সিলেট ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ভলিবল খেলোয়াড় হওয়াটাই তো আপনার জীবনের সোজা রাস্তা ছিল। কী বলেন?
সিন্ধু : সব কিছু কি সোজাসুজি হয়! অনেক কিছুই বদলে যায়, তৈরি হয় নিজের ভালোলাগা।
কিন্তু সেই ৮-৯ বছরে ব্যাডমিন্টনের ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল আপনার?
সিন্ধু : না। আমি বলছি, মা-বাবাই প্রথমে গোপী স্যারের ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেখানে প্র্যাকটিস করতে করতেই খেলাটির প্রতি তৈরি হয়েছে আলাদা আকর্ষণ।
পি ভি সিন্ধুর জীবনের সোজা পথটা হতে পারত ভলিবল। মা-বাবা দুজনই ছিলেন ভলিবল খেলোয়াড়, বাবা পি ভি রামানা তো ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। কিন্তু ওই মা-বাবাই পারিবারিক ধারা বদলে মেয়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ব্যাডমিন্টন র্যাকেট, আট বছর বয়সে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন গোপীচাঁদের ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে। এমন ধারা বদলের কারণ? গোল্ড কোস্টে সিন্ধুর সঙ্গী হয়ে আসা মা বিজয়া একগাল হেসে মজা করে বললেন, ‘না হলে (ব্যাডমিন্টন না খেললে) যে আজ এখানে আমাদের দেখা হতো না।’ হয়তো তাই, প্রত্যেক মানুষই জন্মায় নিজের ভাগ্য ও প্রতিভা নিয়ে। সেখানে অন্য কিছু চাপিয়ে দিতে গেলেই ভজঘট লেগে যায়। ভলিবল খেললে হয়তো বা ভারতের ক্রীড়া আকাশে সিন্ধুর উজ্জ্বল তারা হয়ে ওঠা হতো না। অলিম্পিকের আকাশ রাঙানো হতো না।
মজাটা হলো, অলিম্পিক গেমসের ভাবনা নাকি মাথাতেই নিতে চাননি হায়দরাবাদের এই তরুণী। সেটা জোর-জবরদস্তি ঢুকিয়েছেন গোপীচাঁদ এবং রিও অলিম্পিকের এক রুপায় পুরোপুরি রুপালি আভায় ভরে গেছে ২২ বছর বয়সী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের জীবন। রুপালি পর্দায় দেখা যাবে তাঁর বায়োপিক! তাই সিন্ধুর কাছে দুই বছর আগের রিও অলিম্পিক জীবনের শিক্ষাও বটে, ‘এটা ছিল আমার প্রথম অলিম্পিক, ওখানকার পরিবেশ-প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। তাই কী হবে সে নিয়ে আমার মনের ভেতর একধরনের খচখচানি কাজ করত সব সময়। কিন্তু কোচ সব সময় আমাকে সামনে এগিয়ে দিতে চাইতেন, বিশ্বাস জোগাতেন আমার মধ্যে। শেষ পর্যন্ত এটা হয়ে গেছে আমার জীবনের দুর্দান্ত এক শিক্ষা।’ মূলত কোচ গোপীচাঁদই ছিলেন তাঁর অলিম্পিক জ্বালানি। কোচ বারবার বলতেন, ‘চেষ্টা করো, তুমি পারবে।’ শেষ পর্যন্ত সিন্ধু পেরেছেন অলিম্পিক পদক জিততে এবং এর পর থেকেই আকাশছোঁয়া বিশ্বাস নিয়ে সব সময় ইতিবাচক থাকেন।
গোল্ড কোস্টে এসেও তাঁর চোখে-মুখে সেই বিশ্বাসের ছোঁয়া, ‘কমনওয়েলথ গেমসে এসেছি সোনার আশা নিয়ে। আসলে এ বছর এশিয়ান গেমসসহ অনেক ব্যাডমিন্টন সিরিজ আছে। সবগুলোতে ভালো খেলতে হবে।’ আগেরবার গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ। সেটা সোনায় রূপ দিতে এলেও অনেকে বলেছেন তাঁর ইনজুরির কথা। কিন্তু সিন্ধুর দাবি, তাঁর ইনজুরি সেরে গেছে। পাশ থেকে মাথা নেড়ে সায় দিয়েছেন তাঁর মা-ও। তিনি প্রায় সব টুর্নামেন্টেই যান সিন্ধুর সঙ্গী হয়ে। মেয়ে যত বড় তারকাই হোক, এখনো মা বিজয়ার কাছে একাডেমিতে যাওয়া ছোট শিশুটি। প্রতিদিন যাকে হাত ধরে ২৮ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যেতেন ব্যাডমিন্টন শেখাতে। শিশুর জীবন গড়তে গিয়ে বিজয়া বিসর্জন দিয়েছেন নিজের শখ-আহ্লাদ। মেয়ের কাছেও তাই মায়ের কথাই শেষ কথা। সে জন্যই তো সিন্ধু গেমস ভিলেজে কয়েক মিনিট কথা বলতে রাজি হয়েছিলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। একথা-সেকথার পর তাঁর ক্যারিয়ারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছেন, ‘গোপী স্যার না থাকলে হয়তো আমার এত ভালো খেলা হতো না। তাঁর কাছেই হাতেখড়ি এবং স্বপ্ন দেখার শিক্ষা পেয়েছি। এখন অনেক বিদেশি কোচের সান্নিধ্য পেলেও গোপী স্যারই সেরা। আমার জন্য তিনি অনেক পরিশ্রম করেছেন। তাঁর কাছে যা কিছু শিখেছি, সেগুলো দিয়েই হয়েছে সব অর্জন।’
তাঁর এত অর্জনের সুবাদে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন আজ অনেক উঁচুতে। তাঁকে রোল মডেল ধরে উঠে আসছে নতুনরা। কিন্তু এগোতে হলে লাগবে সিন্ধুর মতো আত্মবিশ্বাস ও ভালোবাসা, ‘ব্যাডমিন্টনই আমার জীবনের সব, এই খেলাটির জন্যই আমি আজ এ জায়গায় দাঁড়িয়ে। যদি কিছু অর্জন করতে চাও প্রথমে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ বিশ্বাস এবং পরিশ্রম একজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়কে নিয়ে গেছে অলিম্পিক পদকের কাছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd