‘পুলিশ মার্কেট’ সিলেটের ফুটপাত : প্রতিদিন আয় ৩ লাখ টাকা!

প্রকাশিত: ৮:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেট নগরীতে এভাবেই রাস্তা দখল করে চলছে অবৈধ বাজার।
সিলেট নগরীর ‘পুলিশ মার্কেট’ নিয়ে নাগরিকদের ক্ষোভ এবং অভিযোগের শেষ নেই। এর মাঝে পুলিশ মার্কেট নিয়ে রয়েছেও রসালো কাহিনী। এই পুলিশ মার্কেট নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন বহিরাগতরাও। অনেকেই জানতে চান পুলিশ মার্কেট আবার কি? উত্তরটা হচ্ছে, পুলিশ মার্কেট হলো সিলেট নগরীর ফুটপাত দখল করে ভাসমান ব্যবসায়ীদের বাজার। জনশ্রুতি রয়েছে এই বাজার থেকে পুলিশ প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। এমন কোনো জিনিষ নেই যা পুলিশ মার্কেটে পাওয়া যায়না। ফলের দোকান, চটপটি, পান, চা, মেয়েদের প্রসাধনি সামগ্রী, শিশুদের খেলনা, জুতা, কাপড়, এমনকি মাছ, সুটকির হাট বসে প্রতিদিন নগর ভবনসহ নগরীর অন্যান্য স্থানে। পর্ণ ক্যাসেট, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটও এর বাইরে নয়। পুলিশের নাকের ঢগায় চলছে এসব অবৈধ ব্যবসা। এখানে ভাসমান দোকানীদের ক্রয়-বিক্রয়ও বেশ জমজমাট।
সিলেট নগরীর সব ফুটপাতই ভাসমান দোকানীরা দখল করে নিয়েছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার গেইটের সামনে থেকে শুরু করে প্রতিটি স্কুল-কলেজের, মসজিদ-মন্দির, সরকারী অফিস-আদালত, ডিসি, এসপির বাসভবন, সিটি কর্পোরেশন, সার্কিট হাউসের সামনে, আম্বরখানা বিমানবন্দর রোড, শাহী ঈদগাহ রোড, চৌহাট্টা, মেডিক্যাল রোড, রিকাবীবাজার, লামাবাজার, শেখঘাট, তালতলা রোড, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, বন্দর বাজার, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, সোবহানীঘাট টু হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বর পর্যন্ত রোড, দক্ষিন সুরমার বাস ষ্ট্যান্ড, রেল ষ্টেশন রোড, বঙ্গবীর রোডসহ এমন কোনো রাস্তা বা পয়েন্ট নেই যেখানে ভাসমান দোকান নেই। এসব দোকান ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
যানবাহন চলাচলের জায়গা কমে যাওয়ায় এসব রাস্তায় সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। ফুটপাতে এসব অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ভার্সিটির শিক্ষার্থীসহ পথচারিদেরও। ফুটপাতের দোকান থেকে ভেজাল জিনিষপত্র ক্রয় করে জনসাধারণ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। এই ভাসমান দোকানগুলোর জন্য স্থায়ী দোকানগুলোর ব্যবসা লাঠে উঠেছে।
ফুটপাতে ব্যবসা করার জন্য এসব দোকানের মালিকদের প্রতিদিন পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা ঠিক মতো না দিলে তাদের লাঠি পেটা করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ধরণের বহু ঘটনা ঘটেছে বলে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে। সিলেট নগরীর স্থায়ী বাসিন্দারাও এ ধরণের বহু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন।
সূত্র জানায়, “নগরীতে প্রতিদিন একেকটি দোকান থেকে ৫০ থেকে ১শ টাকা, কোনো কোনো দোকান থেকে আবার ১৫০ থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত পুলিশ চাঁদা উত্তোলন করে। পুলিশকে তারা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ফুটপাতে ব্যবসা করে আসছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুটপাতের ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা জানান, “পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার কনেস্টেবল ও তাদের নির্ধারিত লোক চাঁদা আদায় করে। এছাড়া তাদের নামে-বেনামে অনেক লোক চাঁদা উত্তোলনের জন্য রয়েছে। তারা সারা নগরীর ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায় করে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করার শর্তে পুলিশের এক কনেস্টেবল সুরমা মেইল ডটকম-কে জানান, “রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ডিসি, এসপি, ওসিসহ পুলিশের বড় সাহেব পর্যন্ত এই চাঁদার ভাগ পান।”
জনৈক ফুটপাত ব্যবসায়ী জানান, “আমরা গরীব মানুষ। অল্প টাকার ব্যবসা আমাদের। প্রতিদিন পুলিশকে পঞ্চাশ থেকে একশ টাকা দিলে রাস্তায় সুন্দর মতো ব্যবসা করা যায়। আমাদের সরকার যদি একটা নির্দিষ্ট জায়গা দেয়, তাহলে আমারা পুলিশের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে পারি। জনগণের সমস্যা সমাধানে ফুটপাতও যানজট মুক্ত থাকবে।”

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2017
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..