সিলেট ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:২৯ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০১৯
সিলেটে বিনিয়োগের নামে দেশী এবং প্রবাসী ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেড’ নামের কোম্পানির সাবেক এমডিসহ কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারী। এছাড়াও কোম্পানির বিরুদ্ধে জমি দেখিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
অভিযোগের তীর মূলত প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামায়াত নেতা সাঈদ চৌধুরী ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শাহ জামালের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার, ভুয়া পাসপোর্টের ব্যবসা, প্রবাসী টাকা আত্মসাতসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাঈদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের পরিচালক মো. মাসুকুর রহমান বলেন, সাঈদ চৌধুরী যখন এমডি ছিলেন তখন প্রতিষ্ঠানের অনেকের কাছে বিভিন্ন সময় টাকা নেন। টাকা নেয়ার পর সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি সাঈদ চৌধুরী কখনোই এসব লেনদেনের হিসাব সঠিকভাবে দেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে ডাইরেক্টরশীপ দেয়ার জন্য ৭০ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু কখনো আমাকে কোন হিসাব দেয়নি। এভাবে অনেকের কাছ টাকা নিয়ে মোট ৯ কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন সাঈদ চৌধুরী। আমরা সেই টাকার হিসাব চাই। কোম্পানির হিসাবের বাইরে সে আমার সঙ্গে আন্তরিকতা বাড়িয়ে নতুন একটা ব্যবসা করার কথা বলে আরো ১৫ লাখ টাকা নিয়ে বর্তমানে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক প্রবাসীর কষ্টের টাকা সে মেরে দিয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন এক্সেলসিয়র লিমিটেডের একাংশের মালিক ও লন্ডন রয়েল রিজেন্সী‘র আব্দুল বারী এবং একাশেংর আরেক মালিক কয়সর খান। লিখিত বক্তব্যে আব্দুল বারী বলেছিলেন, ‘সাঈদ চৌধুরী এক্সেলসিয়র সিলেট নামে একটি প্রজেক্টের জন্য ব্রিটেন প্রবাসীদের কাছ থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করেন। অনেকের মতো আমি আব্দুল বারী ও কয়সর খান দুজন মিলে তাকে বিশ্বাস করে মোট ১ কোটি ১৬ হাজার ৮৪৫ টাকা বিনিয়োগ করি। কিন্তু তিনি প্রজেক্টের শুরু থেকে কোন হিসাব দেননি। পরে বিনিয়োগের অনিশ্চিত ভব্যিষতের কথা টের পেয়ে বিনিয়োগ ফেরত দিতে বলি। এরপর অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করেনি সাঈদ চৌধুরী। এখনো তারা বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পাননি।
এদিকে আর্থিক লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সাঈদ চৌধুরী ও শাহ জামালের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা করেছেন আব্দুল বারী। এছাড়াও অভিযুক্ত সাঈদ চৌধুরী ও শাহ জামাল পরিচালকদের ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে কোম্পানি হাউজের কমিটি পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করে। পরে তাদের এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বর্তমান পরিচালকরা হাইকোর্টে মামলা করেছেন। অন্যদিকে প্রবাসী ডাইরেক্টররা সাঈদ ও শাহ জামালের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ভুয়া মামলা করে। ফলে প্রবাসীরা দেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন।
‘এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেড নামের কোম্পানিটির একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, যুক্তরাজ্যের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রবাসী এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডে বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হওয়ার জন্য ৬০ থেকে ৭০ লাখ এবং শেয়ারহোল্ডার হতে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অনেকেই দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানিটির সংশ্লিষ্টরা জানান,অনেক প্রবাসী এক্সেলসিয়র কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। যারা অনেকেই এখনও কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে পারেনি। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা না থাকলে প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলেও অনেকে মনে করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে কোম্পানিটির সাবেক এমডি সাঈদ চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। পরে যোগাযোগের কয়েকদিনের মাথায় তিনি লন্ডনে চলে যান। আরেক অভিযুক্ত এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজামাল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। ভুয়া পাসপোর্টের ব্যবসা করায় ইংল্যান্ডের আদালতে তিনি সাজাও পান। তার কুকর্ম নিয়ে লন্ডনে একাধিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় একাধিক প্রতিবেদন করা হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে শাহ জামালকে তার মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে পরিচয় দিয়ে তাকে মেসেজ করলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd