সিলেট ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০১৮
স্টাফ রিপোর্টার:: সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এবার দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১২৫ ডেসিমেল জায়গার একটি প্রতিবেদন নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
আর এই আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন সহকারী রের্কড কিপার প্রনয় কান্তি ঘোষ। তিনি ঐ প্রতিবেদনটিতে মোটা অংঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাদী বিবাদীদের কাছে একই প্রতিবেদন তিনবার তিন ধরণের কথা লিখে দিয়েছেন।
যার ফলে গত এক সপ্তাহ থেকে সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এ বিষয়ে কয়েকবার বৈঠকও হয়েছে। এতে সমাধান না হওয়ায় প্রণয় একটি রাজনৈতিক দলের সিলেটের সভাপতির দ্বারস্থ হয়েছেন। এ বিষয়টি সুরাহা করার জন্য। আর কোনভাবে যেন তা কোথাও প্রকাশ না পায়।
সে জন্য তিনি বিভিন্নভাবে চালাচ্ছেন লবিং ও তদবীর। এর পূর্বে গত বছরের ৯ মে প্রণয় কান্তি ঘোষ সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিলের বালামবহি পোড়ানো মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরণও করেছিলেন। তবু থেমে নেই প্রণয়ের জালিয়াতি বাণিজ্য।
সিলেট সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস সূত্রে জানায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মামদ পুর মৌজার১২২৯৯/১৯৫৮ নম্বর দলিলের তালুক নং ৫৩২৫ ও ক্রিস্টাল জরিপের দাগ নং ৪৯০ এর ১২৫ ডিসিমেল জায়গার একটি ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছিল দুই পক্ষের মধ্যে। এ নিয়ে ঐ ভূমিটি রেজিস্ট্রি না করার জন্য দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে লিখিত আবেদন করেন ভোক্তভোগি পক্ষ।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ভূমির মালিকানা নির্ধারণ ও বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে রেকর্ড তল্লাশি করে প্রতিবেদন চান দক্ষিন সুরমা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ও ভূমি কর্মকর্তা। ফলে ২০১৭ সালের শেষের দিকে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সহকারী রের্কড কিপার প্রণয় কান্তি ঘোষ।
সে প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন রের্কড কিপার। কিন্তু ঐ প্রতিবেদনের উপর পরবর্তীতে না রাজি প্রদান করা হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় তা তদন্তের করে সঠিক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সিলেট সাব রেজিস্ট্রার অফিসে প্রেরণ করা হয়। সেই প্রতিবেদন পুনরায় প্রণয় কান্তি ঘোষ ৭০ হাজার টাকার নিয়ে না রাজি আবেদনকারীর পক্ষে প্রদান করেন। ঐ প্রতিবেদনে প্রণয় কান্তি ঘোষ সেঃ ( সেটেলমেন্ট) জরিপী উল্লেখ করেন প্রতিবেদনটি মঞ্জুর আহমদের বিপক্ষে প্রদান করেন।
এই প্রতিবেদনের প্ররিপ্রেক্ষিতে আবারও মঞ্জুর আহমদ প্রতিবেদনটি বাতিলের আবেদন করে পুণঃ তদন্ত দাবি করেন। ফলে দক্ষিণ সুরমা ভূমি অফিস থেকে দক্ষিণ সুরমা সাব রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকা সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে রের্কড যাচাই করে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তা প্রেরণের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সহকারী রের্কড কিপার প্রণয় কান্তি ঘোষ কাউকে না জানিয়ে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মঞ্জুর আহমদের বিপক্ষের কাছ থেকে এর কাছ থেকে মোটা অংঙ্কের টাকা নিয়ে তিনি তাতে কেঃ ( ক্রেস্টেল) জরিপ উল্লেখ করে কোন পক্ষকে সামনে না রেখে প্রতিবেদন প্রদান করেন।
এ নিয়ে মঞ্জুর ্আহমদ সহকারী রের্কড কিপারকে তার কক্ষে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। এতে প্রণয় মঞ্জুর আহমদকে হাত পা ধরে প্রণয় বিনয় করে বলেন যে, তার ভূল হয়েছে। তিনি তা ঠিক করে দিবেন। আর এ বিষয়টি যেন কেউ না জানেন। তবে মঞ্জুর আহমদ এ নিয়ে তার ছেলেদের সাথে কথা বলেন।
তিন্রি এক ছেলে সরকার দলীয় একটি সংগঠনের নেতা হওয়ায়, সে তার সভাপতিকে বিষয়টি অবগত করেন। ঐ রাজনৈতিক নেতা প্রণয়কে নিয়ে বসেন এবং স্পষ্ট বলে দিয়েছেন সঠিক ও সত্যভাবে যেন তিনি প্রতিবেদনটি পুনরায় প্রদান করেন। আর ঐ প্রতিবেদনের বাদী-বিবাদীদের কাছ থেকে নেয়া ঘোষের টাকা যেন ফেরত প্রদান করা হয়। প্রণয় তাতে রাজিও হয়েছেন।
এ ব্যাপরে সিলেট সাব রেজিস্ট্রার অফিসের রের্কড কিপার প্রণয় কান্তি ঘোষ জানান,্ তিনটি প্রতিবেদনই তিনি প্রস্তুত করেছেন সঠিক। তবে তার ভূল হয়েছে। আর মানুষ বলতেই ভূল। তা তিনি ঠিক করে দিবেন। তিনি আরো জানান, কিছু টাকা নিয়েছেন মঞ্জুর আহমদের কাছ থেকে। তবে সে গুলোর কোন রিসিট নেই। তা অফিস খরছের টাকা।
ভোক্তভোগী মঞ্জুর আহমদ বলেন, সিলেট সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী রের্কড কিপার প্রণয়কান্তি তার প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি করছেন। তার কারণে আজ তিনির জায়গা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কারণ প্রণয় একই প্রতিবেদন তিনবার তিনভাবে দিয়েছেন। এতে করে তিনি ও তার বিপক্ষের লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এ কান্ড করেছেন।
সর্বশেষ দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার একটি প্রতিবেদনের জন্য আদেশ প্রেরণ করেন। সেই আদেশে তিনি ও তার বিপক্ষ উপস্থিত থেকে বালাম বহি ও রের্কড যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন দেয়ার থা কিন্তু প্রণয় মোটা অংঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রতিবেদন তার বিপক্ষে দিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিবেদন তৈরির সময়ও তাকে জানানো হয়নি। এ নিয়ে তিনি সহ প্রণয় কয়েকবার বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নিয়ে বসেছেন। আর প্রণয় সব কিছ’ স্বীকার করে নিয়েছেন। তাছাড়া বিষয়টি তিনি সমাধান করে দিবেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিলের বালামবহি পোড়ানো মামলায় প্রণয় কান্তি ঘোষ সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সহকারী রেকর্ডকিপার। গত বছরের ৯মে বিকেলে সিলেট রেজিষ্টারী মাঠ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দুই কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছেন।
ঐ বছরের ২৫ এপ্রিল দিবাগত রাতে সিলেট সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিস সংলগ্ন নজির ভেন্ডারে অগ্নিকান্ড ঘটে।এতে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের দলিলের একটি বালামবহিও ভষ্মীভুত হয়। এঘটনায় সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সাব-রেজিষ্ট্রার মো. আবু বকর সিদ্দীক বাদী হয়ে ২৬ এপ্রিল সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার একটি মামলা (নং-৩০(৪)১৭) করেন।
মামলায় সিলেট সাবরেজিষ্টি অফিস সংলগ্ন নজির স্ট্যাম্প ভেন্ডারের স্বত্বাধিকারী নজির আহমদ খান, ম্যানেজার নিজাম আহমেদ মান্না, সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মহাফেজ খানার রেকর্ডকিপার রীনা রাণী রায় ও সহকারী রেকর্ড কিপার প্রণয় কান্তি ঘোষসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করা হয়। মামলার এজারভুক্ত আসামী সহকারী রেকর্ডকিপার প্রণয় কান্তি ঘোষ ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd