৩৭তম বিসিএসে মেয়েদের শীর্ষে ডা. হুমায়রা

প্রকাশিত: ৬:৫০ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০১৯

৩৭তম বিসিএসে মেয়েদের শীর্ষে ডা. হুমায়রা

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: ৩৭তম বিসিএসের ফলাফলে মেয়েদের মধ্যে মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন ডা. হুমায়রা সুলতানা রশনি। তার পদের নাম সহকারী কমিশনার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন)। 

তার বাবা আলহাজ্ব কাজী আবদুল হান্নান তিতাস গ্যাসের সাবেক কর্মকর্তা। মা আলহাজ্জ্ব রশিদা বেগম গৃহিনী।

শিক্ষা জীবনের সব ক্ষেত্রে মেধার ছাপ রেখেছেন তিনি। পড়াশোনা করেছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নুন স্কুল ও কলেজে। আশৈশব চিকিৎসক হওয়ার প্রবল ইচ্ছা থেকে ভর্তি হন রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে। তিনি ঢাকা ডেন্টালের ডি-৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার প্রত্যয় থেকে তিনি ডাক্তারি পেশাকে বেছে নিয়েছেন। এরপর বিসিএসে অংশ নিয়ে রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর।

চমৎকার ফলাফল নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. হুমায়রা মেডিভয়েসকে বলেন, ‘খুবই ভালো লেগেছে, এ রকম ফলাফলের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম। গভীর মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করেছি। মূলত আমার ইচ্ছা ছিল, যেহেতু আমার ডেন্টার সার্জারিতে পড়াশোনা, দেশের বাইরে যাবো। পরবর্তীতে আব্বু বললো, বিসিএসের জন্য একবার চেষ্টা করতে। তারপর বিসিএসের জন্য ট্রাই করা। দেখা গেলো একটার পর একটা…প্রিলি হয়ে গেলো, রিটেন হলো, ভাইভা হলো—এভাবে এগিয়ে চলা’।

এ রকম ফলাফলের বিষয়ে প্রত্যাশী ছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রেজাল্টের আগে এত বড় প্রত্যাশা করা যায় না। কারণ বিসিএসে ভাইভা বড় একটা ফ্যাক্টর। আমার লিখিত পরীক্ষা সন্তোষজনক হয়েছিল। ভাইভাও ভালো হয়েছে, তবে ভাইভার নম্বর অনুমান করা দুরুহ।  স্যার কিভাবে চাচ্ছেন, সেভাবে উত্তরগুলো করা, বেশ কঠিন বিষয়। ’

একজন চিকিৎসক হয়েও স্বাস্থ্য ক্যাডারে না গিয়ে প্রশাসনে কেন গেলেন—জানতে চাইলে ডা. হুমায়রা বলেন, ‘আমি মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে চাই। তাদের অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা। হেলথ সেক্টরে থেকে এভাবে কাজ করা সম্ভব না।  আমি চাচ্ছিলাম, একটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেতে, যাতে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করতে পারি। যেহেতে প্রশাসন এমন একটি জায়গা, যেখানে মাঠ পর্যায় থেকে কাজটা শুরু করবো।  সেখান থেকে যখন আমি উপরের দিকে যাবে, তখন নীতিনির্ধারণ করতে পারবো। ’

চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা চালিয়ে যাবেন উল্লেখ করে শরীয়তপুরের মেয়ে হুমায়রা বলেন, ‘মেয়েরা অনেক বিষয়ে সচেতন নন, অর্থাৎ সরকার নারীদের যেসব সুযোগ দিয়েছে, সে সম্বন্ধে অনেকেই পুরোপুরি জানেন না। এগুলো মাঠ পর্যায় থেকে তাদের জানানো এবং উৎসাহিত করার একটা বিষয় থাকে।’

তিনি আরও বলেন, পড়াশোনা করা অনেক মেয়েকে একটা পর্যায়ে আর নানা কারণে থেমে যেতে হয়, তাদের জন্য কিছু করা। বা যারা পড়াশোনা করতে চায়, কিন্তু কোনো কারণে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেসব জায়গায় কাজ করা তার লক্ষ্য।

একজন চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি সরকারের প্রশাসনিক কাজ—এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করবেন কিভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমন্বয় করতে পারবো। কারণ যেহেতু আমি একজন চিকিৎসক সেহেতু স্বাস্থ্য খাতের কী কী সমস্যা আছে, সেগুলো আমার জানা আছে। এক্ষেত্রে কী কী শূন্যতা আছে, দেশের মানুষকে কিভাবে সেবা প্রদান করতে পারি, সে ব্যাপারে নীতিনির্ধারণ করতে পারবো।’

ডাক্তার হুমায়রা বলেন, ‘যদি স্বাস্থ্য ক্যাডারে যেতাম, ডাক্তার হিসেবে দেশের মানুষের সেবা করতে পারতাম, কিন্তু নীতিনির্ধারণ করতে পারতাম না। প্রশাসনে আসাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যদি কখনো আমার পদায়ন হয়, তখন আমি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কাজ করতে পারবো, কোথায় কোথায় শূন্যতা আছে, সেগুলে আমি আরও ভালোভাবে জানতে পারবো।’

নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিষয়েও ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

নবীন ক্যাডার হিসেবে নিজের অবস্থান থেকে নারীদের জন্য কি কি কাজ করতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার হুমায়রা বলেন, ‘নারীদের জন্য প্রথমে শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু কাজ করতে চাই।  মেয়েদেরকে তাদের অধিকার সম্পর্কে জানানো, তারা কিভাবে তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে।  পড়াশোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে নারীরা, তারা সেগুলো জানে না, সুবিধাবঞ্চিত-অবহেলিত মেয়েরা তাদের অনেক সমস্যার কথা প্রকাশও করতে পারে না। আমি মেয়ে হিসেবে তাদের কাছাকাছি যেতে পারবো জানতে পারবো, যা একটি ছেলের পক্ষে সম্ভব না।’

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..