সিলেটের পেঁয়াজের বাজার ১৫ বেপারীর নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ১১:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০১৯

সিলেটের পেঁয়াজের বাজার ১৫ বেপারীর নিয়ন্ত্রণে

Manual5 Ad Code

কিছুদিন আগেও সেঞ্চুরি পেরিয়ে যাওয়া পেঁয়াজ নাভিশ্বাস তুলেছিল জনসাধারণের। মাঝে অভিযানে কিছুটা দাম কমে আসে। কয়েকদিন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজের বাজারে আবারও আগুন। বলা হচ্ছে- সিলেটের বাজারে নিত্যপণ্য পেঁয়াজে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে হরিলুট চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র ১৫ বেপারী নিয়ন্ত্রণ করছেন পুরো সিলেটের পেঁয়াজের বাজার। নগরের কালিঘাটের পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে জেলা প্রশাসনও।

Manual5 Ad Code

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এসব বেপারীদের মধ্যে কয়েকজনের নামও পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সিদ্দিক, শুকান্ত, শরীফ, কাশেম, উত্তম। তাদের মুখের কথায় ওঠা-নামা করে পেঁয়াজের বাজার। ফোনে অর্ডার করলে গাড়ি আসে। আবার বাজারে সংকটও সৃষ্টি করাতে পারেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলেন, যেখানে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ ট্রাক পেঁয়াজ আসে, সেখানে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) মাত্র তিন ট্রাক এসেছে। এক ট্রাক পেঁয়াজ ভারতের ভুমরা থেকে এসেছে। অন্য দুটি ট্রাকে এসেছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ।

মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজের মান খারাপ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, তারপরও ওই পেঁয়াজ ৭২ টাকা পাইকারি বিক্রি করছি। খুচরাবাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। আর ভারতের ভুমরা থেকে আসা পেঁয়াজ বেপারীদের কাছ থেকে ৮২ টাকায় কিনে ৮৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। দোকানিরা ৮৫ টাকায় কিনে নিয়ে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভ্যান গাড়িতে করে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া রোববার (১৩ অক্টোবর) মিয়ানমারের নিম্নমানের ছোট পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও মঙ্গলবার তা ৮০ টাকা। একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বড় পেঁয়াজ ভ্যান গাড়িতে ৮০ টাকা বিক্রি হলেও দোকানিরা বিক্রি করছেন ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়।

ফুটপাতে এবং দোকানের মধ্যে এই ব্যবধান সম্পর্কে সিলেটের ব্রাহ্মময়ী বাজারের আজাদ স্টোরের মালিক আল আমিন বলেন, ফুটপাতের দোকানিরা দুই ধরনের পেঁয়াজ মিক্স করে কম দামে বিক্রি করে থাকেন। যেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয় না। কেননা, অনেক খুদে ব্যবসায়ী আমাদের দোকান থেকে নিত্যপণ্য পাইকারি হিসেবে নিয়ে বিক্রি করেন। এছাড়া আড়তে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়াতে খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে বলেন তিনি।

Manual8 Ad Code

নগরের বন্দরবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা সিলেট সদর উপজেলার মেজরটিলার ফারুক আহমদ বলেন, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও ব্যবসায়ীরা এখন সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। নয় তো একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজে এত দাম কী করে বেড়ে যায়।

Manual6 Ad Code

সিলেট নগরের কালিঘাট পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে দু’একটি দোকানে দামের মধ্যে দু’চার টাকা ফারাক রয়েছে। এ অবস্থায় ফের ৮০ নয়, পেঁয়াজ শতকের ঘরে পৌঁছাবে বলেও জানান ব্যবসায়ীদের কয়েকজন।

পেঁয়াজের বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন মঙ্গলবার দুপুরে অভিযানে নামে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে অভিযানে নগরের কালিঘাট পাইকারি বাজারে সাদিক ট্রেডার্সকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া এসবি বাণিজ্যালয়, সন্তুষ ভাণ্ডার ও হাজি সামসু মিয়া অ্যান্ড সন্সকে তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

জেলা প্রশাসনের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোরশেদ কাদের বলেন, ভোক্তা অধিকার আইনে ও মাপ যন্ত্র ঠিক না থাকা, মূল্য তালিকা না থাকা এবং কৃষি বিপণন লাইসেন্স না থাকায় এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জরিমানা করা হয়।

তিনি বলেন, বাজারে আসা মিয়ানমারের নিম্নমানের পেঁয়াজ ৫৫ ও এর চেয়ে একটু ভালো পেঁয়াজ ৭৫ টাকা এবং ভারতের ভুমরা থেকে আসা এলসি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা পেঁয়াজের মানভেদে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা লাভ করে বিক্রি করছেন।

Manual8 Ad Code

তিনি আরও বলেন, ১৪ থেকে ১৫ বেপারী সিলেটের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন এমনটি তাদের জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এদের কয়েকজনের নামও পেয়েছেন তারা।

সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। আর মিয়ানমারের আমদানি করা পেঁয়াজের মান খারাপ। এ জন্য ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ এনে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পেঁয়াজ যাতে সহজে আসতে পারে, এজন্য সরকারি পদক্ষেপ চাই। এছাড়া যেসব এলাকায় পেঁয়াজ-রসুনের চাষ হয়, সেসব এলাকায় পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ করলেই আমাদের দেশীয় চাহিদা মিটে যাবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..