কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি মানুষ, নেই সহায়তা

প্রকাশিত: ৫:৫৮ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৮

কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি মানুষ, নেই সহায়তা

আলী হোসেন, মৌলভীবাজার :: গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল পতনঊষার, মুন্সীবাজার ও শমশেরনর ইউয়িনের একাংশ প্লাবিত হয়ে পড়েছে। প্লাবনের ফলে পতনঊষারে ২০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কেওলার হাওরে তলিয়ে যাওয়া একটি বাড়ির অসহায় পরিবার সদস্যরা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। লাঘাটা নদীতে গাছগাছালি, ঝোপজঙ্গল ও বাঁশের খাঁটি থাকার কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ১২ হেক্টর পরিমাণ সবজি ক্ষেত ও আউশের বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নাঞ্চল এলাকার মানুষ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভারি বর্ষণে লাউয়াছড়া, জপলাছড়া, সুনছড়া ও লাঘাটা নদী উপচে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আদমপুর, আলীনগর, শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকার কিছু বোরো ফসল ও প্রায় ১২ হেক্টরের সবজি ক্ষেত ও বীজতলা নিমজ্জিত হয়। উজানে আদমপুর, আলীনগর এলাকার পানি দ্রুত নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলের শমশেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের কেছুলুটি, সতিঝিরগ্রাম, মরাজানের পার, রাধানগর, ধূপাটিলা, হালাবাদি, মাইজগাও, পতনউষার, শ্রীরামপুর, রূপষপুর, বনবিষ্ণপুর, রামেশ্বরপুর, নোয়াগাঁও, গোপীনগর গ্রামের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। প্লাবনে পতনঊষার ইউনিয়নের কেওলার হাওর ও লাঘাটানদীর পার্শ্ববর্তী ২০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কেওলার হাওর এলাকার একই বাড়িতে চারটি দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের লোকজন অসহায় জীবনযাপন করছেন। এসব এলাকার সবজি ক্ষেত ও আউশের বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। তবে সরকারি কিংবা স্থানীয় উদ্যোগে এসব পরিবার সদস্যদের কোন ধরণের সহায়তা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। কেওলার হাওরে প্লাবিত হওয়া বাড়ির দরিদ্র মহিলা আয়াতুন বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব ভূমিহীন লোক। কোনদিকে জমি না থাকায় আমরা ভূমিহীনের এই জমিতে বাড়ি তৈরি করে দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। বন্যার পানি বাড়ির অর্ধেক ডুবে গেছে। এখন থাকা-খাওয়ার জায়গা নেই। বৃহস্পতিবার রাতে ঘরের খাঁটের উপর বসে ও শুক্রবার সকাল থেকে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। কেউ আমরার খবর নেয় না। কোথাও আশ্রয় পাই না। অসুস্থ্য বৃদ্ধ মহিলাকে নিয়েও সমস্যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে চারটি পরিবারের ১৭ জন সদস্য থাকলেও কোন ধরনের সহায়তা পাইনি।’ এদিকে গোটা উপজেলার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ লাঘাটা নদী দিয়ে মনু নদীতে পড়লেও পতনউষার ও রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়ন অংশে লাঘাটা নদীর দু’পাশে হিজল, তমাল, জারুল, আকাশিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছগাছালিতে ভরপুর হয়ে পড়ছে। তাছাড়া লাঘাটা নদীর গোপীনগর এলাকায় একটি অসাধু চক্র দু’টি বাঁশের খাটি স্থাপন করেছে। ফলে পানি নিষ্কাশন মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক মোজাহিদ আলী, ফয়জুর রহমান মমরো ও চান মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও ঢলে এখানে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাছাড়া লাঘাটা নদীর একপাশে বাঁধ থাকলেও অন্যপাশে কোন বাঁধ না থাকায় একপাশে সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে পড়ছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য গত বছরে ইউএনও সহ বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও এ ব্যাপারে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে প্লাবন এলাকার কৃষক সাধারণকে ক্ষতির পাশাপাশি চরম দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে। ’ কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘বাঁশের খাঁটি অপসারনে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাছাড়া পানিবন্দি পরিবারকে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

May 2018
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..