প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ও চাকরি চেয়ে অনশনের ১২ দিনে চাঁদের কণা

প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ও চাকরি চেয়ে অনশনের ১২ দিনে চাঁদের কণা

Manual6 Ad Code

শারীরিক অক্ষমতাকে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জয় করেছিলেন মাহবুবা হক চাঁদের কণা (৩১)। তবে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারছেন না তিনি। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। প্রতিবন্ধী হওয়ায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি মেলেনি তার। তাই বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ও চাকরি চেয়ে গত জুনে অনশন করেও চাকরি না পাওয়ায় ফের অনশনে নেমেছেন তিনি।

Manual6 Ad Code

রোববার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ ১২দিন ধরে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরণ অনশন করছেন তিনি।

Manual6 Ad Code

এর আগে গত ২৬ জুন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করেন তিনি। স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় চাকরির জন্য এই তরুণী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন। সেই অনশন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। চাকরির আশ্বাস পেয়ে অনশন ভেঙে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন চাঁদের কণা। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির আশ্বাস পেলেও পরে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়।

Manual3 Ad Code

চাঁদের কণা বিডি২৪লাইভকে বলেন, গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি চেয়ে ও তার সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য আমরণ অনশন করি। অনশনের তিনদিন পর প্রধানমন্ত্রী চাকরির আশ্বাস দেন এবং তার অধীনস্থ একান্ত সচিবকে চাকরির ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন, কিন্তু আমার দাবি অস্বীকার করে সিরাজগঞ্জ জেলা সমাজসেবা অফিসে অস্থায়ীভাবে হাজিরাভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির একটি চাকরি দেন এবং আমাকে আমার কাঙ্ক্ষিত চাকরি থেকে বঞ্চিত করেন। তাই নিরুপায় হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমরণ অনশনে নেমেছি।

এভাবে কতদিন অনশন করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী দেশের বাহিরে আছেন দেশে আসার পর তিনি আমার বিষয়ে ভালো কোন সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার মা। আমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই। তার সাথে দেখা করার জন্য তার বাসভবনের সামনে একাধিকবার গিয়েছি কিন্তু পারিনি। আমি জানতে চাই প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিয়ে কি ভাবছেন বা কি সিদ্ধান্ত নিবেন।

Manual1 Ad Code

চাঁদের কণা বলেন, জন্মের পরই পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। তাই হাতের ওপর ভর দিয়ে বা হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। আমার বাবা ব্রেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে আছেন। মা নেই। খুব কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করেছি কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও আমার কোনো ভালো চাকরি হয়নি। আমার চাকরির বয়সও শেষের দিকে।

এই প্রতিবন্ধী বলেন, ঘরে আমার অসুস্থ বাবা। ছোট ভাইদের পড়াশোনার দায়িত্ব এমতাবস্থায় যদি আমার কোনো চাকরি না হয় তাহলে আমাদের পুরো পরিবারটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে চাঁদের কণা (৩১)। শিশুকাল থেকে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাতের উপর ভর করে হেঁটে ২০১৩ সালে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরির জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন এ দুয়ার থেকে ও দুয়ার কিন্তু চাকরি মেলেনি।

জানা যায়, মাত্র নয় মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুটি পায়ের কার্যক্ষমতা হারায় চাঁদের কণা। তবুও বাবা-মায়ের সচেতনতায় এবং নিজের প্রতিবন্ধিতা জয়ের অদম্য প্রচেষ্টায় পড়ালেখা চালিয়ে যান তিনি। তিনি যখন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী তখন তার স্কুল শিক্ষক মা হাসনা হেনা বেগম মারা যান। এর কয়েক বছর পর তার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মাকে হারিয়ে এবং বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে এই পরিবারে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা। অবশেষে পড়ালেখার খরচ যোগাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি নেন। শত কষ্টের মাঝেও গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে সফলতার সাথে অর্জন করেন উচ্চতর ডিগ্রি।

টিভি/রেডিওতে সংবাদপত্র পাঠ, টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা, নাটক লেখা, নাটকে অভিনয়, কম্পিউটারের সকল কাজ, স্ক্রিপ্ট তৈরি, ছবি আঁকা, ভিডিও এডিটিংসহ হাতের কাজে নানান ধরনের পারদর্শিতা অর্জন করেছেন এই প্রতিবন্ধী যুবতী।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..