সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের ভেতরেই পাওয়া যায় মাদক, চলে জুয়া

প্রকাশিত: ৪:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৮

সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের ভেতরেই পাওয়া যায় মাদক, চলে জুয়া

Manual3 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ শ্লোগানধারণকারী নিরাপদ সরকারি হেফজতখানা হল কারাগার। সেখানে রাখা হয় মামলায় জামিন না পাওয়া আসামী, কয়েদি ও বিভিন্ন অপরাধীদের। কিন্তু সেই নিরাপদস্থল সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার হয়ে উঠেছে মাদকসেবীদের নিরাপদ কেন্দ্র।

Manual4 Ad Code

টাকা দিলেই সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে অবাধে পাওয়া যায় মরণ নেশার মাদক ইয়াবা, গাঁজা ও মদ। মাদক সেবনের পাশাপাশি কারাগারের ভেতর জুয়া খেলাও হয়। জুয়া খেলায় সহায়তা ও মাদক সরবরাহের সাথে জেলা কারাগারের লোকজনই জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ কারাগারে মাদক সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও এতদিন কেউ মুখ খুলেনি।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের ভেতরের এসব অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন একাধিক জেল ফেরত ব্যক্তি। কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতির কাহিনি জানিয়েছেন এবং ঘটনার প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

অভিযোগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কারাগার এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টাকার বিনিময়ে মাদকসেবীদের সরবরাহ করা হয় মদ, গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবা ট্যাবলেট। প্রতিদিনই অন্তত ১০০ থেকে দেড়শ’ পিস ইয়াবা, শতাধিক পুরিয়া গাঁজা ও মদ বিক্রি হয় কারাগারে। বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে আটক থাকা লোকজন হতাশা ও অবসাদে কারা অভ্যন্তরেই বসে মাদক গ্রহণ করছেন, আবার অনেকেই টাকা দিয়ে জুয়া খেলছেন। মাদকসেবীদের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারাগারে গিয়ে মাদকে অনভ্যস্ত ব্যক্তিও মাদকাসক্ত হয়ে বেরোচ্ছেন।

Manual4 Ad Code

তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) আবুল কালাম আজাদ।

কারাগার থেকে বের হওয়া একাধিক লোক জানিয়েছেন, বাইর থেকে মদ, গাঁজা ও ইয়াবা কারাগারে নেন জেল সুপারের গাড়িচালক শাহাব উদ্দিন ও কারারক্ষী জামাল মিয়া। ভেতরে বিক্রির ব্যবস্থা করেন কয়েদী নানু দেওয়ানসহ আরো কয়েকজন। প্রতি পিস ইয়াবা ছোট ২৫০ টাকা, বড় ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি পুরিয়া গাঁজা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। আগে থেকেই মদ, গাঁজা সেবন চললেও গত এক বছর ধরে যুক্ত হয়েছে ইয়াবা। মাদক সেবনের পাশাপাশি কারাগারের ভেতর জুয়া খেলাও চলে।

Manual6 Ad Code

সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার ফেরত শহরের জামতলার বাসিন্দা জেলা শ্রমিক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামারুল ইসলাম সাম দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর অফিসে এসে বলেন,‘সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার এখন অনিয়ম-দুর্নীতি ও মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়ে গেছে। এসব কাজের সাথে জেলা কারাগারের কারারক্ষী, জেল সুপারের গাড়িচালক ও কয়েদিরা জড়িত। জেল সুপারের গাড়িচালক সাহাব উদ্দিন বাহির থেকে মাদক সংগ্রহ করে ও কারারক্ষী জালাল এসব ভেতরে নেয়। পরে কয়েদি নান্নু মিয়া (নানু দেওয়ান) এর নেতৃত্বে এসব মাদক বিক্রি করা হয়। বিষয়টির সাথে কারা কর্তৃপক্ষ জড়িত, না হলে এসব কাজ কিভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আমি বিষয়টি সিলেটের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মোবাইল ফোনে অবগত করেছি। তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ’

ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন,‘সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার জঘন্য হয়ে উঠেছে। কারারক্ষীদের সহায়তায় কারাগারে অবাধে মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা পাওয়া যায়, প্রকাশ্যেই চলে জুয়া খেলা। কারাগারে বিদেশী মদও পাওয়া যায়। এসবের সাথে জেল কর্তৃপক্ষ জড়িত, না হলে কিভাবে অবাধে চলছে এসব কাজ। সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের নেতারা প্রতিটি ওয়ার্ডে এসব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।’
নুরুল হক আরও বলেন,‘গত মে মাসের ২০ তারিখ আমি সুনামগঞ্জ কারাগারে ঢুকেছিলাম এবং তিন দিন ছিলাম। এরপর আমাকে সিলেট কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি জানান, কারাগারের হাসপাতাল ওয়ার্ডে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাগলার ভুট্টু নামের এক কয়েদি এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুট্টু মিয়ার কয়েদি নম্বর-৬৭০৫/এ, হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ভুট্টু মিয়া সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রবেশ করেছে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে, তার সাজার মেয়াদ শেষ হবে ২১ জানুয়ারি ২০৩৪ সালে।

Manual7 Ad Code

জেলা কারাগার পরিদর্শক জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ বলেন,‘কারাগার নিরাপদ হেফাজতখানা, সেখানেই এখন মাদক গ্রহণ করা যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। স্পর্শকাতর জায়গায় এমন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে।’

সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্তা¡বধায়ক (জেল সুপার) আবুল কালাম আজাদ বলেন,‘আমাদের কারাগার নিয়ে এসব অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের সব বন্দীরা ভাল আছেন। কারাগারে কোনো ধরনের মাদক নেই, জুয়া খেলা হয় না। কারাগারের কেউ মাদক সরবরাহ বা মাদক সেবনে সহযোগিতা করে না। কারাগার খুব সুন্দরভাবে চলছে। যারা এখন সাংবাদিকদের কাছে নানা অভিযোগ করছেন, তারা আমার কাছে অভিযোগ জানায় নি কেন ? ’

জেলা কারাগারের স্থানীয় কর্র্তৃপক্ষ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তথা জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম ছুটিতে আছেন। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. এমরান হোসেন দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরকে বলেন,‘ জেলা কারাগারে যদি মাদকসেবন ও মাদক সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে প্রশাসনিকভাবে তদন্ত করা হবে। তদন্তে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেব আমরা।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..