সিলেট ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৪৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০১৯
এনামুল হাসান, জকিগঞ্জ :: জকিগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শুক্রবার গভীর রাতে দুই পক্ষের মারামারিতে আবু বক্কর নামের এক যুবক শশুড় বাড়ীতে খুন হয়েছেন। মারামারিতে আহত হন নারী পুরুষসহ অন্তত ৬ জন। এ ঘটনায় শনিবার সালেহা নামের এক মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
জানা যায়, উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের গণিপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে নিকন আহমদ (৪৫) ও তার চাচাতো ভাই প্রতিবন্ধী জাকির আহমদ (৪০) এর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় সালিশরা সমাধান করতে বার বার উদ্যোগ নিলেও নিকন তাতে সাড়া দেননি। শুক্রবার বিকেলের দিকে নিকন জোর করে গ্রতিবন্ধী জাকির আহমদের অংশ থেকে গাছ কাটতে শুরু করেন। তাতে বাঁধা দেন নিকনের বাবা আব্দুর রশিদ ও বোন ছয়নুল বেগম। কিন্তু নিকন তার বাবা ও বোনের নিষেধ বাধাকে উপেক্ষা করে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গাছ কেটে নেন। এ নিয়ে প্রতিবন্ধী জাকিরের স্ত্রী জাসমিন বেগম বাদী হয়ে নিকন ও তার স্ত্রী সালেহা বেগম (৩৫)সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
থানায় অভিযোগে খবর পেয়ে নিকন সন্ধ্যা রাত থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। কয়েক দফায় জাকিরের বসতঘরে পাথর ছুড়েন। এক পর্যায়ে রাত ১ টার দিকে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। নিকন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে দা ও ডেগার দিয়ে হামলা শুরু করেন। এতে জাকিরের পক্ষের লোকজনকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন নিকনের বোন ছয়নুল বেগম (২৫), গণিপুর গ্রামের খসরু উদ্দিনের জামাতা সিলেট ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর (৩৫), গণিপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী জাকির আহমদের স্ত্রী জাসমিন বেগম (২২), খসরু উদ্দিনের ছেলে বাক প্রতিবন্ধী উবাদ মিয়া জিরা (৪৫), খসরু উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদির (২৫), আব্দুর রশিদের স্ত্রী আয়মুন বিবি (৫৫)।
পরে আহতদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে জকিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক খসরু উদ্দিনের জামাতা আবু বক্করকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী চলে যান। শনিবার দুপুরের দিকে আহত আবু বক্কর সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। নিহত আবু বক্কর একটি ফুড কোম্পানীর গাড়ী চালক। তার ৩ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। এ ঘটনায় জাসমিন আক্তার বাদী হয়ে আব্দুর রশিদের ছেলে নিকন আহমদ (৪৫), তার স্ত্রী সালেহা বেগম (৩৫), তছদ্দর আলীর ছেলে আব্দুল হান্নান (৪৮), মৃত আকামত আলীর ছেলে মুক্তার আহমদ (৩০), মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে দিলোয়ার হোসেন (৩০), মৃত ফয়জুর রহমান ফজইর ছেলে তাজু আহমদ (২২) কে আসামী করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পুলিশ জড়িত সালেহার ছেলে জোবের আহমদের সহযোগীতা নিয়ে একই গ্রামের আব্দুল কাইয়ুমের বাড়ী থেকে সালেহা বেগমকে আটক করেছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গণিপুর গ্রামের গ্রাম পুলিশ ময়নুল ইসলাম জানান, নিকন তার বাবার অবাধ্য ছেলে। নিকনের যন্ত্রণায় পুরো এলাকা অতিষ্ট। এ মারামারিতে নিকনের বাবা আব্দুর রশিদসহ আপন ভাই বোন নিকনের বিরুদ্ধে ছিলেন। নিকনের বোন জাকির আহমদের পক্ষে থাকায় নিকন তার বোনকেও আহত করেছে। শনিবার আহত আবু বক্করের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে নিকনের ছেলে জোবের আহমদ তথ্য দিয়ে তার মা সালেহা বেগমকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে সহযোগীতা করে। নিহত আবু বক্কর শুক্রবার শ^শুড় বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে নিকনের পক্ষের লোকজনের হামলায় আহত হন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জকিগঞ্জ থানার এসআই কল্লোল গোম্বামী জানান, গ্রামবাসীর সহায়তায় নিকনের স্ত্রী সালেহা বেগমকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd