সিলেট ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:২০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
শাহ আলম, গোয়াইনঘাট : যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত সে জাতি তত বেশী উন্নত। এই ব্রতকে সামনে রেখে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সিলেটের সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় প্রতি বছরই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতো এই গ্রামসহ পাঁচটি গ্রামের শিশু কিশোররা। বর্তমান সময়ে তরুন প্রজন্মের অনেকেই নেশায় মজে থাকাসহ অশুভ সঙ্গে বখে যায় নয়তোবা বেকার অলস সময় কাটায়। এর থেকে ব্যতিক্রম চিত্র যখন দেখি, আমাদের তা আশার আলো দেখায় ঠিক তেমনই দিন বদলের ভ্রতকে সামনে রেখে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বাসিন্ধা ও গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. করিম মাহমুদ লিমন’র ডাকে মোহাম্মদপুর গ্রামের সোহেল আহমেদ, গুচ্ছগ্রামের শাহ আলম, শাহাব উদ্দিন, জালাল আহমেদ, নুরজাহান আক্তার, অনোয়ারা আক্তার আনু, জেয়াসমিন আক্তার, সুমাইয়া সুমিসহ একঝাক তরুন-তরুনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রতিষ্ঠা করেন গুচ্ছগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অবহেলিত প্রত্যান্ত অঞ্চলের এ জনপদের তিন শতাধিক ক্ষুদে শিশুদের সু-শিক্ষা দানের লক্ষ্যে স্ব স্ব উদ্যোগে গুটা কয়েক তরুন-তরুণি এদের অক্ষর জ্ঞান শিখিয়ে যাচ্ছেন। আশ্চর্যের বিষয় শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের মধ্যে দুয়েকজন ব্যতীত এরা সবাই বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। তারা নিজেরাই বই খাতা কিনে এইসব ক্ষুদে শিশুর কচি হাতে তুলে পড়া লেখা শিখিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসসন্ধানে জানাযায় ১৯৮৮ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ও নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাওয়া ৪১টি ভূমিহীন পরিবারকে এখানে পূণর্বাসিত করে ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার এই গ্রামটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময়ে এ গ্রামে ১টি মসজিদ, ১টি মাদ্রাসা ও ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এজন্য জায়গাও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঐ সময়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হলেও বিগত ২৭ বছরে এই গ্রামের শিশু কিশোরদের শিক্ষার মান উন্নয়নে এখানে মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য সরকারি বা বে-সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে এ গ্রামে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসবাস। এই গ্রাম থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটারের অধিক। তাছাড়া যাতায়ত ব্যবস্থাও অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। যার পরনায় এ গ্রামের শিশু কিশোররা পার্শ্ববর্তী এলাকার স্কুলে যেতে অনেকটা অনীহা প্রকাশ করে। অপরদিকে এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ শ্রমিক হওয়ায় তাদের সন্তানের শিক্ষার দিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়না। যদিও ধীরে ধীরে এ গ্রামের মানুষ সচেতন হয়ে তাদের সন্তানের শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছেন। কিন্তু এই গ্রাম থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুরত্ব একটু বেশী এবং যাতায়ত ব্যবস্থা ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় তারা তাদের সন্তানদের সেখানে পাঠাতে অনেকটা অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। আর এ কারনেই অত্র এলাকার অভিবাবকগণ তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়মূখী না করে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের দিকে ধাবিত করছেন। ফলে মূকুলেই ঝড়ে পড়ছে সম্ভাবনাময় দেশের পরবর্তী প্রজন্মের কর্ণধাররা। বর্তমান সময়ে অনেকেই যখন বিশেষ করে তরুন সমাজ সামাজিক উন্নয়নে নিজেদের অনেকটা গুটিয়ে নিচ্ছেন ঠিক তখনই অবহেলিত (গুচ্ছগ্রাম, রমতপুর, সোনাটিল্লা, রসুলপুর, মোাম্মদপুর) পাঁচটি গ্রামের কোমলমতি শিশু কিশোরদের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার সুযুগ করে দিতে এবং অত্র এলাকার শিশু কিশোরদের শিক্ষার মান উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে তরুন সমাজকর্মী ও গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ করিম মাহমুদ লিমন’র উদ্যোগে ২০১৫ সালে একঝাক তরুন তরুনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠা করে গুচ্ছগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে গুচ্ছগ্রামসহ আশপাশের শিক্ষার্থীদের অভিবাবকদের সাথে আলাপ কালে তারা বলেন, এ গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা শুধু মাত্র সময়ের দাবী ছিল তাই বাস্তবায়ন করেছে অত্র এলাকার যুব সমাজ। এই গ্রামে যে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হয়েছে তার সুফল পাবে পার্শ্ববর্তী রসুলপুর, রহমতপুর, সোনাটিলা ও মোহাম্মদপুর গ্রামের শিশু কিশোররাও, অনেকটা কাছ থেকেই প্রাথমিক স্থরের শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবে তারা। তাই নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কল্পে অত্র এলাকার কোমলমতি শিশুদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গুচ্ছগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে সকল প্রকার সহযোগিতা ও সরকারী করনের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লি¬ষ্ট সকলের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
বিদ্যালয়টির উদ্যোগতা ও গুচ্ছগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মোঃ করিম মাহমুদ লিমন বলেন ১৯৮৮ সালে বন্যা কবলিত মানুষের আশ্রয়ের জন্য সরকার ৩৬ টি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। পর্যায়ক্রমে দেশের ৩৫ টি গুচ্ছগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করা হলেও দীর্ঘ ২৯ বছরেও এই গুচ্ছগ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। যুব সমাজ কতৃক পরিচালিত এই বিদ্যালয়টি দ্রুত সরকারি করণে ্এবং বিদ্যালয়টি শুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার জন্য সমাজের জনপ্রতিনিধি, বিত্তভান, শিক্ষা অনুরাগী, শিক্ষা মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লি¬ষ্ট সকলের সার্ভিক সহযোগিতা কমনা করি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার রেজাউল ইসলাম বলেন, গুচ্ছগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা অতিব জরুরী ছিল। অত্র এলাকার যুব সমাজ তা বাস্তবায়ন করেছে তাদের এই মহতি উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি উপজেলা শিক্ষা অফিসের সাথে আলোচনাকল্পে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিদ্যালয় (২০১৫) শুরু থেকেই উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা অফিস বই ও প্রশ্ন প্রধান করে আসছে। পাশাপাশি আমাদের উপজেলা শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকেও বিদ্যালয় বিহীন গ্রাম হিসেবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে তালিকা পাঠানো হয়েছে। ঐ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা ও দ্রুত সরকারি করনের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd