সুনামগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করায় ফের তোপের মুখে এমপি রতন

প্রকাশিত: ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০১৮

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্টান থেকে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করায় ফের সমালোচনা ও শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়লেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের আওয়াসীলীগের দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি।’ ধর্মপাশা জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সোমবার লাঞ্চিত করার পর পরই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিকী প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করেন।’ এ ঘটনার পর অবশ্য সাংসদ রতন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।’

 

ধর্মপাশা জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় উপজেলা সদরের জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্টানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়ার পরপরই প্রকাশ্যে ন্যাক্কার জনক ভাবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেকে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করেন এমপি রতন।

এ ঘটনার পরপরই ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবিভাবকসহ এলাকার সর্বস্তরের লোকজন এমনকি আওয়ামীলীগ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। পরে এরই প্রতিবাদে ওই দিন দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের দুই পাশে প্রায় ঘন্টাব্যাপী দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষক/শিক্ষার্থীরা এমপি রতনের এমন বর্বর অসদাচরণে বিরুদ্ধে প্রতিকী প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করেন।

উল্ল্যেখ যে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকেই ধর্মপাশা জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেন উপজেলা প্রশাসন। উক্ত অনুষ্টানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি। অনুষ্টান চলাকালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা পর্ব শেষে এমপি রতন জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক খানকে ডেকে এনে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে প্রকাশ্যে উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধাগণ , বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/শিক্ষার্থী , দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারন লোকজনের সামে অকথ্য অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করার পরও ওই প্রধান শিক্ষকের ফের দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন । এমপি রতনের এমন বর্বর আচরণের ঘটনা এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

 

 

ধর্মপাশা জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের লাঞ্চনার শিকার প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক খাঁন মঙ্গলবার বলেন, আমাদের ওই বিদ্যালয়টি উপজেলায় ফলাফলের দিক দিয়ে বরাবরই শীর্ষে অবস্থান করায় সরকারী তরফ থেকে বিদ্যালয়টিকে ২০১৪ সালে সরকারী করণের ঘোষণা দেয়া হয়।’ কিন্তু সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি এ বিদ্যালয়টিকে সরকারী করণ না করার পক্ষে অবস্থান নেন এবং তাঁর নিজ এলাকায় অবস্থিত অন্য একটি বিদ্যালয়কে সরকারী করণের জন্য ডিও লেটার প্রদান করলে ওই ডিও লেটারটিকে চেলেঞ্জ করে আব্দুল মন্নাফ নামে আমাদের বিদ্যালয়ের এক ছাত্র অভিভাবক হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। মুলত এরপর থেকেই এমপি রতন আমি এমনকি আমার বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির লোকজন সহ বিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকান্ডের প্রতি বৈরী আচরন করে আসছেন। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, আমার বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীর দাবির প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠের এক কোণে ক্যান্টিন নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং ওই ক্যান্টিনটি নির্মাণ কাজে তিনি সোমবার বাধা প্রদান করার পাশাপাশী আমাকে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেও ক্যান্ত না হয়ে আমাকে দেখে নেয়ারও হুমকি প্রদান করেন এমপি রতন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি আলমগীর কবীর বলেন, এমপি রতন সোমবার এমন একটি অনুষ্টান থেকে ডেকে এনে উপজেলার সর্ব বৃহৎ একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধানকে এভাবে লাঞ্চিত করাটা অত্যন্ত দুঃখজনক, অনতিবিলম্বে এটি সুরাহা করা না হলে পরবর্তীতে এ নিয়ে আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ফখরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উপজেলার স্বনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধানকে একজন সাংসদ এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, এর র্তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপির নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন. আমি কী পাগল? প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করব, আমি শুধু ওই প্রধান শিক্ষককে ডেকে এনে শুধু বিদ্যালয়ের মাঠটি নষ্ট করে কেন্টিনটি নির্মাণ না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি, প্রয়োজন হলে বিষয়টি স্থানীয় ইউএনওকে জিজ্ঞেস করারও পরামর্শ দেন সাংসদ রতন এমপি।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2018
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..