সিলেট ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
জাহেদ আহমদ : মাইমুনা ইসলাম। নগরীর শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে লেখাপড়া এবং খন্ডকালীন চাকুরীর সুবাধে প্রতিদিনই বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার এলাকা দিয়ে একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। যাতায়াতে প্রতিদিনই এক থেকে দেড়ঘন্টা সময় কাটাতে হয় রিক্সায় বসেই। প্রতিনিয়ত যানজটে সময় নষ্ট হওয়ার ভয়টা এমনভাবে চেপে বসেছে বাসা থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে কলেজে যাওয়া আসা করতে একঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হতে হয়। অনেক সময় যানজটের ভয়ে হেঁটেই কলেজ কিংবা কর্মস্থলে যান তিনি।
শুধু মাইমুনা ইসলামই নন, যানজটে প্রতিনিয়ত এভাবেই নাকাল হচ্ছে সিলেটের কর্মজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। আর এ সমস্যা নিরসনে যেনো কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ যানজটের কথা স্বীকার করলেও তা নিরসনে কোনো সমন্বিত পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেননি।
সিলেট নগরীতে যানজট সমস্যা নতুন বিষয় নয়, তবে এ সমস্যা দিন দিন অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট এখন পরিণত হচ্ছে যানজটের নগরীতে। যানজট নিরসনে বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নিলেও কোনো উদ্যোগই যেন কাজে আসছে না। এতে করে ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহনে সময় কাটাতে হয় যাত্রীদের। চরম বিপাকে পড়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করতে হয় শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, শ্রমজীবী ও পেশাজীবীদের। এর ফলে প্রতিদিন শ্রমঘন্টার একটি বিশাল অংশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক খাত। যানজট সমস্যার মূলে দেখা গেছে, নগরজুড়ে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা, গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড এবং ফুটপাতসহ রাস্তার অধিকাংশ হকারদের দখলে চলে যাওয়া। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ওয়ানওয়ে রোড হওয়া সত্ত্বেও বিপণিবিতান, শপিংমল, ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোর পর্যাপ্ত পার্কিং না থাকায় যানজটের দীর্ঘলাইন লেগেই থাকে। নগরীর অনেক পয়েন্টে পর্যাপ্ত ট্রাফিক সদস্য না থাকার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার পয়েন্টে যানজট অন্যরকম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। উভয় দিক থেকে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল এসে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। অনেক সময় মোটরসাইকেলগুলো ফুটপাত এবং রাস্তার পাশে ড্রেইনের উপর দিয়ে চলতে দেখা যায়। এতে করে অসহনীয় যানজটসহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় পথচারীদের। এ অবস্থায় হেঁটে যাওয়ারও উপায় থাকে না। যানজট নিরসনে কার্যকরী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ- এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী নগরবাসীর। এ অবস্থায় কার্যকরী প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করলে যানজটের কবলে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে গোটা নগরী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট নিরসনে একটি সুন্দর পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি পার্কিং ব্যবস্থার সমাধান এবং ফুটপাতসহ রাস্তায় দখল বাণিজ্য না কমালে যানজটের মাত্রা আরো অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যানজট সমস্যা নগরবাসীর জন্য একটি মারাত্মক ভোগান্তিকর বিষয়। কিছু রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সড়কে এবং পয়েন্টে অবৈধ স্ট্যান্ড, হকারদের বসিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একমুখি সড়কে উভয় দিক থেকে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু আইনের প্রয়োগ দরকার। যানজট সমস্যা নিরসনে দক্ষ ট্রাফিক পুলিশের অভাব রয়েছে। ট্রাফিকে যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই যানবাহনের বৈধ-অবৈধ কাগজপত্র দেখার নামে ঘুস বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকেন। তাই আইনের ধারাগুলো বাস্তবায়ন হলে শুধু যানজট নয় নগরীর অনেক সমস্যাই সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বলেন, বেশ কিছু দিন থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে সংস্কার কাজ চলছে। এজন্য সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। তবে সংস্কার কাজ শেষ হলে অনেকটাই কমে আসবে যানজট সমস্যা। উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আরো বলেন, ট্রাফিকে জনবল সংকট রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেও ট্রাফিক পুলিশ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সকল পয়েন্ট বা সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই সে সকল স্থানে যানজট সৃষ্টি হলে অন্য স্থানের দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যরা গিয়ে কাজ করেন। প্রতি পয়েন্টে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ জন ট্রাফিক পুলিশ প্রয়োজন। অথচ জনবল সংকট থাকায় দু একজন দিয়ে যানজট নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। ট্রাফিকে জনবল নিয়োগ দেয়া হলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রির সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, নগরীর বিপনী বিতান বা মার্কেটগুলোর সবগুলোতেই মোটামুটি পার্কিং ব্যবস্থা ভালো আছে। এ গুলোতে পার্কিং কোনো সমস্য নয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ফুটপাত এবং রাস্তার উপর থেকে হকার উচ্ছেদ করতে হবে। ফুটপাত এবং রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাই এখন হকারদের দখলে চলে গেছে। এ অবস্থায় পথচারীরা ফুটপাতে হাটার সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করছেন। এতে যানবাহনে ধীরগতিসহ নানা সমস্যায় পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। যানজটের কারণে সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে না পারায় প্রতিদিন মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক খাত।
সিলেট সিটি করপোরশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, যানজট নিরসনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সবসময়ই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। মেয়র বলেন, আগামী ২১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেট আসবেন। সিলেটের যানজট সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে পরিকল্পিত পদক্ষেপ এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd