সিলেট ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:১৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০১৮
এনামুল হাসান, জকিগঞ্জ থেকে :: জকিগঞ্জে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দী,বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বিশুদ্ধ পানি তীব্র সংকট বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি উপজেলার বন্যা বিধ্বস্ত মানুষের।বন্যায় আক্রান্ত মানুষের দাবি পানি শুকিয়ে গেলেও আমাদের বাড়ি ঘরের অবস্থা নাজুক,ক্ষয়ক্ষতির শেষ নেই।আমরা এসব পুঁষিয়ে উঠতে হলে সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত থাকা প্রয়োজন।
জকিগঞ্জের পুরো উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত। গত ১৮ জুন সোমবার সকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতি আংশিক উন্নতি হচ্ছে। শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের একাধিক স্থানে ডুবে যাওয়ায় ঈদের দিন বিকেল থেকে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও গো খাদ্যর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অসহায় লোকজনের জন্য ২৭ টন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজন কুমার সিংহ জানান ইতিমধ্যে বরাদ্দকৃত ২৭টন চাল ভাগ করে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রেরন করা হয়েছে। অন্যদিকে বন্যা আক্রান্ত এলাকা জকিগঞ্জকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবীতে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ সাংবাদিকদের সাথে বিশেষ মতবিনিময় করে এ দাবী জানিয়েছেন।
সরেজমিন বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জকিগঞ্জ সদর, মানিকপুর, বারঠাকুরী, বারহাল, বীরশ্রী, কসকনপুর, কাজলসার ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার একাধিক ওয়ার্ড, সুলতানপুর ও খলাছড়া ইউনিয়ন আংশিক এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে অন্তত ২৫টি স্থান দিয়ে এবং ডাইক উপছে নানা স্থান দিয়ে পানি হু হু করে লোকালয়ে আসছে। সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি আংশিক কমলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, মসজিদে ও মাদ্রাসায় পানি ঢুকেছে।
বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন জানান, গত ১১ জুন বুধবার দিবাগত রাতে প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ভারতের বরাক ও লোভা নদী হয়ে আকষ্মিক ভাবে জকিগঞ্জের সুরমা কুশিয়ারা নদীতে আসে। কিন্তু সুরমা কুশিয়ারা নদী থেকে হাওরের সাথে সংযোগকারী ৩৭টি খালনালা বন্ধ থাকায় এ দুটি নদীর পানি বিভিন্ন স্থানের ডাইক ভেঙ্গে জনবসতি প্লাবিত হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, বন্যায় বিভিন্ন ফিসারীর অন্তত ১০ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। আউস ক্ষেত ও আমনের চারা, মৌসুমী শাক সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিন দিক ভারত বেষ্টিত জকিগঞ্জের বারঠাকুরী, জকিগঞ্জ সদর ও মানিকপুর ইউনিয়নের একাংশের সাথে জেলা ও উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বানবাসী মানুষের খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়ায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের আশংকা করা হচ্ছে। বন্যার্ত কিছু মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিলেও বেশির ভাগ মানুষ মাচার উপর বাস করছেন। রান্নার চুলা ও টয়লেটের সমস্যায় লোকজন বেশী অসহায় হয়ে পড়েছেন। জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে বন্যা আক্রান্ত এলাকার কিছু মানুষের মধ্যে ১ টন চাল বন্টন করা হয়েছে। যে পরিমান মানুষ বন্যা আক্রান্ত সেই পরিমান কোন বরাদ্ধ এখনো পাননি। দ্রুত ত্রাণ দিতে তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজন কুমার সিংহ জানান, উপজেলা সদরে বন্যা তথ্য কেন্দ্র খোলা হবে। বন্যার্তদের সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং এবং প্রতিটি ইউনিয়ন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হবে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে বিরোধীদলীয় হুইপ ও জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন এমপি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রীর সাথে এবং সিলেটের জেলা প্রশাসককে জকিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন।বন্যা কবলিত মানুষের জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে। ঝূঁকিপূর্ণ ডাইক এলাকা ঘুরে অধিক ঝূঁকিপূর্ণ পৌর এলাকার কেছরী ডাইকের কাজের জন্য তিনি তাৎক্ষণিক নিজের তহবিল থেকে ২০ হাজার টাকা দেন এবং প্রয়োজনে তিনি আরো দিবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান জকিগঞ্জের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, সরেজমিন আসার কারণে জকিগঞ্জের বন্যার পুরোপুরি চিত্র দেখে গেলাম। সরকার সব ধরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd