সিলেট ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের নয়নাভিরাম নদী বিবিয়ানা। বিবিয়ানার যৌবন-জৌলুস ভালোই ছিলো। কালের বিবর্তনে বিবিয়ানার সেই রূপ আর সৌন্দর্য বিলীন। বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর একটি হচ্ছে কুশিয়ারা। আর কুশিয়ারার আন্ত:শাখানদী বিবিয়ানা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক প্রদত্ত বিবিয়ানা নদীর পরিচিতি নং ৫৯। সর্পিলাকার প্রকৃতির বিবিয়ানা নদীর দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার, গড় প্রশস্থতা ৪৮ মিটার। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং এবং সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও দিরাই এই ৪টি উপজেলা দিয়ে বিবিয়ানা প্রবহমান। নবীগঞ্জ উপজেলার উত্তর সীমানা এলাকার দিঘলবাঁক ইউনিয়নের কসবা গ্রাম এবং জগন্নাথপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে প্রবহমান কুশিয়ারা নদী থেকে উৎপত্তি। কসবা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী হয়ে সর্পিলাকারে ৩৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে বানিয়াচং উপজেলার কাদিরগঞ্জ বাজারের (প্রকাশিত মার্কুলি বাজার) একটু পূর্বপাশে, দিরাই উপজেলার সোয়াতিওর গ্রামের পশ্চিমে কুশিয়ারায় পতিত হয়েছে। প্রমত্তা বিবিয়ানায় জাহাজ চলেছে ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত। ’৯০ এর দশক পর্যন্ত লঞ্চ চলেছে। আর এখন কয়েক কিলোমিটার ছাড়া কোথাও কোনো নৌকাই চলে না।
বিস্তীর্ণ জায়গাব্যাপী নদী হয়ে গেছে মাঠ। নদীর প্রশস্থতা কোনো কোনো স্থানে এতো কম এটাকে নদী না বলে সরু নালা বলাই ভালো। কোনো কোনো স্থানে নদী ছোট খালের মতো। নদীর কয়েক কিলোমিটার ব্যতীত কোথাও নৌকা চলে না । নাব্যতা না থাকায় নানা স্থানে জেগে উঠছে চর। চর জাগলেই শুরু হয় দখলের প্রতিযোগিতা, ঘটে নানা ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষ। নদীর বেশ জায়গা জুড়ে বাড়িঘরসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে ও হচ্ছে। নদীর অনেকগুলো অংশ (বাগাউড়া, রামপুর, হলিমপুর সংলগ্ন) প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে ধানচাষ করছে। কেউ কেউ নদীর পাড় সংলগ্ন তিনদিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে করছে মাছের চাষÑপাচ্ছে বাড়তি আয়। নাব্যতা হারানোর কারণ:
পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পলিমাটি এবং অপরিকল্পিত নদীশাসনে খর¯্রােতা
বিবিয়ানা নদী যৌবন হারিয়ে ফেলেছে।
নদী ড্রেজিং না করা
পানি প্রবাহে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
বিভিন্ন স্থানে নদীর পাড় কিংবা নদী দখল করে অবকাঠামো নির্মাণ
বিবিয়ানা নদী বাঁচাতে কী করণীয় জানতে চাইলে বিবিয়ানা নদী সুরক্ষা কমিটি, সিলেট-এর সাধারণ সম্পাদক, গবেষক ও লেখক সন্জিৎ নারায়ণ চৌধুরী বলেন, জাহাজ চলবে না জানি, লঞ্চও চলবে না, তাই বলে নদীতে নৌকা চলবে না তা হতে পারে না, তাই বিবিয়ানা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন Ñ নদী পূন:খনন করা, নদী ও হাওড়ের অভ্যন্তরীণ খাল পুন:খনন করা, গড়শৌলা হাওড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষায় নদী দখলমুক্ত করা, নদীর জায়গার সকল প্রকার লিজ বাতিল করা, বজ্রপাত প্রতিরোধে নদীর দু’পাড়ে তালগাছ রোপণ, কঠিন মনিটরিং থাকা যাতে দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট না হয়। তিনি মনে করেন এগুলো বাস্তবায়িত হলে অকাল বন্যা কিংবা অস্বাভাবিক বন্যার কবল থেকে ফসল ও জনপদ রক্ষা পাবে, কৃষি অর্থনীতি চাঙা হবে, জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd