দেশেমাতৃকার জন্য লড়লেন অথচ দেশের মাটিকে হারাম করে দিলোওরা

প্রকাশিত: ৭:০৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৯

দেশেমাতৃকার জন্য লড়লেন অথচ দেশের মাটিকে হারাম করে দিলোওরা

Manual2 Ad Code

মুশফিকুল ফজল আনসারী :: একজন মনোবিজ্ঞানীর কাজের ক্ষেত্র হচ্ছে মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছা ও আচরণ পর্যবেক্ষণ। এমন বৈশিষ্ট্য লালনের ব্রত নিয়ে পরাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা টগবগে একতরুণ একদা জায়গা করে নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে। ভাবনায় হয়তো এমন ছিলো- একদিন দেশ সেরা মনোবিজ্ঞানী হবেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ মাত্র মানুষের মনোজগৎ চুলচেরা বিশ্লেষণে অগ্রসর না হয়ে সরাসরি আপামর মানুষের ইচ্ছা ও আকাঙ্খাকে বাস্তবে রুপ দিতে স্বাধীন ভুখন্ড প্রতিষ্ঠায় নেমে পড়লেন মুক্তির সংগ্রামে।কলম ছেড়ে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন সম্মুখ সমরে। ছিনিয়ে আনেন স্বাধীনতার লাল সূর্য। স্বাধীন বাংলাদেশে আবার ফিরে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই আঙিনায়। অর্জন করেন তাঁর প্রিয় বিষয় মনোবিজ্ঞান-এ সর্বোচ্চ ডিগ্রি – এম এ।

Manual2 Ad Code

বলছি, সাদেক হেসেন খোকার কথা। আমাদের খোকা ভাই।নিউইয়র্কের হাসপাতালে এক অচেনা খোকা ভাইকে দেখলাম গতকাল সন্ধ্যায়। আকুল অভিব্যক্তি আর যন্ত্রণা ও বেদনায় সিক্ত খোকা ভাই। অনেক কষ্টে কেবল কয়েকটি শব্দ এক করতে পারলেন; বলেলেন ‘দোয়া কইরো’। আড্ডা আর আলোচনায় কতো যে জমপেশ সন্ধ্যা পার করেছি তার কোনো ইয়ত্বা নেই। কিন্তু গতকালের সন্ধ্যার জন্য একেবারেই অপ্রস্তুত ছিলাম। হাসপাতালে আছেন প্রায় ১২ দিন। এই ১২ দিনের মধ্যে ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্ক যাওয়া হয়নি। ফলে যাওয়া হয়নি ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে। ধারণা ছিলো চিকিৎসার নিয়মিত অংশ হিসাবে ভর্তি আছেন। আবার বাড়ি ফিরবেন , তখন যথারীতি আড্ডা দিতে যাবো। বিদেশ বিভুইয়ে নিউইয়র্ক গেলে খোকা ভাইয়ের বাসায়ই খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা। কথার ফাঁকে প্রায়ই বলতেন মনে হয় ‘বাক্স বন্দি হয়েই দেশে যাইতে হবে’। যিনি দেশমাতৃকার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়লেন, তার জন্যই দেশের মাটিকে হারাম করে দিলো অবৈধ শাসক শ্রেণী! শতমামলা, হুলিয়া আর সম্পদ বাজেয়াপ্ত কোনো কিছু বাধ গেলোনা! শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের পাসপোর্টি পর্যন্ত আটকে দিলো ‘ওরা’।

Manual1 Ad Code

জীবনের প্রতিটি পরতে যিনি রেখেছেন ঈর্ষনীয় সাফল্য তিনি আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার প্রিয় খোকা ভাই। শুরুতে একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে তরুণদের নজর কাড়েন জনাব সাদেক হোসেন খোকা। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরেই ১৯৭২ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়নের দায়িত্ব নিয়ে ক্লাবকে তিন বছরের মধ্যে তৃতীয় থেকে প্রথম বিভাগে উন্নীত করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জনাব খোকা ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ও ফরাশগঞ্জ ক্লাবের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান ছিলেন। মওলানা ভাষানীর অনুসারী বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আশির দশকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন জনাব সাদেক হোসেন খোকা। ঢাকার নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযাদ্ধাকে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) থেকে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। দায়িত্ব পান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন।

১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন ৭১ এ হানাদার বাহীনির বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া এই গেরিলা মুক্তিযাদ্ধা । দায়িত্ব পান ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতির।
সোমবার বিকালে ২২০ মাইল দূরত্বে ওয়াশিংটনে বসে জানতে পারি ডাক্তারদের চরম অসহায়ত্ব। এখন ভরসা কেবল মওলার অপার অনুগ্রহ। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সর্বদা নিবেদিত সাদেক হোসেন খোকাকে এখন সকলের দেবার পালা। আর তা হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন’র দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা। মহান স্রষ্টাই পারেন তার সৃষ্টিকে অশেষ অনুগ্রহ করতে। আসুন আমরা এই মজলুম জননেতার জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনায় সামিল হই!

মুশফিকুল ফজল আনসারীর, ফেসবুক থেকে সংরক্ষিত।
জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউস প্রেসকোরের সদস্য, জাস্ট নিউজ বিডি ডটকমের সম্পাদক

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..