সিলেটের সীমান্তের কিছু পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে অত্যাধুনিক অবৈধ অস্ত্র!

প্রকাশিত: ১:৩০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯

সিলেটের সীমান্তের কিছু পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে অত্যাধুনিক অবৈধ অস্ত্র!

Manual5 Ad Code

সীমান্তের কিছু পয়েন্ট অবৈধ অস্ত্র কারবারিদের চেনা রুট হিসেবে পরিচিত। তবে এবার সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি সীমান্ত হয়ে দেশে অস্ত্র ঢোকার একটি নতুন রুটের খোঁজ মিলেছে। এই রুট দিয়ে প্রতি মাসে চালান দেশে প্রবেশ করে। এসব চালানে আসা অধিকাংশ অস্ত্রই রিভলবার। বাংলাদেশে আনার জন্য ১২ চেম্বারের বিশেষ রিভলবার তৈরি করা হয়েছিল। এ ধরনের বেশ কিছু রিভলবার এরই মধ্যে বাংলাদেশে ঢুকেছে।

Manual2 Ad Code

গত বৃহস্পতিবার এই রুটের অস্ত্র কারবারিদের মধ্যে তিনজনকে যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। বর্তমানে তাদের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আব্দুস শহীদ, দোলন মিয়া ও আনছার মিয়া। তাদের কাছে ১৬ রাউন্ড গুলিসহ তিনটি অত্যাধুনিক রিভলবার পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুটি অস্ত্র পয়েন্ট ২২ ও একটি পয়েন্ট ৩১ বোরের।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আব্দুস শহীদ ও আনছার মিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। আনছার জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ঘোষগাঁও গ্রামের মৃত মন্তাজ উল্লাহর ছেলে, শহীদ একই ইউনিয়নের টিয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে।

Manual8 Ad Code

আনছার মিয়া জগন্নাথপুর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক, আব্দুস শহীদ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি।

জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর জগন্নাথপুর থেকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন এ দুজন। পরে তাদের আর খোঁজ মিলছিল না। গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জগন্নাথপুর থানার সেকন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, এ দুজনকে ঢাকায় গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি।

গ্রেফতারকৃতদের তথ্যের বরাত দিয়ে সিটিটিসি’র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিছানাকান্দি এলাকার সোনারহাট সীমান্ত হাট থেকে কেনা অস্ত্রই হাত বদলের মাধ্যমে ঢাকায় এসেছিল। প্রথমে ভারতের মেঘালয়ের লাকাটঘাটের এক খাসিয়া ব্যক্তি সীমান্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসেন। চাহিদা অনুযায়ী সিলেটের বিছানাকান্দি নোয়াগাঁওয়ের ওয়াতির আলীর ছেলে আরব আলী এসব অস্ত্র নিয়ে এসে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে সরবরাহ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও আরব আলী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আমিনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তবে আমরা অবাক হয়েছি ১২ চেম্বারের টু টু বোরের রিভলবার দেখে। বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত ছয় চেম্বারের রিভলবার তৈরি করে থাকে। উদ্ধার করা রিভলবারের গায়ে ইউএসএ লেখা থাকলেও আমাদের ধারণা সীমান্তবর্তী দেশেই এগুলো তৈরি করা হয়েছে। এই অস্ত্রগুলো নাশকতার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল বলেও জানতে পেরেছি আমরা।’

Manual3 Ad Code

সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বেশি থাকায় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এখন সিলেটের গোয়াইনঘাটের রুট বেছে নিয়েছে। রবিবার বাদ দিয়ে সপ্তাহে দুই দিন পরপর বেলা ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, মাসে অন্তত দুটি চালান তারা নিয়ে আসেন আরব আলীর কাছ থেকে। প্রতিটি চালানে থাকে কমপক্ষে দুটি অস্ত্র। আরব আলীর কাছ থেকে আবদুস শহীদ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় কিনে ৭০-৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। শহীদ ও আনছারে মাধ্যমে অস্ত্র যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের দোলন মিয়া ও আমিন মিয়ার কাছে। তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেশাদার সন্ত্রাসীদের কাছে এসব অস্ত্র বিক্রি করে।

আরব আলী পেশায় কৃষক হলেও আড়ালে তিনি অস্ত্র কেনাবেচায় যুক্ত। শহীদ এক সময় পাথরের ব্যবসা করতেন। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় অবৈধ অস্ত্রের কারবারে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অস্ত্র সিন্ডিকেটের সদস্য আমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত মাসোহারা তুলে থাকেন। তার সহযোগী দোলন। তার দৃশ্যমান পেশা অটোরিকশা চালনা।

পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এর আগে যেসব রুট হয়ে দেশে অস্ত্র ঢুকেছে তার মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোরের বেনাপোল, কুষ্টিয়া, হিলি, আখাউড়া, ঠাকুরগাঁও ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা। তবে এবারই প্রথমবারের মতো গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি সীমান্ত হয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অস্ত্র আনছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের টার্গেট করেই অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে এসব অস্ত্র কারবারিরা আত্মগোপনে থাকেন। লোকাল প্রযুক্তিতে এসব অস্ত্র তৈরি করা হলেও তার গায়ে লেখা থাকে ‘ইউএসএ’।

Manual4 Ad Code

সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের ডিসি ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘অস্ত্র কারবারিদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুজন রয়েছে। চাইলে তারা আখাউড়া রুট ব্যবহার করে অস্ত্র আনার চেষ্টা করতে পারতেন। আগে যেসব রুট দিয়ে দেশে অস্ত্র ঢুকত, সেখানে নজরদারি থাকায় অস্ত্র কারবারিরা নতুন রুট খুঁজে বের করেছেন।’

স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এডিসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই প্রথম ১২ চেম্বারের অত্যাধুনিক রিভলবার জব্দ করা হয়েছে। যে রুট (সিলেট) ব্যবহার করে অস্ত্র আসছিল সেটি একেবারে নতুন। অস্ত্র কারবারিরা এই রুট ব্যবহার করছেন তা আগে জানা ছিল না। এ চক্রের অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন ও সমকাল।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2019
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..