পাগলির প্রেমে পাগলা : অবশেষে বিয়ে

প্রকাশিত: ১১:০৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০১৮

পাগলির প্রেমে পাগলা : অবশেষে বিয়ে

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কিছুদিন আগেও সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করতো খলিল। জ্বালানি কাঠ বিক্রি করতো সে। এতে ভালোই আয়-রোজগার হতো তার। এরপর বিয়ে করে খলিল। বিয়ের পর দুই ছেলে আর দুই মেয়ের জন্ম হয়। সবাইকে নিয়েই সুন্দর জীবন চলছিল তার। কিন্তু হঠাৎ তার শরীরে বাধা এক রোগে কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যায়। খলিলের সব স্বপ্নই শেষ করে দেয় শরীরের অক্ষমতা। হঠাৎ তার শরীরের হাত-পা অবশ হয়ে যায়। তিনি আর কাজ কর্ম করতে পারেন না। এমন অবস্থা দেখে বাড়িতে থাকা সব জিনিসপত্র ও সন্তানদের নিয়ে চলে যায় তার স্ত্রী।

সেই থেকে বিকল দেহ নিয়ে পথের ধারেই পড়ে থাকতেন খলিল। রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে যাত্রী ছাউনিতেই ছিল তার বসবাসের স্থান। সেখানেই পড়ে থাকতেন তিনি রাত-দিন। মানুষের দিয়ে যাওয়া খাদ্য-অখাদ্য খেয়েই বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।

প্রায় পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করে একটি মেয়ে তার পাশে গিয়ে বসে থাকতেন। কোনো কথা বলতেন না। মেয়েটাকে দেখে মনে হয়েছিল সে মানসিকভাবে অসুস্থ। তবুও মেয়ে মানুষ, তার পাশে গিয়ে বসে থাকাটা অন্য মানুষের পক্ষে ভালো নজরে দেখার মতো না বলেই খলিল মেয়েটিকে বারবার চলে যেতে বলে। অনেক সময় তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য তার শরীরে আঘাতও করেছে খলিল। কিন্তু মেয়েটি কোথাও যায়নি। নিজের পরিবার-পরিজন সম্পর্কেও কিছুই জানে না মেয়েটি। ফলে তারও যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না। তাদের এমন পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় লোকজন পরামর্শ দেয় মেয়েটিকে বিয়ে করে নিতে। এরপরই খলিল বিয়ে করে পারভিন নামের ওই মেয়েকে। যদিও এ নামটি খলিলের দেয়া। মেয়েটি তার নিজের নামটিও জানতো না।

এভাবেই তৈরি হয় খলিল-পারভিনের এক প্রেমের গল্প। অক্ষম খলিল কিছুই করতে পারে না বিকল শরীর নিয়ে। অন্যদিকে পারভিন মানসিকভাবে অসুস্থ বলে কোনো কাজ করতে পারে না। তাই দুই জনে মিলেই ভিক্ষা করে। ভিক্ষা করে যে টাকা উপার্জন হয় তাই দিয়ে চলে তাদের সাজানো সংসার।

খলিলের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় বেরিয়ে আসে তার জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তবিক কিছু ঘটনা। পুরনো স্মৃতির অ্যালবাম থেকে স্মৃতি যদিও মুছে ফেলা যায় না, তবুও মানুষ ভুলে যেতে চায়। মানুষ ভালোবাসতে চায়, নতুন করে ভালোবাসতে চায়, বেঁচে থাকার জন্যে ভালোবাসতে চায়।’

খলিল বলেন, আমার শরীর যখন ভালো ছিল, তখন আমি কাজ করে ভালো টাকা উপার্জন করতাম। স্ত্রী-সন্তানও ছিল আমার। কিন্তু আমার শরীর যখন খারাপ হয়ে যায় তখন স্ত্রী তার সন্তানদেরকে নিয়ে চলে যায়। আমি পথের ধারে পড়ে থাকি। কিন্তু আল্লাহ আমাকে এই পাগলি মেয়েটাকে কপালে জুটিয়ে দিলো। মানসিকভাবে সে অসুস্থ কিন্তু আমার জন্যে ভালো। সে আমার জন্য যেভাবে কাজ করে, তাকে ভালো না বেসে আমি পারলাম না।

তিনি আরও বলেন, তার যখন মাথার সমস্যাটি বেড়ে যায় তখন সে আমাকেও মারে, তার মনে যা চাই সে তাই করে। কিন্তু যখন ভালো থাকে সে আমাকে গোসল করিয়ে দেয়, ভাত রান্না করে খাওয়ায়, একজন মানুষের দেয়া আমার একটি ভ্যান গাড়ি আছে সেটা দিয়ে বেড়াতে নিয়ে যায়। আবার দুজনে মিলে ভিক্ষাও করতে যাই।

পারভিন তার নিজের জীবন সম্পর্কে কিছুই জানে না। শুধুই খলিল তার স্বামী এটা ভালো করেই জানে সে। শুধুই খলিলকে ভালোবাসে এটাই তার মুখে ছোট্ট করে শোনা যায়।

রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে সরকারি জায়গায় এ দম্পতি ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে বাস করে। কোনো সন্তান নেই তাদের। তবে ভালোবাসার যেন কমতিও নেই দুই জনের মধ্যে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..