জগন্নাথপুরে আঞ্চলিক মহা-সড়কে রাস্তার নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়ম!

প্রকাশিত: ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০১৮

জগন্নাথপুরে আঞ্চলিক মহা-সড়কে রাস্তার নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়ম!

Manual1 Ad Code

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক মহা-সড়কের নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এছাড়া বিদ্যমান সড়ক সরানো নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

Manual3 Ad Code

জানা গেছে, প্রায় ২ মাস যাবৎ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জ-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডাবর থেকে জগন্নাথপুর সদর পর্যন্ত সড়কের পুনঃনির্মান কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সুনামগঞ্জের অধীনে সড়কের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এর মধ্যে জগন্নাথপুর পৌর শহরের ভেতরে দেড় কিলোমিটার সড়কের দেড় ফুট উচ্চতার আরসিসি কাজ চলছে। এই কাজেও ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। সড়কে নীচে প্রথম দিকে ৮ ইঞ্চি বালু ও এর উপর ৫ ইঞ্চি আরসিসি ঢালাই, পরে ১নং রডের উপর আরও ১২ ইঞ্চি মোট ১৭ ইঞ্চি ১নং কাটা পাথর দিয়ে আরসিসি ঢালাইয়ের কথা থাকলেও এখানে ৮ ইঞ্চি বালু না দিয়ে দায়সারা ভাবে নীচে বালু ফেলা হয়।

অন্য দিকে নিচের অংশে ৫ ইঞ্চি ঢালাইয়ের পরিবর্তে ৪ ইঞ্চি ও উপরের অংশে ১২ ইঞ্চির পরিবর্তে ১১ ইঞ্চি ঢালাই ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করে রডের পরিমান কম দেওয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। সুনামগঞ্জ-ঢাকা আঞ্চলিক মহা-সড়কটি ৬০ থেকে ৯০ ফুট চওড়া (প্রস্থ) থাকলেও সড়কটি রহস্যজনক কারনে একেবারে সরু করে ফেলা হচ্ছে। বর্তমানে ২৪ ফুট চওড়া (প্রস্থ) দিয়ে সড়কটি পুনঃনির্মান করা হচ্ছে। অথচ প্রায় ১ যুগ আগে এই আঞ্চলিক মহা-সড়কটি প্রায় ৪০ ফুট চওড়া (প্রস্থ) করে নির্মান করা হয়েছিল।

জানা গেছে, প্রতিটি আঞ্চলিক মহা-সড়ক নুন্যতম ৪৫ ফুট চওড়া (প্রস্থ) থাকার কথা। সড়কটির নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এলাকাবাসী তুললেও সড়কটি নির্মানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীদের নিয়মিত মনিটরিং ও নিয়মিত সরেজমিন তদারকি না থাকায় টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফ্রিস্টাইলে দায়সারাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী এই গুরুত্বপুর্ণ সড়কটি পুনঃনির্মানে নিম্নমানের পাথর সহ নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। সওজের প্রকৌশলীদের নিয়মিত তদারকি না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামত কাজ করছেন। আরসিসি ঢালাইয়ে পৌনে ১ ফুট পরপর রড বাধাইয়ের কথা থাকলেও ১ ফুট পরপর রড বাধাই করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

অন্যদিকে ঢালাইয়ের পর কিউরিং করা বাধ্যতামূলক অথ্যাৎ কমপক্ষে ১ সপ্তাহ পানি আটকিয়ে রাখার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। সড়কের ফিনিশিং-এ অগোছালো ও এলোমেলোভাবে করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

আরও অভিযোগ উঠেছে, জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্ট থেকে রাণীগঞ্জ রোডের নির্মাণাধীন সড়কটি পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৯ ফুট সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়েছে, পূর্ব দিকের দোকানপাট।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ২৪ ফুট প্রস্থের সড়কটি ১২ ফুট করে দুইভাগে নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে পশ্চিম দিকের ১২ ফুট প্রস্থের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সড়কের পশ্চিম দিকে রয়েছে সরকারি জায়গায় নির্মিত দোকানপাট ও খালি জায়গা। আবার পূর্ব দিকে রয়েছে মালিকানা জায়গায় বড়-বড় মার্কেট ও দোকানপাট। সাবেক সড়কের প্রায় ৬ ফুট ও ড্রেন ৩ ফুটসহ পশ্চিম দিক থেকে মোট ৯ ফুট সড়ক বাদ দিয়ে পূর্ব দিকে সরিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়কটি পূর্বদিকে সরিয়ে দেয়ার কারণে বাকি ১২ ফুট সড়ক নির্মাণকালে সড়কের পূর্ব দিকে থাকা মালিকানা জায়গায় অবস্থিত কবরস্থান, বিদ্যুতের লাইন ও মার্কেট এবং দোকানপাট ভাঙনের কবলে পড়বে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী মহল।

এ ব্যাপারে পূর্ব প্রান্তের আল-আরাফাহ মার্কেটের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল জব্বার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, পশ্চিম প্রান্তের ১৮ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা তুলে জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সড়কের কাজের দায়িত্ব প্রাপ্তদের ম্যানেজ করে রাস্তাটি পূর্বদিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সাবেক সড়কের উপর দিয়ে বর্তমান নতুন সড়ক হওয়ার কথা থাকলেও তা মানছেন না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখে সাবেক সড়কের উপর দিয়ে বর্তমান সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে বড় ধরণের ক্ষতির কবল থেকে ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে তিনি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Manual6 Ad Code

এ ব্যাপারে জানতে সড়কে কাজ পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম বিল্ডার্স লিমিটের সাইড ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, এখানে সড়কটি ২৪ ফুট প্রস্থ হবে। পরে সড়কের উভয় পাশে আরো ৩ ফুট করে ড্রেন নির্মাণ করা হবে।

Manual5 Ad Code

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়কটি সরে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছ্ইু করার নেই। সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ম্যাজারমেন্ট অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

এ বিষয়ে জানতে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। পরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে আলাপ হলে তিনি এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রাক্কলন অনুযায়ী সড়কটির নির্মান কাজ করা হচ্ছে। এখানে কোন অনিয়ম করা হচ্ছে না। আমরা সবসময় মনিটরিং ও তদারকি করছি এবং উন্নতমানের সামগ্রী দিয়েই সড়কের নির্মান কাজ করা হচ্ছে এবং পূর্বপ্রান্তের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..