আবারো চটপটি ব্যবসায়ীদের দখলে কাজিরবাজার সেতু: পথচারীদের চলাচল বন্ধ

প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৯

আবারো চটপটি ব্যবসায়ীদের দখলে কাজিরবাজার সেতু: পথচারীদের চলাচল বন্ধ

Manual3 Ad Code

সিলেট নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ১৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখঘাট এলাকায় সুরমা নদীর উপর তৈরি করা হয় প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন কাজিরবাজার সেতু। প্রথমে ২০০৭-৮ অর্থ বছরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সকল কাজ শেষ করে উদ্বোধন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ২০১৫ সাল পর্যন্ত। উদ্বোধনের পর থেকে শহরবাসীর কাছে প্রথমে সময় কাটানোর স্থান পরে বিনোদন কেন্দ্রে পরিচিতি পায়। সূর্য ডুবার সাথে সাথে প্রতিদিন ভীড় করেণ অগণিত বিনোদনপ্রেমীরা। তাদের পুঁজি করে সেতুর এক মোড় থেকে ওপর মোড় পর্যন্ত দুই পাশের ফুটপাত দখলে নেয় চটপটি-ফুচকাওয়ালারা। সুরমার পাড় এলাকা থেকে ধাওয়া খেয়ে চটপটির গাড়ি নিয়ে কাজিরবাজার ব্রিজে অবস্তান করছে তারা। এখন ওই চটপটি ওয়ালাদের সেল্টার দিচ্ছে হিজড়া নামধারী রানা ভূইয়া নামের এক যুবক। রানা নিজেকে হিজড়া পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সরকারের ভিবিন্ন দপ্তর থেকে টাকা আদায় করছে। আসল হিজড়ারা এই টাকা থেকে বঞ্চিত।সে নতুন করে একটি ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করেছে। আর সেই ব্যবসা হচ্ছে হিজড়াদের নামে ভিবিন্ন প্রতিষ্টান থেকে গাড়ি নিয়ে চটপটির ব্যবসা করা। বর্তমানে রানার অধীনে ১০টি গাড়ি রয়েছে। প্রতি গাড়ি থেকে রানা দৈনিক নিতশত টাকা করে ভাড়া আদায় করেন।

পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্মিত ফুটপাথে চেয়ার বসিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় চলাচল। আর চটপটি-ফুচকাসহ নানা দোকান ব্রিজে যানবাহন চলাচলের স্থানে বসানোর কারণে সড়ক সরু হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে দু্র্ঘটনা। ব্রিজে দুর্ঘটনার আরো কয়েকটি কারণ উল্লেখযোগ্য, কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণ হাইড্রলিক বাইসাইকেল কেউ আবার মোটরসাইকেল দিয়ে বিভিন্ন ম্যাজিক প্রদর্শনের কারনেও দুর্ঘটনা ঘটছে।

‘সেলফি ব্রিজ’ খ্যাত কাজিরবাজার ব্রিজে বিনোদনপ্রেমীদের সাথে মিশে বিচরণ করছে কিছু দেহপসারণী। খদ্দরদের পছন্দ হলে মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজি অটোরিকশা চলে যাচ্ছে অন্যত্র। ব্রিজের সোডিয়াম বাতি প্রায় সবকটি এখর আর রঙিন আলোয় জ্বলে না। গল্প করতে করতে যে যুগলজুটিগুলো অনেকটা একা হয়ে পরেন তারা অন্ধকারে ছিনতাইকারীর কবলে পরে মোবাইলসহ টাকা-পয়সা দিয়ে নিস্ব হয়ে বাসায় ফেরেন। ঝক্কিঝামেলায় জরাতে না চাওয়ায় কেউ পুলিশকে জানান না বলে জানা যায়। রাত গভীর হলে ব্রীজের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলকারী ও রিকসা, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল থামিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই’র ঘটনা ঘটতে শুনা যায়। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলযোগে ছিনতাই করে মুহুর্তের মধ্যে উধাও হয়ে যায়।

ব্রীজের দক্ষিণ সুরমা অংশ হতে উত্তর সুরমা অংশ পর্যন্ত প্রায় ১১৮টি বিদ্যুতের খুঁটি রয়েয়ে। স্থাপনের সময় সব জ্বললেও গতকাল সন্ধায় ঘুরে দেখা যায় জ্বলে মাত্র ৩০টা।

Manual3 Ad Code

ব্রিজ দুই থানার অন্তর্গত হওয়ায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশ সিদ্ধান্ত নিয়ে স্পটে পৌছতে দেরি করায় অবশেষে ঘটনার কোনো চিহৃ খোঁজে পায়না। ব্রিজে পুলিশের টহল নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের নির্দেশে নিয়মিত টহলের কথা থাকলেও ডিউটিরত পুলিশ রহস্যজনক কারণে এ এলাকা এড়িয়ে যান বলে অনেকে অভিযোগ করেণ।

Manual1 Ad Code

এদিকে গত ২৯ মার্চ রাতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন মুসা কাজিরবাজার সেতুর উপর চটপটির দোকানের সাথে আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়ে দুই দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা যান। যুবলীগ নেতা মারা যাওয়ার পর থেকে দলিও অনেক নেতাকর্মীর তৎপরতায় ব্রিজে কোনো ধরনের দোকান বসতে দেয়া হয়নি। সাথে পুলিশের নজরদারিও ছিলো। তিনমাস ব্রীজের ফুটপাথ দখলমুক্ত থাকলেও ফের ব্রিজ চটপটিসহ নানা দোকানে দখল হয়ে গেছে। বৃষ্টি না থাকলে বিকেলের পর পথচারীদের চলাচলে বেগ পোহাতে হয়।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, স্পাইসি ফুচকা, ভাই ভাই ফুচকা, শাওন চটপটি ও ফুচকা, মাহিয়া চটপটি, ডিজিটাল চটপটি ও ফুচকা, অলি চটপটি এন্ড ফুচকা হাউজ, ইতি ফুচকা, ইতি ও স্মৃতি চটপটি ও ফুচকা, মুন্না চটপটি, হাফসা চটপটি, সাদিয়া চটপটি, স্পাইসি ফুচকা ২ ও বিসমিল্লাহ স্পেশাল চটপটি সহ অসংখ্য দোকান ১৫ থেকে ৩০টা পর্যন্ত চেয়ার বসিয়ে চলছে রমরমা ব্যবসা। খাবার না খেলে অযথা বসে গল্প করতে দেয়া হয় না। চটপটি ও ফুচকায় নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ দাম। বেশি দাম নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, পুলিশসহ কয়েক পার্টিকে বখরা দেয়ার কারনে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা তারা নেন। পছন্দের জায়গার জন্য কেউ আবার নির্ধারিত স্থান কিনে রেখেছেন। কোনো ঝামেলা হলে ফোন করার সাথে সাথে তথাকথিত ‘বড় ভাই’রা না কি হাজির হয়ে যান। এসব বড় ভাইদের সাথে পুলিশের দহরমমহরম সম্পর্ক থাকায় তারা নিরাপদে ব্যবসা করছেন।

Manual7 Ad Code

কোতোয়ালী থানার অস্তগত লামাবাজার ফাঁড়ি ও দক্ষিণ সুরমা থানার টার্মিনাল ফাঁড়ির ফুটপাত বানিজ্যে মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে ফুটপাত দখলকারীরা। প্রতিদিন পুলিশের সাথে সরকার দলের নাম ব্যবহার করে দু’গ্রুপ চাঁদা আদায় করে নেয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দোকানিরা বলেন।

Manual6 Ad Code

ব্রিজে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা অনেকে নিরাপত্তা জোরদারের প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান। ব্রিজে সোডিয়াম বাতিগুলো জ্বলে উঠার জন্য সিটিকর্পোরেশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নগরবাসীর আহবান।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..