সিলেট ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
জাহেদ আহমদ : ক্যালেন্ডারের হিসেবে শরৎকালের বিদায়ী সুর বাজছে। আর এ সুরে যেনো কান্না হয়ে ঝরছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। টানা দু’দিনের বৃষ্টি নগর জীবনে যেমন প্রভাব ফেলেছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে আগামী শীতকালীন ফসলের মাঠে। দু’দিনের বৃষ্টিতে মাঠে মাঠে থাকা বিভিন্ন শাক সবজি ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের সাবেক শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপ পরিচালক আবু নাসের বলেন, এ সময়ের বৃষ্টিতে শীতকালীন ফসলের মাঠের ক্ষতির সম্ভাবনা প্রচুর রয়েছে। যে সকল ফসল এখনো পূর্ণতা পায়নি তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। তবে আগাম চাষ করা ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে। এ বৃষ্টি স্থায়ী হলে কিংবা ফসলী জমি জলমগ্ন হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
সাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে সিলেটে টানা দুদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার থেকে শুরু টানা বৃষ্টিতে সিলেটে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে সিলেটের নগর জীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নি¤œচাপের কারণে প্রবাহিত শৈত্যপ্রবাহের সাথে শীত বাড়ার কথাও জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।
অগ্রহায়ণের শেষের দিকে গত দুইদিনের টানা বৃষ্টি ও হিমেল বাতাস সিলেটে অনুভুত হচ্ছে শীত। নগরীর বাইরে গ্রামাঞ্চলে যে শীতের ছোঁয়া লেগেছে শীতের আগেই।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কখনো হালকা, কখনো মাঝারি আবার কখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হতে দেখা গেছে। তার সাথে রয়েছে মৌসুমী বাতাস।
ছাত্র-ছাত্রী, কর্মমুখী ও খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে করছেন চলাচল। বৃষ্টি ও ঠান্ডা বাতাসের প্রভাবে তাপমাত্রা কমে এসেছে। শীতের মৌসুম পৌষ-মাঘের আগেই যেন আগমনী বার্তা নিয়ে উঁকি মারছে শীত।
টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নি¤œবিত্ত এবং সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। সারাদিন ঘরে বসেই সময় কাটাচ্ছেন দিনমজুর শ্রমজীবীরা। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরুচ্ছেন না অনেকে। রাস্তায় গণপরিবহণের সংখ্যাও স্বাভাবিক দিনের তুলনায় কম। তবে যারা প্রয়োজনে বেরুচ্ছেন তাদের পড়তে হচ্ছে নানা দুর্ভোগে। বিশেষ করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যান চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় অনেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা হন। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষদের পড়তে হয় বেশি বিপাকে। বৃষ্টির মাঝেই তারা ঘর ছেড়ে বেরুলেও কাজের সন্ধান পাননি অনেকে। গতকাল সকালে নগরীর শিবগঞ্জ, টিলাগড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে দিনমজুর শ্রমিকদের দেখা গেছে কাজের সন্ধানে বসে থাকতে।
দিনমজুর বেলাল মিয়া বলেন, ‘দুইদিন থাকি মেঘের লাগি কাম-কাজ নাই। ঝুড়ি-কোদাল নিয়া বইয়া আছি।’
রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, রিকশা নিয়ে বের হলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। গত শনিবারও একই অবস্থা থাকায় চিন্তিত রয়েছেন তিনি। যেখানে হাজার ৮শ হওয়ার কথা সেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ১৭০ টাকা রুজি হয়েছে। এরকম অবস্থা থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে বলে জানান আলী হোসেন।
অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন চাকুরীজীবী লাভলী সুন্নাহ। তিনি জিন্দাবাজার পয়েন্টে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন রিকশা বা সিএনজির। কিন্তু প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন একঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি বাসায় যাওয়ার জন্য, রিকশা পাচ্ছি না। মাঝে মধ্যে সিএনজি বা রিকশা আসলেও তিনগুণ বেশি ভাড়া চায়।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাইদ আহমদ চৌধুরী জানান, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। দুদিনে ৩৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার ১২ ঘন্টায় ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি অফিসার ভুপেস চন্দ্র দাস বলেন, এখনকার এ বৃষ্টিতে রবি ফসলের কোনো ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারণে শাকসবজির কিছুটা ক্ষতি হবে। এভাবে টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এখনো কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপন করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে কমলগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে কমলগঞ্জে ধান, আলুসহ শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নি¤œচাপের কারণে গত শুক্রবার রাত থেকে কমলগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অসময়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর আমন ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১৭ হাজার ২শ’ হেক্টর। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তাছাড়া প্রায় সতেরশ’ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের কারনে কাটা ধান ও শুকানোর জন্য অপেক্ষমান ধান এবং আলু সহ শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত, বন্যা আর জলাবদ্ধতায় গত বোরো, আউশ ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আমন ফসল ঘরে তোলার এই অসময়ে বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে থাকা ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ছে। নিচু জমিতে পানি জমে ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ধান কাটার পর মাড়াই দেয়া ও সিদ্ধ করা ধান ঘরে থাকায় সেগুলোতেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তারা আরও বলেন, টানা বৃষ্টিতে রোপিত আলুর মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। অন্যদিকে টমেটো, ফরাস, সরিষা, পুঁইশাক, লাল শাক, লাই শাক সহ শীতকালীন শাক-সবজিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বার বার ফসল ও সবজি ক্ষেতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুদ্দীন আহমদ বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে নি¤œচাপ জনিত কারনে দু’দিনের টানা বৃষ্টিপাতে কৃষকদের কিছু আমন ধান ও কিছু শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে রবিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি এখনও পুরোপুরিভাবে নিরূপন করা সম্ভব হয়নি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd