তার বিরুদ্ধে কারা আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে- এখানেও টাকা নেয়ার কথা অবান্তর। কিন্তু একটি প্রতারকচক্র বন্দির স্বজনদের মুঠোফোন নম্বরে এ সব বলে ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়।

জেলার আরও বলেন, নতুন কোনো বন্দি এলে আমরা প্রথমেই তাকে এ সব বিষয়ে অবহিত করি। এমনকি প্রতিনিয়ত মাইকের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের প্রতারক থেকে সাবধান থাকতে বলি।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..