সিলেট ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটে দিনদিন বাড়ছে নকল হিজড়াদের সংখ্যা। এর পেছনে কাজ করছে একটি প্রতারক চক্র। তাদের মূল কাজ হলো হিজড়া সেজে মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়া। সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে নকল হিজড়া সেজে মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগের শেষ নেই। এতে করে আসল হিজড়ারা পড়েছেন বিপাকে। নকল হিজড়ারা এখন নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড। প্রকাশ্য দিবালোকে পুরুষ হয়েও হিজড়া সেজে অপরাধ কর্মকান্ডতে জড়িয়ে পড়ায় হতবাক হচ্ছেন জনসাধারণ। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নকল হিজড়াদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিতে সিলেট হিজড়া কল্যাণ সংস্থার নেত্রীবৃন্দ প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই যেন থামছে না নকল হিজড়াদের উপদ্রব। বরং কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা মাসোহারা দিয়ে নকল হিজড়ারা চালাচ্ছে তাদের অপরাধ কর্মকান্ড।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিকালে ঘটে এমন একটি ঘটনা। নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আসল হিজড়াদের হাতে ধরা পড়েন রানা ভূইয়া ও সুমন নামের দুই নকল হিজড়া। তাদের আটক করে সিলেট হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সুন্দরী হিজড়ার কাছে নিয়ে আসা হয়। নিচ্ছিল হিজড়া নামধারী চাঁদাবাজ রানা ভূইয়াকে তখন দক্ষিণ সুরমা থানাপুলিশের কাছে সোপোর্দ করা হয়। কিন্তু থানাপুলিশ থাকে চিকিৎসার কথা বলে ছেড়ে দেয় এমন অভিযোগ হিজড়াদের।
সিলেটের বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, পার্ক, খেলার মাঠ, বাস, ট্রেন সর্বত্রই হিজড়াদের উৎপাত। তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে আছেন মানুষ। চাঁদার হার করা হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। আগে যেখানে ১০ থেকে ২০ টাকা দিয়ে পার পাওয়া যেত, সেখানে এখন ৫০-১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে অনেকটা হেনস্তা করা শুরু করেন তারা। মান সম্মানের ভয়ে অনেকেই টাকা দিতে বাধ্য হন। তারপরও যারা টাকা দিতে অপারগতা শিকার করেন তাদের সঙ্গে করা হয় অসভ্য আচরণ। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে হিজড়ারা এমন আচরণ করে চাঁদা তুলে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তারা শুধুমাত্র দর্শকের ভূমিকা পালন করে থাকেন।
আসল হিজড়ারা জানান, গত কিছু দিন আগে নগরীর শিবগঞ্জ থেকে নকল হিজড়াদের গডফাদার রানা ভুইয়াকে তারা আটক করেন। এরপর সুন্দরী হিজড়ার কাছে অভিযোগ করেন, রানা ভূইয়া আসল হিজড়াদের বিভিন্ন লোভ-লালসা দেখিয়ে তার সাথে কাজ করার অফার দেন। সে হিজড়াদের দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকা উত্তোলন করে এবং ওই টাকা থেকে তাদের বঞ্চিত করছে রানা। বিভিন্নভাবে তারা রানা ভূইয়ার কাছে লক্ষাধিক টাকা পান। এজন্য তারা তাকে আটক করে ন্যায় বিচারের জন্য সুন্দরি হিজড়ার কাছে নিয়ে যান। পরে রানা ভূইয়া সুন্দরী হিজড়ার কোনো কথা না শুনলে সুন্দরী হিজড়া তাকে পুলিশে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
হিজড়ারা জানায়, সিলেটের হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সুন্দরী হিজড়ার ২শ’র উপরে হিজড়া রয়েছে। কিন্তু রানা ভূইয়া একজন হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি করে লাখ পতি হয়ে গেছে। রানা ভূইয়া সিলেট হিজড়া বাউল সংগঠন নাম দিয়ে আসল হিজড়াদের ম্যানেজ করে এই ভূয়া সংগঠনের মাধ্যমে হিজড়াদের দিয়ে বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করে থাকে বলে অভিযোগ করেন।
মেহেদি হিজড়া, রুমন হিজড়া, সুমি হিজড়া, রাজু হিজড়া বলেন, রানা ভূইয়া আমাদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মারধর করে বিয়ে অনুষ্ঠানে পাঠিয়ে টাকা আদায় করতো এখন আমরা টাকা চাইলে সে আমাদের মারধর করে। রানা ভূইয়া নকল হিজড়া তৈরির পেছনে কাজ করছেন, সমাজের ভালো পরিবারের ছেলেদের নিয়ে নকল হিজড়া সাজিয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় নকল হিজড়াদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান মূল হিজড়ারা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd