সিলেট ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
নিজস্ব প্রতিনিধি : থানা পুলিশ ও এক উপ-মন্ত্রীর উপস্থিতিতে থানা চত্বরে ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে মঞ্চে নিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি সমাবেশ করে শনিবার ফের নতুন করে বিতর্কিত ও সমালোচিত হলেন।
ধর্মপাশার মধ্যনগর থানা ভবন চত্বরে শনিবার বিকেলে থানা আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ মঞ্চে উঠে বক্তব্য রাখেন আদালত কর্তৃক চেক ডিজওনার মামলার ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী এক সময়ে মধ্যনগর থানা বিএনপির কৃষক দলের সভাপতি বর্তমানে এমপি রতনের ঘনিষ্ট বন্ধু ও আ’লীগ সদস্য অমরেশ চৌধুরী তিনি মধ্যনগর থানা সদরের প্রয়াত অনন্ত চৌধুরীর ছেলে।’
মামলার বাদী ও মামলার পরিচালনাকারী আইনজীবীর সুত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মুক্তারপাড়ার মৃত বাহা উদ্দিনের ছেলে ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিনের নিকট থেকে ২০১৬ সালে কয়লা-ধানের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কথা বলে একই জেলার মধ্যনগরের প্রয়াত অনন্ত চৌধুরীর ছেলে অমরেশ চৌধুরী ১৩ লাখ টাকা নেন। পরবর্তীতে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে অমরেশ চৌধুরী সুনামগঞ্জ প্রাইম ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবের অনুকুলে ৭ এপ্রিল ২০১৬ সালে ১৩ লাখ টাকার চেক প্রদান করলে ওই টাকা ব্যাংকে নগদায়ন না হওয়ায় তিনি সুনামগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল আদালতে মামলা দায়ের করেন। যা দায়রা মামলা নং ১৯১/২০১৭ ইং। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর প্রতারণার দায়ে অমরেশ চৌধুরীকে সুনামগঞ্জ জেলা যুগ্ন জজ (প্রথম) আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ ও ৬ মাসের করাদন্ড’র রায় প্রদান করেন। এরপর আদালত থেকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় হয়ে সংশ্লিস্ট থানায় অমরেশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রেরণ করা হয়।
মামলার বাদী সাহাব উদ্দিন শনিবার রাতে বললেন, অমরেশের বিরুদ্বে জুডিসিয়াল আদালতে মামলা দায়েরের পরই সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় ও সাজাপ্রদানের পর যুগ্ন জেলা জজ (প্রথম আদালত) থেকে পুন:রায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় ও মধ্যনগর থানাতেও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রেরণ করা হয়েছে, কিন্তু গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পর তিনি থানা পুলিশের নিকট ফেরার হলেও সুনামগঞ্জ -১ আসনের শাসক দল আওয়ামীলীগের দলীয় সাংসদ এমপি রতনের ঘনিষ্ট জন ও বন্ধু হওয়ায়র সুবাধে নির্বাচনী এলাকাতে প্রায়ই থানা পুলিশ ও এমপির উপস্থিতিতে তিনি সরব পদচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাকে পুলিশ গ্রেফতার করছেন না। ’
থানা ভবনে দলিয় মিটিংয়ে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী অমরেশ চৌধুরি।
এদিকে পুলিশের চোখে ফেরার হলেও শনিবার বিকেল চারটার দিকে মধ্যনগর থানা আ’লীগের উদ্যোগে খোদ থানা চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসবাবে বক্তব্যও রাখেন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী অমরেশ চৌধুরী। ওই সমাবেশে গিয়াস উদ্দিন নুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ¦ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি সহ দলীয় নেতাকর্মীগণ।’
এদিকে সাজাপ্রাপ্ত আসামী শুধু বক্তব্য দিয়েই ক্ষ্যান্ত থাকেননি সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্য করতে ও থানা পুলিশকে বিতর্কিত করতে সমাবেশের পুর্বে থানা ভবনের ভেতরে বসে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সেলফি তুললে সেই সেলফি দলীয় নেতাকর্মীরাই বিকেলে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অমরেশ চৌধুরীর সাথে শনিবার সন্ধায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত ও অর্থদন্ডের বিষয়টি স্বীকার করে বললেন, আমি আপিল করেছি। কোথায় কোন আদালতে কবে আফিল করেছেন জানতে চাইলে তিনি কোন রকম সদুক্তর না দিয়ে এ প্রতিবেদকের নিকট নিজেকে এমপি রতনের ঘনিষ্টজন ও বন্ধু পরিচয় দিয়ে আরো বললেন ‘ভাই আপাতত এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করবেন না।’
মধ্যনগর থানা আওয়ামলীগের তুণমুলের সদস্য ও প্রবীণ আ’লীগ নেতা বাবু নিক্সন রায় শনিবার রাতে বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী থানা পুলিশের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে আইনের প্রতি আদালতের প্রতিবৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন কওে নিজের ক্ষমতার জানান দিয়েছেন পাশাপাশি থানা পুলিশেকে যেমন জনগণের নিকট বিতর্কে ফেলৈছেন তেমনি একজন আইন প্রণেতা হিসাবে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতর এমপিরও ভাবমুর্তি ক্ষুণ্য করেছেন অমরেশ চৌধুরী।
মধ্যনগর থানার ওসি সেলিম নেওয়াজ শনিবার রাতে বলেন, থানা চত্বরেই সমাবেশ হয়েছে , সমাবেশে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকার ও ধর্মপাশা সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের সহ আমি নিজেও ছিলাম কিন্তু অবরেশ চৌধুরীর নামে থানায় কোন গ্রেফতারী পরোয়ানা নেই কিংবা উনার সাজাপ্রাপ্ত অর্থদন্ড হওয়ার বিষয়টিও আমার জানা নেই।’
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল্লাহ বললেন, অমরেশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে কীনা তা এই মুহুর্তে খোঁজ না নিয়ে বলা সম্ভব হচ্ছেনা পরে খোঁজ নিয়ে জানাব।
এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা জজ আদালতের সাবেক এপিপি অ্যাডভোকেট আবদুল আজাদ রুমান শনিবার রাতে বললেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করা, সভা সমাবেশে থানা পুলিশের সামনেই উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করাটা আইন পরিপন্থি কাজ, এটিও আরেক ধরণের অপরাধ, এর দায় পুলিশ প্রশাসনও এড়াতে পারেন না।’
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সঙ্গে এ বিষয়ে জানার জন্য চেষ্টা করে তার সাক্ষাত পাওয়া যায়নি। ফোন কলের মাধ্যমে চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd