মামলার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা নিলেন এসআই

প্রকাশিত: ৯:৩৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৮

মামলার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা নিলেন এসআই

ভুক্তভোগী সাত ব্যক্তির মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, দুজন মুদি দোকানি এবং অন্যদের কেউ ইট সরবরাহকারী, কৃষক, গাড়িচালক ও স্কুলছাত্র।

নগরের কোনাবাড়ীর মধ্য আমবাগের বাংলালিংক টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা ইট সরবরাহকারী মৃত আবেদ আলীর ছেলে জামাল হোসেন (২৯) বলেন, তিনি গত ১৯ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে তাঁর ঘরে ভাত খাচ্ছিলেন। তখন এসআই ইয়াসিন আরাফাত একজন পুলিশ সদস্যসহ ঘরে ঢুকে জামালের মোবাইল ফোনসেট নিয়ে নেন। পরে তাঁকে তাঁদের সঙ্গে থানায় যেতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, তিন-চার বছর আগে তাঁর বাসায় অবৈধ গ্যাস লাইন ছিল। গ্যাস পোড়ানোর বিল বাবদ দুই লাখ টাকা দিতে হবে। না দিলে থানায় নিয়ে মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে আদালতে পাঠানো হবে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে স্বজনদের সামনে ইয়াসিন ও তাঁর সঙ্গী অশ্লীল গালাগাল এবং মারধর শুরু করেন। বাধ্য হয়ে জামালের বৃদ্ধ মা ধার করে ২৮ হাজার টাকা দিলে রাত ১১টার দিকে তাঁরা চলে যান। যাওয়ার আগে এ কথা প্রকাশ করলে নাশকতার পুরনো মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখান।

একই এলাকার মৃত নুরু সরকারের ছেলে প্রাইভেট কারচালক সানোয়ার হোসেন জানান, ১৯ অক্টোবর রাত সোয়া ১১টার দিকে এসআই ইয়াসিনসহ তিনজন (দুজন পুলিশ ও একজন আইনজীবী পরিচয় দেন) তাঁর ঘরে হানা দেন। তখন সানোয়ার খেতে বসেছিলেন। একই ধরনের অভিযোগ তুলে তাঁর কাছেও দুই লাখ টাকা চান ইয়াসিন। অপারগতা প্রকাশ করলে দরজায় লাথি ও অশ্লীল গালাগাল শুরু করেন। শব্দে সানোয়ারের মা, স্ত্রী ও সন্তান উঠে পড়ে। তাদের সামনেই তাঁকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন ইয়াসিন ও সঙ্গে থাকা পুলিশ কনস্টেবল। ধার করে ৫০ হাজার টাকা দিলে রাত সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা না প্রকাশের জন্য শাসিয়ে চলে যান। ১৮ ও ১৯ অক্টোবর রাতে ওই ধরনের হুমকি দিয়ে একই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মতিন সরকারের ছেলে বাতেন সরকারের (৪০) কাছ থেকে ৫০ হাজার, রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে কৃষক রাইজুদ্দিনের (৪৮) কাছ থেকে ৩০ হাজার, ইন্নছ আলীর ছেলে মুদি দোকানি রাশেদ মিয়ার (২৬) কাছ থেকে ১৫ হাজার, সবুর আলীর ছেলে কৃষক আলাল মিয়ার (৪৮) কাছ থেকে পাঁচ হাজার এবং মৃত নাসির উদ্দিনের ছেলে স্কুলছাত্র আদিল হোসেনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেন ইয়াসিন।

আদিল হোসেন বলে, তার বাড়িতে কোনো দিন অবৈধ চুলা জ্বলেনি। বৈধ চুলার কাগজপত্র দেখাতে চাইলেও এসআই ইয়াসিন কোনো কথা শোনেননি। উল্টো তাকে ও তাঁর বড় বোনকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। ঘটনাটি আদিল প্রতিবেশী মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক শেখ আক্কাসকে জানান। পরে তিনি ২৫ হাজার টাকায় ফয়সালা করে দেন। ওই রাতে ১০ হাজার, এক দিন পর ১৫ হাজার টাকা শেখ আক্কাসের ভাতিজার মাধ্যমে এসআইকে পৌঁছে দেয় আদিল।

আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আক্কাস বলেন, ‘কিছুদিন আগে আদিলের বাবা মারা গেছেন এবং ওরা কোনো অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করেনি। তাই তাকে (আদিল) হয়রানি না করতে এসআইকে বলেছিলাম। টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই।’

জানতে চাইলে এসআই ইয়াসিন আরাফাত প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেন। তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরলে বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দেন। সবার টাকা ফেরত দেব।’

এ বিষয়ে জানতে কোনাবাড়ী থানায় গিয়ে ওসি এমদাদ হোসেনকে পাওয়া যায়নি। পরিদর্শক (অপারেশন) মো. হাসনাত জানান, ওই ধরনের কোনো অভিযোগ তাঁদের কাছে কেউ করেনি। হুমকি দিয়ে টাকা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2018
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..