সিলেটের অসহায় মানুষের বন্ধু পুলিশ সদস্য সফি ও তার ‘মানবিক টিম’

প্রকাশিত: ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২১

সিলেটের অসহায় মানুষের বন্ধু পুলিশ সদস্য সফি ও তার ‘মানবিক টিম’

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ২০২০ সালে দেশে শুরু হয় করোনা মহামারী। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই সাধারণ মানুষজন পড়েন লকডাউনের বেড়াজালে। সেই লকডাউনের প্রভাব সরাসরি পড়ে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষজনের উপর। মধ্যবিত্তরা সঙ্কটে পড়েন করোনা ও লকডাউনের প্রভাবে।

নিম্নবিত্তরা হাত পেতে সাহায্য নিয়ে কিছুটা চলতে পারলেও সমস্যায় পড়েন মধ্যবিত্তরা। সেই মানুষদের কথা চিন্তা করে রাতের বেলা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবারসামগ্রী নিয়ে দরজার সামনে রেখে কলিং বেল বা দরজায় টোকা দিয়ে চলে আসতেন এক যুবক। করোনাকালে এরকম প্রায় ৫শতাধিক মধ্যবিত্ত ও সহস্রাধিক নিম্নবিত্ত পরিবারকে সাহায্য করেন তিনি।

সেই যুবকের নাম মো. সফি আহমেদ (২৯)। চাকরি করেন সিলেট মহানগর পুলিশে (এসএমপি)। এসএমপির মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভিস বিভাগে কর্মরত আছেন তিনি।

Manual2 Ad Code

সফি জানান, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, অসহায় হয়ে পড়া শিক্ষার্থী ও হতদরিদ্র মানুষদের সাহায্য শুরু করেন তিনি। কখনো চাল, ডাল, নুন, তেল দিয়ে। কখনো রান্না করা খাবার দিয়ে। আবার কখনো রক্ত এবং প্লাজমা সংগ্রহে এগিয়ে আসেন তিনি।

Manual1 Ad Code

২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের জন্য। তার প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা ‘মানবিক টিম সিলেট’ নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন।

২১ এপ্রিল গ্লোবাল ইয়ুথ সার্ভিস ডে বা বিশ্ব যুব সেবা দিবস। এই দিবসটি মূলত বিশ্বজুড়ে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের একটি বার্ষিক উদযাপন। এছাড়া এই দিবসটি সফিদের মত যুবকদের সেবামূলক কাজে অংশ নিতে উত্সাহিত করার জন্য পালন করা হয়।

খাবারসামগ্রী বিতরণ ছাড়াও করোনায় আক্রান্তদের প্লাজমা ও রক্ত দেয়া, মৃতদের দাফন-কাফন, অসহায় শিক্ষার্থীদের খরচ বহন, আবার বিনা খরচে ওষুধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসাবাড়ি অথবা হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ারও কাজ করছেন মানবিক টিম সিলেটের সদস্যরা।

এদিকে, করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে আবারো শুরু হয় বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ শেষে ১৪ এপ্রিল থেকে এখনো চলমান কঠোর লকডাউন। এই লকডাউনে সিলেটে কর্মহীন হয়ে পড়ায় নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা পড়েছেন সঙ্কটে এমন পরিস্থিতিতে আবার মানুষের ডাকে সারা দিয়ে দিনরাত সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছেন সফি আহমেদ ও তার টিম। নিজেদের সাধ্যমতো সহায়তা তুলে দিচ্ছেন দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের হাতে।

সফি জানান, প্রতিদিনই সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় চাল, তেল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ছোলা, মুড়ি, মাস্ক, সাবান বিতরণ করেছে মানবিক টিম সিলেট। পাশাপাশি বিভিন্ন এতিমখানা, পথচারীদের রান্না করা ইফতার ও সেহেরির খাবারও বিতরণ করছেন তারা। এসব কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন আর্থিক সহযোগিতা করছেন।

Manual1 Ad Code

সফি আহমেদ বলেন, ‘গতবছর যখন করোনা মহামারি শুরু হয় তখন পুলিশে কাজ করার কারণে মানুষের কষ্ট, দুর্দশা নিজ চোখে দেখেছি। অনেক বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তাদের স্বজনদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা শুনেছি। মানুষের এত কষ্টের কথা শুনে ঠিক থাকতে পারলাম না। চিন্তা করলাম নিজের সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে সাহায্য করা শুরু করবো। তাই প্রথমে আমার রেশনের খাদ্যসামগ্রী, বেতন ও বোনাসের টাকা দিয়ে শুরু করি খাবার বিতরণের কাজ। আমার এই মানবিক কাজ দেখে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তারা এ কার্যক্রমে আমাকে উৎসাহ ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা শুরু করেন। এখনো করছেন। পাশাপাশি প্রবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজনও আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করছেন। সবার ভালবাসা ও সহায়তা নিয়ে মানবিক টিম সিলেট তার কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এপর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১৬ জনের মরদেহ দাফন-কাফনে কাজ করেছে মানবিক টিম সিলেট। করোনা পরিস্থিতিতে এতিমখানার বাচ্চাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এতিমখানা প্রায় ৫০ দিনের অধিক রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয় এবং তা অব্যাহত আছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ১০১ জন ডোনারের মাধ্যমে প্লাজমা দান করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে যেকোনো ধরনের জিনিসপত্র ডেলিভারি (সার্ভিস চার্জ ছাড়া) ৪০ জনকে সহযোগিতা করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অসহায়, হতদরিদ্র, ও ছিন্নমূল মানুষদের প্রায় ১০০ জনকে (ওষুধ, আর্থিক ও সেচ্ছাসেবী) চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে রক্তের প্রয়োজন এমন ৮০০ জন রোগীকে রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমরা। করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই ঈদে প্রায় ৫০০ জনের মধ্যে ঈদের খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ বস্ত্র বিতরণ করা হয়।’

সফি বলেন, এসবের বাইরে মানবিক টিম একটি পরিবারকে গৃহনির্মাণ করে দেয় ও একাধিক পরিবারকে টিন বিতরণ করে। একাধিক অসহায় মানুষকে নগদ অর্থ ও বিকাশের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়, শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম ও প্রচার প্রচারণা যেমন ৫০০০ এর অধিক মাস্ক বিতরণ, জীবাণু নাশক স্প্রে করা, লিফলেট বিতরণ , সাবান বিতরণ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সচেতনতামূলক ভিডিও চিত্র ও স্থির চিত্র তুলে ধরা হয়।

Manual7 Ad Code

মানবিক টিম সিলেটের প্রধান সমন্বয়ক মো. সফি আহমেদ বলেন, সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আমাদের উদ্যোগে সহযোগিতা করেছেন। এখনো করছেন, সামনেও সহযোগিতা করবেন। এই উদার মনের মানুষদের জন্যই আমি বা আমরা কিছু মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি। আপনাদের সকল প্রকার সহযোগিতায় যদি একটি মানুষ ভালো থাকে, তার মুখে হাসি ফোটে দিন শেষে আপনার আমার সকল প্রচেষ্টার সফলতা পাবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..