সিলেট ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:১৫ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৯
সিলেট এমএমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের (সিওমেক) এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ইশরাত জাহান মিথিলা (২২) মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। রোববার সকালে নগরের সুবিদবাজারের ফাজিলচিস্ত ৯৪/৯৫ নং বাসায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে পেচানো ঝুলন্ত অবস্থা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত মিথিলা ওই বাসর ডা. আব্দুল হালিমের মেয়ে। এসএমপির এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শাহাদাত হোসেন জানান, নিজ বাসায় মিথিলার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে স্বজনরা থানায় খবর দিলে পুলিশ দুপুরে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, মিথিলারা চার বোন। পড়ালেখার অতিরিক্ত চাপ থেকে মিথিলা আত্মহত্যা করতে পারেন। সুরতহাল প্রতিবেদনেও আত্মহত্যার আলামত মিলেছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে নগরীর পাঠানটুলায় এক নারী চিকিৎসকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় নিজ বাসায় পার্কভিউ মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তার (২৯) মৃত্যু এখনও উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এটি হত্যাকাণ্ড না আত্মহত্যা তা পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।
এদিকে প্রিয়াংকার বাবা, তার কলিগ ও প্রতিবেশীদের কথায় বিস্তৃত হচ্ছে রহস্যের জাল। স্বামীর পরিবারের দিকেই সবার সন্দেহের তীর। যদিও ঘটনার পরই এর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রিয়াংকার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ঘটনার পর স্বামীর বাড়ির লোকজন এটিকে আত্মহত্যা বলে জানালেও মেয়ের বাবার বাড়ির লোকজন এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডা. প্রিয়াংকার বাবা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানায় প্রিয়াংকার স্বামী দিবাকর দেব কল্লোল, শ্বশুর সুভাষ চন্দ্র দেব ও শাশুড়ি রত্না দেবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এ অবস্থায় জালালাবাদ থানা পুলিশ তিন আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে আদালতে পাঠায়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা এসে ডা. প্রিয়াংকাকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডা. প্রিয়াংকা সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার গঙ্গাধরপুর গ্রামের হৃষীকেশ তালুকদারের মেয়ে। তার স্বামী দিবাকর দেব কল্লোল পেশায় স্থপতি (নর্থ সাউথ ইউনিভাসিটি, ঢাকা)। প্রায় ৫ বছর আগে চারিত্রিক ত্রুটির জন্য সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন কল্লোল।
প্রিয়াংকার বাবা হৃষীকেশ তালুকদার জানান, শান্তা (ডাক নাম) নগরীর পাঠানটুলার পনিটুলা এলাকার পল্লবী সি ব্লকের ২৫ নাম্বার বাসায় স্বামী ও তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। রোববার রাতে তিনি ড্রয়িং রুমের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কারণে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বা এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন হৃষীকেশ তালুকদার।
এ ব্যপারে জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, আগেই ডা. প্রিয়াংকার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ডা. প্রিয়াংকার বাবার দায়ের করা হত্যা মামলায় তাদের আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠালে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ডা. প্রিয়াংকার মৃত্যুকে রহস্যজনক মনে হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। মামলাও হয়েছে। এখন ময়নাতদন্তের পর ঘটনার আসল রহস্য বলা যাবে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের অনুসারী সারোয়ার হোসেনের নেতৃতে ১০ থেকে ১৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মিলে পেটের পীড়ায় ভোগা এক কর্মীকে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রোগীর সঙ্গে একজন থেকে বাকিদের বাইরে যেতে বলেন কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক। এ নিয়ে বাদানুবাদে চিকিৎসদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন ছোরা বের করে ইন্টার্ন চিকিৎসক নাজিফা আনজুম নিশাতকে ছুরিকাঘাত ও ধর্ষণের হুমকি দেন। নিশাত নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি উল্লেখ করে পোস্ট দেন। এরপর শুরু হয় তোলপাড়।
ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করা ও ধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে কর্মবিরতির ডাক দেন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ক্রাইম সিলেট/এইচ/এস
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd