সিলেট ৬ই মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ | ২১শে রজব, ১৪৪২ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:০৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৮
Sharing is caring!
ক্রাইম প্রতিবেদক :: কানাইঘাটে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০১৭ সালের বই বিতরন না করে বিভিন্ন গোডাউনে স্টক রেখে গোপনে বিক্রয় করার সময় প্রায় ৭ টন বই আটক করা হয়েছে। কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসি কান্ত হাজং সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে একটি ট্রাক থেকে গতকাল বুধবার বিকালে উক্ত সরকারী বই গুলো আটক করেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সূলতানা সরেজমিন পরিদর্শন করে এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন।
জানা যায়, সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, সিলেট জেলার ১১টি উপজেলা শিক্ষা অফিসের গোডাউনে রক্ষিত ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের বাংলা ভার্সন ও ইংরেজি ভার্সন উদ্বৃত্ত (পুরাতন-অব্যবহৃত) পাঠ্য পুস্তকের পরিমান হিসাব করে সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (চ:দা:) মো: ওবায়দুল্লাহ গত ২৬/০৯/২০১৮ইং তারিখে সিলেট জেলার ১১টি উপজেলার সর্বমোট ৮৪২৯ কেজি অযোগ্য ও বাতিলকৃত বই প্রকাশ্য নিলামে ১৮.২৫ পয়সা দরে বিক্রয় করেন। এরমধ্যে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলা শিক্ষা অফিসের গোডাউনে ৭৫০ কেজি বই রক্ষিত ছিল। গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় কানাইঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের গোডাউন থেকে উক্ত নিলামকৃত ৭৫০ কেজি বই নিতে আসেন সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী অলক কুমার দাস। এসময় তিনি কানাইঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক আব্দুল আজাদ, নৈশ প্রহরী হোসেন আহমদের সহযোগীতায় উপজেলার টিলাবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনাম উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সিএ বিপ্লব কান্তি অপু’র কাছথেকে গোডাউনের চাবী সংগ্রহ করে গোডাউনের তালা খুলে ২০১৭ সালের স্টককৃত নতুন বই মিলে ২টি ট্রাকে প্রায় ১৫ জন শ্রমিক লাগিয়ে প্রায় ৭ টন বই লোড করতে শুরু করেন।
এতে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে কানাইঘাট উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক জুনেদ হাসান জিবান, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল হোসেন উক্ত ট্রাকে লোড করা এত বই দেখে অলক কুমার দাসের কাছে নিলাম বিজ্ঞপ্তির সিডিউল দেখতে চান। এসময় অলক কুমার দাস জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (চ:দা:) মো: ওবায়দুল্লাহ’র স্বাক্ষর বিহীন একটি চিটি তাদের কাছে উপস্থাপন করেন। উক্ত চিটিতে ৭৫০ কেজি ২০১৬ সালের অযোগ্য ও বাতিলকৃত বই নিলামে বিক্রয় করা হয়েছে বলে উল্লেখ ছিল। অতচ ১টি ট্রাকেই ২০১৭ সালের ভান্ডিল করা নতুন বই মিলে প্রায় ৭ টন বই লোড করা হয়েছিল। বিষয়টি তাৎক্ষনিক কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানাকে অবহিত করলে তিনি তদন্ত করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসি কান্ত হাজংকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে লুসি কান্ত হাজং সরেজমিনে গিয়ে ২০১৭ সালের বই মিলে প্রায় ৭ টন বই ট্রাকে লোড করা হয়েছে এবং আরেকটি ট্রাকে লোড চলছে দেখে তিনি দ্রুত ট্রাক আনলোড করে গোডাউনে বই জমা রাখার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে উল্লিখিতদের কাছে এত বই ২ ট্রাকে লোড করার কারণ জিজ্ঞাস করলে উল্লিখিত ব্যক্তিরা কোন সদোত্তর দিতে পারেনি।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রথমে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসি কান্ত হাজংকে দিয়ে এবং পরে কানাইঘাট থানার এসআই সঞ্জিত রায়কে দিয়ে সমূহ বিষয়টি তদন্ত করান। পরবর্তীতে বিকাল ৫টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা উপজেলার রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের নিয়ে গোডাউনে উপস্থিত হয়ে পুরো বিষয়টি তদন্ত করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক রিংকু চক্রবর্তী, পৌর আওয়ামীলীগের আহবায়ক জামাল উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক কেএইচএম আব্দুল্লাহ, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জুনেদ হাসান জিবান, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল হোসেন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আলিম উদ্দিন আলিম, সাধারণ সম্পাদক মুমিন রশিদ, কানাইঘাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, সহ সম্পাদক আব্দুন নুর প্রমূখ। এসময় কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, সরকারী বই গুলো গোপনে এভাবে কেন বিক্রয় করা হচ্ছে এবং এ ঘটনায় কারা জড়িত রয়েছে সমূহ বিষয়টি সিলেটের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলাপ করে উল্লিখিত গঠনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
………………………..
Design and developed by best-bd