সিলেটে কারাগারের জায়গায় বঙ্গবন্ধুর নামে উদ্যান করার দাবি

প্রকাশিত: ১:২০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮

সিলেটে কারাগারের জায়গায় বঙ্গবন্ধুর নামে উদ্যান করার দাবি

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থানান্তরিত জায়গায় উদ্যান-্উদ্যোগ বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার প্রতিনিধিত্বশীল ব্যাক্তিবর্গকে নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার পক্ষ থেকে শুক্রবার বিকেল চার ঘটিকায় নগরীর একটি অভ্যিাত হোটেলে আয়োজন করা হয় গোলটেবিল বৈঠক। এতে উদ্যান উদ্যোগ বিষয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার সহ-সভাপতি ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্টার জামিল আহমদ চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকের মুখ্য আলোচক ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ-এর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন (বাপা), সিলেট শাখার সহ-সভাপতি ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ নাজিয়া চৌধুরী। শুরুতেই আলোচ্য বিষয়ে বাপা’র পর্যবেক্ষন উপস্থাপন করেন (বাপা), সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম।

বাপা’র পর্যবেক্ষনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শহর সিলেট।  ইতিহাসবিদদের মতে কমপক্ষে হাজার বছরের  ইতিহাস রয়েছে এ শহরের।  ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করা সিলেট সিটি কর্পোরেশন-এর আয়তন নিঃসন্দেহে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।  জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক।  পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখানকার নগরায়ন দ্রুত বেড়ে চলেছে। ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যার দিক দিয়ে সিলেট সারা দেশের শহরগুলোর মধ্যে ১৩তম স্থানে থাকলেও বর্তমানে আছে পঞ্চম স্থানে। কিন্তু নগরী সম্প্রসারিত হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে । প্রবাসী অধ্যুষিত এই সিলেটে দেশের ধনাঢ্য নাগরিকদের আধিক্য থাকলেও বিনোদনের জন্য পার্ক-উদ্যান ও খেলার মাঠের রয়েছে অপর্যাপ্ততা। নানান নাগরিক সমস্যার মধ্যেও চলমান সময়ে পার্ক-উদ্যান ও খেলার মাঠের চাহিদা সর্বমহল গুরুত্বের সাথে অনুভব করছেন। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে আবুল মাল আব্দুল মুহিত নির্বাচনী ইশতেহারে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার শরতলীতে স্থানান্তর করে উক্ত স্থানে একটি উন্মুক্ত উদ্যান উপহার দেয়ার ঘোষণা প্রদান করেন।

Manual4 Ad Code

উল্লেখ্য যে, সিলেট নগরীর ধোপাদীঘির পাড়ে ২৪. ৬৭ একর ভূমির উপর ১৭৮৯ সালে তৈরি করা হয়েছিল এই কারাগার। প্রায় দুইশ বছর পূর্বের বাস্তবতায় নির্মান করা এই কারাগার বন্দিদের আধিক্যে ও নগর জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করায় স্থানান্তর করা জরুরী হয়ে পরে। বিভিন্ন মহল থেকে কারাগার স্থানান্তরের দাবিও উঠতে থাকে। এ অবস্থায় ২০০৮ সালে আলোকিত সিলেটের স্বপ্ন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে আবুল মাল আব্দুল মুহিত কারাগার স্থানান্তর করে উক্ত স্থানকে উন্মুখ উদ্যান করার প্রতিশ্রুতি দিলে সর্বমহলে তা সমাদৃত হয়। সেই নির্বাচনে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে পরাজিত করেন। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করলে সিলেট-১ আসনের সাংসদ আবুল মাল আব্দুল মুহিত’কে বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। অদ্যাবধি তিনি এই দায়িত্বে আছেন। ২০১০ সালে একনেকে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তর প্রকল্প অনুমোদন পায়। এরই পরিপেক্ষিতে ২০১১ সালের ১১ই আগস্ট তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জালালাবাদ থানাধীন বাদাঘাটে কারাগারের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এক বছর পর ২০১২ সালের ১২ই জুলাই শুরু হয় নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজ শুরু হতেই সরকারের প্রথম মেয়াদ শেষ হয় । দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে কিন্তু এখনো কারাগার নির্মাণ সমাপ্ত হয়নি। শুরু হয়নি বন্দি স্থানান্তর। পাশাপাশি প্রতিশ্রুত উন্মুক্ত উদ্যান নির্মানের জন্য কোন প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি বা সে সংক্রান্ত কোন বাজেট বরাদ্ধ হওয়ার কথাও জানা যায়নি । এমতাবস্থায় জেলা কারাগারের স্থানান্তরিত স্থানে একটি উন্মুক্ত উদ্যান বাস্তবায়নের স্বপ্ন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদেও পূরণ না হওয়ার আশংকা থাকছে। তাই সরকারের প্রতিশ্রুত উদ্যান-উদ্যোগ বাস্তবায়নে সিলেটের নাগরিকদের সম্মিলিত ঐক্য ও নজরদারী প্রয়োজন।

সিলেটের পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে কাজ করে যাওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মনে করে এই মূহুর্তে সিলেট নগরের মানুষের প্রধান চাওয়া নগরের কেন্দ্রস্থলে একটি উন্মুক্ত উদ্যান ।  বাপা মনে করে উন্মুক্ত উদ্যান প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অগ্রাধিকার লাভ করতে পারলেই সিলেটবাসীর প্রত্যাশা পূরন হবে।

গোলটেবিল বৈঠকের মুখ্য আলোচক সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ-এর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বাপা’র পর্যবেক্ষণ ও উৎকন্ঠার বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে বলেন, সিলেট কেন্দ্রিয় কারাগার স্থানান্তর প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত শুরু হবে  এ নিয়ে আশংকার কিছু নেই। কিন্তু স্থানান্তরিত কারাগারের জায়গায় অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত উদ্যান স্থাপনের বিষয়ে এখনো প্রকল্প প্রনয়ন হয়নি। এ অবস্থায় উদ্যান উদ্যোগ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথে বাপা’র নেতৃত্বে দেখা করতে পারি।  বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আরো বলেন, সিলেট জেলা কারাগারের সাথে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িত আছে।  ১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করার পর জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি দেশের বিভিন্নস্থানে সফর শুরু করেন। ওই সময়ে তিনি সিলেট সফরে এলে তৎকালীন সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখে। কারাগারের যে কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল সেই কক্ষটির নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম’। এই কক্ষটি বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানেই বসে বইপত্র পড়েন কারাবন্দিরা। তবে কক্ষটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম’ হলেও এখানে বঙ্গবন্ধুর কোনও স্মতিচিহ্ন বা ইতিহাস কিছুই রাখা নেই।

Manual5 Ad Code

তিনি আরো বলেন, দুঃখের সাথে বলতে হয় সিলেটে বঙ্গবন্ধুর নামে কোন কিছুই আমরা নির্মাণ করতে পারিনি।  তাই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িত এই কারাগার কক্ষটিকে মিউজিয়াম রেখে প্রস্তাবিত স্বপ্নের সেই উদ্যানকে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা যেতে পারে।

সাবেক সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক বলেন, সিলেটের মানুষ যা প্রত্যাশা করে তা আদায় করে নেয়। আর গণমানুষের যৌক্তিক যে কোন দাবি-দাওয়ার সাথে সিলেটের আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আছে । বঙ্গবন্ধুর নামেই কারাগারের স্থানে উন্মুক্ত উদ্যান হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেট-এর সভাপতি সাংবাদিক আজিজ আহমেদ সেলিম বলেন, দেশের প্রধান নগর সমুহে মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার মত পার্ক বা উদ্যান রয়েছে । কিন্তু সিলেটে একটি নান্দলিক উদ্যানের অভাব।

Manual1 Ad Code

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলার সাাবেক সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য বলেন, সরকারের শেষ সময়ের জটিল পরিস্থিতিকালে কারাগারের বন্দি স্থানান্তর স্থগিত রাখাই উত্তম । পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুন্য কারাগার এলাকা আমলাতান্ত্রিক চক্রান্তে বেহাত হতে পারে ।

গোলটেবিলে বৈঠকে উপস্থিত সকল বক্তাই বঙ্গবন্ধুর নামে এই উদ্যানের নামকরণ সমর্থন করে অতি দ্রুত জেলা কারাগারের বন্দী স্থানান্তর শুরু করার মতামত ব্যাক্ত করেন।  পাশাপাশি উদ্যান উদ্যোগ বাস্তবায়নে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান-এর নেতৃত্বে একটি নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

এই কমিটি জেলা কারাগারের প্রকৃত ভুমির পরিমাণ সম্পর্কে সুস্পস্ট ধারণা নিয়ে নগর পরিকল্পনাবীদ ও উদ্যান তত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে বঙ্গবন্ধু উন্মুক্ত উদ্যান বাস্তবায়নে কাজ করবে।

গোলটেবিলে বৈঠকে  অন্যান্যের মধ্যে আরো মতামত ব্যাক্ত করেন ব্লাস্ট সিলেটের কো-অর্ডিনেটর ইরফনুজ্জামান চৌধুরী, সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ, সাম্যবাদী দল সিলেট শাখার সম্পাদক ধীরেন সিংহ, সিলেট জেলা বারের সাধারন সম্পাদক মো. আব্দুল কুদ্দুস, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শাহনুর, নাগরিক মৈত্রী আহবায়ক সমর বিজয় সী শেখর, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, ইমজা সিলেটের সভাপতি আশরাফুল কবীর, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. ফয়জুল আনোয়ার, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সুজাত আলী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট বন ও পরিবেশ কমিটির সদস্য মো. নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য গোলাম সোবহান চৌধুরী দিপন, দৈনিক সিলেট মিররের বার্তা সম্পাদক মুক্তাদির আহমদ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহকারি প্রক্টর আব্বাস উদ্দিন, লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাশ, জাগো নিউজের সিলেট প্রতিনিধি ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সিলেট শাখার চেয়ারম্যান এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী প্রমুখ।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..