সিলেট ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০১৮
জাহেদ আহমদ :: নির্বাচন নিয়ে নগরীর সর্বত্র এখন বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ। নির্বাচন এলে যেমনটা দেখা যায় প্রার্থী বা জনপ্রতিনিধিদের সাথে ভোটার বা জনগণের কাছাকাছি সম্পর্কের সৃষ্টি হওয়া। আর দৃশ্য এখন নগরীর পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে চায়ের টেবিল পর্যন্ত। কারণ ঘনিয়ে এসেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। নির্বাচনের দিনক্ষণও গনণা শুরু হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত পরিষদের পূর্ন হবে পাঁচ বছর মেয়াদ। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। স্থানীয় সরকার সিটি কর্পোরেশন আইনানুযায়ী পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে যে-কোনো সময়ের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আর এ সময়ের মধ্যেই সিলেট সিটি নির্বাচন আয়োজন করবে ইসি। আগামী এপ্রিলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হবে ৪ মে এর পর ১৭ মে থেকে শুরু হবে রমজান মাস। এ সব বিষয় সামনে রেখে আগামী জুলাইয়ে এ সিটি নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য রয়েছে ইসির। ইতোমধ্যে জুলাইতে দেশের পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম নুরুল হুদা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন যাত্রা শুরু করে ২০০১ সালের ৩১ জুলাই। তবে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। আর সর্বশেষ সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন।
এ বছর চতুর্থবারের মতো সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে সিসিকের নির্বাচন। এখনো তফশিল ঘোষণা না হলেও দীর্ঘ হচ্ছে প্রার্থীর তালিকা।
এ দিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার বছর দেড় আগ থেকেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য মেয়রসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নির্বাচনী মাঠে মনোনয়ন দৌড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীতার ক্ষেত্রে শক্ত প্রতিপ্রন্দ্বিতার সৃষ্টি হচ্ছে। মনোনয়ন দৌড়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলেই শতভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে মেয়র পদে এখনো মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারেননি বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কোনো প্রার্থীই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শরীক দলগুলোও নিজ নিজ দল থেকে প্রার্থী দিচ্ছে। তারা বলছেন জোটের ঐক্য জাতীয় নির্বাচনে। স্থানীয় নির্বাচনে নয়। এ কারণেই কেন্দ্রের নির্দেশনানুযায়ী প্রায় সকল দলেই প্রার্থীতা ঘোষণা চুড়ান্ত পর্যায়ে।
দলীয় সূত্রে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে রয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। মনোনয়ন প্রত্যাশায় আছেন অর্থমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন হিসেবে পরিচিত ক্রিড়া সংগঠক, বাফুফের সদস্য মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী কয়েছ।
এ দুটি দল ছাড়াও এবার নির্বাচনে ইসলামী ও বাম দলগুলো মেয়র প্রার্থী দিতে পারে।
ইতোমধ্যে জামায়াত কেন্দ্রের নির্দেশে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত সিটি নির্বাচনে জামায়াতের কোনো প্রার্থী ছিল না। বিশেষ কারণে বিএনপি মনোনীত আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থনে কাজ করেছিল বলে দাবি দলটির। এবার দলীয় সূত্র জানায় জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে না পারলে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী দেয়া হবে। গত বছরের নভেম্বরে আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় করে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আসন্ন সিটি নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।
নির্বাচনী মাঠে জাতীয় পার্টির কোনো নড়াচড়া না থাকলেও মেয়র প্রার্থী থাকবে বলে জানালেন সিলেট মহানগর শাখার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই কাইয়ুম। তিনি বলেন, নির্বাচন আসলে আমরা ঠিক করবো কাকে প্রার্থী দেয়া হবে। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থেকে স্পষ্ট হবে পার্টি থেকে প্রার্থী দেয়া হবে নাকি কাউকে সমর্থন করা হবে।
ইসলামী আন্দোলন থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ও ইসলামী আন্দোলন সিলেট মহানগর শাখার সেক্রেটারি ডা. রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা এবং মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রার্র্থীর মুখপাত্র মাহমুদুল হাসান বলেন, দলের নির্দেশনা অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে একক প্রার্থী মনোনীত করে আমরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেভাবে জনগণ সাপোর্ট করেছে ঠিক তেমনি সিলেটেও আশার মুখ দেখবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
মেয়র পদে নিজ দল থেকে প্রার্থীতা ঘোষনা করেছে খেলাফত মজলিস। দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক কেএম আব্দুল¬াহ আল মামুনকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী দিয়েছে। গত ২৪ ফেব্র“য়ারি আলিয়া মাঠে সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেটের ১৯ আসনসহ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা শেখ আব্দুল মোমিন এবং মহাসচিব মাওলানা নুর হোসাইন কাসিমী। সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমানকে প্রার্থী করে প্রচার-প্রচারণা চলছে বলে জানান, মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী।
বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ থেকে কোনো মেয়র প্রার্থী চুড়ান্ত করা না হলেও এ ব্যপারে তাদের চিন্তা ভাবনা রয়েছে বলে জানান মহানগর শাখার সেক্রেটারি আজির পাশা।
এই নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির একক কোনো প্রার্থী নেই। সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড সিকান্দর আলী বলেন, সিলেট ১৪ দলের আলাপ-আলোচনায় যদি কোনো প্রার্থী মনোনীত করা হয় এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আসে তবে এ দলটি তাকে সমর্থন করা হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর পক্ষ থেকেও একক মেয়র প্রার্থী দেয়া হতে পারে জানালের দলটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সনম্পাদক লোকমান আহমদ। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা না হলেও আমাদের দল থেকে এককভাবে মেয়র প্রার্থী দেয়ার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। সময় এলেই বলা যাবে প্রার্থী দেয়া হবে নাকি জোটে সমর্থন থাকবে।
বাম দলগুলো এক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে একজন মেয়র প্রার্থী দেয়ার কথা জানালেন সিলেট জেলা বাসদের সমন্বয়ক আবু জাফর। তিনি বলেন, আমরা মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে দেখি না, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই দেখি। জণগন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আমরা যারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুই দলের বাইরে আছি, বিশেষ করে বাম দলগুলো এক হয়ে প্রার্থী দেয়া হবে।
তবে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার গনতান্ত্রিক অধিকার সকলের রয়েছে। নির্বাচনে যে কেউই প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় সিসিক নির্বাচনেও জোটের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd