সিলেটে অগ্নি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে নগর ভবনের আশপাশ

প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০১৯

সিলেটে অগ্নি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে নগর ভবনের আশপাশ

জাবেদ এমরান :: সম্প্রতি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি সিলেটে ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেই একই স্থানে পূর্বে সিলিন্ডার বিস্ফারণের আগুনে পুড়ে দুই দোকানমালিকের মৃত্যু হয়। সিলেট সিটি করপোরেশন ভবনের পেছনে সিটি সুপার মার্কেটে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ছোটছোট বোতলে গ্যাস ঢুকানোর মিনি কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে।

জনবহুল এলাকায় অনুমোদিত ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এ কারখানার পাশে সিলেট নগর ভবন ছাড়াও রয়েছে মিউনিসিপ্যাল মার্কেট, পাইলট স্কুল, সিটি সুপার মার্কেট, লালদিঘী মার্কেট সহ শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ওই কারখানার সামন দিয়ে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবসায়ী ও হাজারো পথচারীরা চলাচল করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে একই স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বোতলে গ্যাস স্থানান্তরের সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেসময় আগুনে পুড়ে দোকান মালিক জৈন্তার হরিপুরের কালা মিয়া ও দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের সুহেল দগ্ধ হয়ে মারা যান। প্রাণঘাতীর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এ এলাকায় একই ধরণের দুটি কারখানা গড়ে উঠে। সিটি সুপার মার্কেটের ৯৯নং দোকান ‘সাকিল ইলেকট্রনিক্স সার্ভিস’র মালিক কালা মিয়ার একটি। ঘাসীটুলা মজুমদার পাড়ার বাসিন্দা কালা মিয়া দাবি করেণ দীর্ঘকাল থেকে সরকারের অনুমিত নিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করে আসছেন। তার ভাইয়ের নামে নেয়া লাইসেন্স দিয়ে তিনি সিলেট পদ্মা ও মেঘনা ডিপো থেকে এলপি গ্যাস সংগ্রহ করেণ। এব্যপারে ডিপো কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন বলেও দাবি করেণ কালা মিয়া। যদিও সিলিন্ডার থেকে বোতলে গ্যাস ভরে বিক্রির কোন বৈধ কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেন নি।

আরো জানা যায়, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা করতে হলে ডিপো থেকে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স, বিস্ফোরক লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনসহ নানা অনুমতিপত্র থাকার কথা থাকলেও তিনি শুধু সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দিব্রি করে যাচ্ছেন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা।

সরজমিন ঘুরে দেয়া যায়, মার্কেটের সরো রাস্তার পাশে জনসম্মুখে স্থাপিত মিনি কারখানায় কালা মিয়ার ছোট ছেলে সিলিন্ডার থেকে পাইপের মাধ্যমে একসাথে একাদিক বোতলে গ্যাস ভরছে। গ্যাস ভর্তি বোতল ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডার পাশেই মজুত করে রাখছে। তার কয়েকগজ দূরের শিক্ষার্থীসহ রাস্তা দিয়ে হাজারো পথচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করলেও দুর্ঘটনার সম্ভাবনার বিষয়ে কারো কোনো নজর নেই। প্রতিবেশী অনেকে প্রতিবাদ করলেও অদৃশ্য শক্তিবলে নিজস্ব গতিতে চলে কারখানার কার্যক্রম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পাইলট স্কুল, নগরভবন ও লালদীঘিরপার মার্কেটের মধ্যবর্তী জনবহল স্থানে এমন কারখানায় তারা রয়েছেন চরম আতংকে। দুর্ঘটনাবশত আগুন লাগলে মার্কেটের সরো রাস্তা দিয়ে দমকলবাহিনীর গাড়ি ঢুকতে পারবেনা। আর সে কারণে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চকবাজারের ঘটনাকে ছাড়িয়ে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে সিটি সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নুল বলেন, আপনার কাছ থেকে শোনে দোকানমালিক ও কালা মিয়ার সাথে কথা বলে বোতলে গ্যাস ভরা বন্ধ করে দিয়েছি। সিটি মার্কেটে কোনো ধরনের গ্যাস দিয়ে ব্যবসা চলবেনা বলেও তিনি সতর্ক করে দেন। তবে পত্রিকায় লেখালেখির কারণে সাময়ীক কয়েকদিন কারখানা বন্ধ রাখা হলেও কিছুদিন পর পুনরায় চালু হয়ে যাবে বলে অনেকে জানান।

সিলেট টেকনিক্যাল রোডের যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড (যমুনা ডিপো) এর এক কর্মকর্তা (নাম না লিখার শর্তে) এ প্রতিবেককে জানান, এ নামে তাদের কোনো ডিলার নেই। সিলিন্ডার থেকে বোতলে গ্যাস স্থানান্তরে ডিপো থেকে অনুমিত দেয়া হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলপি গ্যাস বোতলে স্থানান্তরের জন্য কাউকে ডিপো থেকে অনুমিত দেয়া হয় না। কোনো ডিলার এমন ঝুঁকিপূর্ণকাজে জড়িত থাকলে খোঁজখবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

বক্তব্য নিতে সিলেটের ভার্থখলাস্থ পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড (পদ্মা ডিপো) এর ডিএমও কে কয়েকবার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কোনো সাড়া দেন নি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..