সিলেট ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:২৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক :: নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহত সিলেটের গোলাপগঞ্জের মেয়ে হুসনে আরা বেগম পারভীনের লাশ নিউজিল্যান্ডের একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে বসবাসরত পারভীনের স্বামী ও মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি দেশে থাকা পরিবারের। লাশ দেশে আসবে, নাকি সেখানেই দাফন হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছে না গ্রামের বাড়ির লোকজন।
বিষয়টি নিশ্চত করেছেন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হোসনে আরার বড় ভাই মো. নাজিম উদ্দিন।
মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, সে আমার খুব আদরের বোন ছিল। তার সঙ্গে আর দেখা হবে না, কথা হবে না। আর আমায় ভাই বলে ডাকবে না। প্রতিদিন আর কেউ ফোন করে খবর নিবে না বলেই কান্নার কারণে আর কথা বলতে পারেননি তিনি।
গত শনিবার দুপুরে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালহাটা গ্রামের নিহত হোসনে আরার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আচমকা এই দুঃসংবাদে পরিবারের সকলেই শোকাহত। স্বজনদের সকলেই কান্না করছেন। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শি ও গণমাধ্যমকর্মীরাও ভিড় করছেন এই বাড়িতে। নিহত হোসনে আরা বেগম পারভিন উপজেলার জাঙ্গালহাটা গ্রামের মরহুম নুর উদ্দিনের মেয়ে।
পরিবারের একাধিক সদস্য জানান, এক বছর আগে হুসনে আরার ভাই বুরহান উদ্দিন নিউজিল্যান্ডে মারা গেলে সেখানেই দাফন করা হয়। হুসনে আরাকেও সেখানেই দাফন করা হতে পারে।
দুই ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সবার ছোট হুসনে আরা বেগম পারভীন। ১৯৯২ সালে বিশ্বনাথ উপজেলার মিরেরচর গ্রামের মৃত মকররম আলীর ছেলে ফরিদ উদ্দিনের বিয়ে হয় তার। তিনি ১৯৯৪ সালে স্বামীর সঙ্গে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। শিপা আহমেদ (১৭) নামে এক কন্যা সন্তানের জননী তিনি।
এদিকে, হুসনে আরা পারভীনের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায় দু পা হারানো স্বমী ফরিদ উদ্দিন (৫৫) ও একমাত্র কন্যা শিফা বেগম।
বিশ্বনাথে গ্রামের বাড়িতে থাকা ফরিদ উদ্দিনের ভাতিজা নজরুল ইসলাম জানান, নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত অবস্থায় প্রায় ১৫ বছর পূর্বে চাচা ফরিদ উদ্দিনের সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা পঙ্গু হয়ে যায়। পঙ্গু হওয়ার পর হুইল চেয়ারে করে তাকে দেখাশুনা করতেন চাচি হুসনে আরা। তিনি অসুস্থতার কারণে ১৫ বছর ধরে দেশের বাড়িতে আসতে পারেননি। পারভীনও স্বামীকে অসুস্থ রেখে দেশের বাড়িতে তেমন আসা যাওয়া ছিল না। পারভীন সর্বশেষ ২০০৯ সালে তার একমাত্র কন্যা শিপা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসেন। মাত্র ১০ দিন দেশে অবস্থান করে স্বামীর টানে আবার নিউজিল্যান্ডে চলে যান।
সন্তান আর স্বামীকে দেখাশুনায় দিন কাটতো হুসনে আরার। শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করতে স্বামীকে হুইল চেয়ারে করে সঙ্গে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদের ভেতরে রেখে তিনি মহিলা অংশে নামাজ পড়তে যান। এসময় তিনি মসজিদের ভেতরে গুলির শব্দ পেয়ে স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। কিন্তু তার স্বামী বেঁচে গেলেও ওই সন্ত্রসীর গুলিতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিতহ হন। তার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়লেন পঙ্গু স্বামী আর একমাত্র কন্যা সন্তান শিফা বেগম।
এমন একজন ভালো মানুষের মৃত্যুর খবরে মিরেরচর গ্রামেও দেখা দিয়েছে শোকের আবহ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd