দেশ ও দেশের বাইরে জিহাদ করতে প্রস্তুত ছিলেন নাবিলা

প্রকাশিত: ৪:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২১

দেশ ও দেশের বাইরে জিহাদ করতে প্রস্তুত ছিলেন নাবিলা

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : দেশে এই প্রথম নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের একজন নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)। তার নাম জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিটিটিসি।

সিটিটিসি বলছে, এর আগে আর কোনো নারী জঙ্গি গ্রেফতার হননি। নাবিলা প্রথম প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গি। অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নারী সদস্য গ্রেফতার হলেও নাবিলার মতো প্রশিক্ষিত ছিলেন না। আনসার আল ইসলামের হয়ে মিডিয়া শাখা অর্থাৎ জঙ্গিবাদের প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব পালন করতেন নাবিলা। সামরিক শাখার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তিনি দেশ ও দেশের বাইরে যেকোনো সময় জিহাদ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

রোববার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সিটিটিসি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘নাবিলা ২০২০ সালের প্রথম দিকে নাম-পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। একসময় ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পায়। তখন তিনি এই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও ও অডিও আর্টিকেল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে এবং তাদের মতাদর্শকে লালন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার ‘তিতুমীর মিডিয়া’র পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ওই পেজের অ্যাডমিন উগ্রবাদী জিহাদি কনটেন্ট সংবলিত আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের লিংক তাকে পাঠায়। এরপর ওই নারী আনসার আল ইসলামের সব অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ও তাদের উগ্রবাদী মতাদর্শ কঠোরভাবে লালন করে। তাদের মতাদর্শ সবার সঙ্গে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনলাইন মিডিয়া প্লাটফর্ম বেছে নেয় নাবিলা। এরই ধারাবাহিকতায় সে ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও ‘Chirpwire’ নামের অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন ছদ্মনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলে।

Manual5 Ad Code

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জঙ্গিবাদী প্রচারণার জন্য দুটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, একটি ‘Chirpwire’ ও চারটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায় নাবিলার। সে ফেসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট দিয়ে ব্যাপকহারে আনসার আল ইসলামের উগ্রবাদী সহিংস মতাদর্শ প্রচার, বিভিন্ন উগ্রবাদী প্রচারণাকারী আইডির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং নানা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতো। নাবিলা আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে টেলিগ্রাম মাধ্যম ব্যবহার করতো। টেলিগ্রাম ব্যবহার করে চারটি অ্যাকাউন্ট এবং সেই টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৫টির বেশি চ্যানেল ব্যবহার করতো জঙ্গি প্রচারণায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব চ্যানেলে নাবিলা আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল শেয়ার করতো। তার নিজের সবগুলো টেলিগ্রাম চ্যানেল মিলে আনুমানিক ২৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার আছে, যারা নিয়মিত তার চ্যানেলগুলো অনুসরণ করে। গ্রেফতার নাবিলা তার টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে ‘জিহাদ কেন প্রয়োজন’, Kitabul Jihad, ‘একাকী শিকারি লন উলফ’, ‘স্নিপার সেলগুলোতে গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ ও প্রতিরোধের উপায়’, ‘নীরবে হত্যার কৌশল’, ‘পুলিশ শরীয়তের শত্রু’, Lone_wolf-balakot-media-hq’, ‘আল আনসার ম্যাগাজিন ইস্যু’, ‘জিহাদের সাধারণ দিক নির্দেশনা’, ‘তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা’ ছাড়া আরও অসংখ্য উগ্রবাদী সহিংস জিহাদি প্রচারণার বই বিভিন্ন সময় আপলোড করতো।’

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, নাবিলা নিজে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিসিয়াল ও আন-অফিসিয়াল চ্যানেলে যুক্ত ছিল। সেই চ্যানেলে আইডি ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা এবং বিভিন্ন হামলায় কৌশলগত বিষয়ে ভিডিও এবং ফাইল শেয়ার করতেন। এই নারী আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ‘Chirpwire’-এ অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা পেয়ে সেখানেও অ্যাকাউন্ট খুলে উগ্রবাদী প্রচারণা চালাতো। জিহাদের ময়দানে অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নাবিলা। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে তার বিয়ের কথাবার্তা চললে সে ছেলেপক্ষকে জানায়, জিহাদের ময়দানে ডাক এলে সে সামনের সারিতে থাকবে। এমনকি শহীদি মৃত্যু এলেও পিছু হটবে না এবং ছেলে (পাত্র) এরূপ মতাদর্শের না হলে সে বিয়ে করবে না।’

Manual8 Ad Code

এর আগে আনসার আল ইসলামের কোনো নারী সদস্য গ্রেফতার হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আনসার আল ইসলামের কোনো নারী সদস্য গ্রেফতার হওয়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই। নিষিদ্ধ সংগঠনটির এই প্রথম কোনো নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি। আনসার আল ইসলামের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।’

Manual5 Ad Code

গ্রেফতার এই নারী ছাড়া আনসার আল ইসলামের আর কোনো নারী সদস্যের সন্ধান পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সে আনসার আল ইসলামের যে গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল সেই গ্রুপের লোকজনের নাম আমরা জানার চেষ্টা করছি। এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না।’

মেয়ের নিষিদ্ধ সংগঠনে জড়িয়ে পড়া নিয়ে গ্রেফতার নাবিলার পরিবারের ভূমিকা কী ছিল, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পরিবার চেষ্টা করেছিল তাকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে। কিন্তু পারেনি। পরিবারের অমতেই সে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে বেরিয়ে পড়ে।’

Manual6 Ad Code

‘যেকোনো জায়গায়, যেকোনো দেশে জিহাদ করার প্রস্তুতি ছিল নাবিলার’- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন তথ্যও জানান সিটিটিসিপ্রধান।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..