সিলেট ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক:: দক্ষিণ সুরমার ‘পাপরাজ্য’ খ্যাত রেলস্টেশন এলাকায় মাদকের রমরমা অবস্থা আগের মতো নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় রেলস্টেশনকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ীরা অনেকটা লাপাত্তা হওয়ার সুযোগে নগরীর কাষ্টঘর এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। বর্তমানে সিলেটের নয়া ‘মাদক স্টেশন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে কাষ্টঘর।
এখানে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩ জন নিয়ন্ত্রণ করছে ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা ব্যবসা। মাদকখাতে নেপথ্যে থেকে তাদের টাকা বিনিয়োগ করছে সিলেটের মাদক ডনেরা। যে কারণে খুব দ্রুত কাষ্টঘর মাদকের ভয়ঙ্কর স্টেশনে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে ইয়াবা ডিলারদের হাত ধরে মাদক গোটা সিলেটে যাচ্ছে। পাশাপাশি সিলেটের অন্য মাদক আস্তানার ব্যবসায়ীরাও কাষ্টঘর কেন্দ্রীক মাদকের জাল বিস্তারে যুক্ত রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেল, সম্প্রতি সিলেটের কাষ্টঘরের মাদক আস্তানায় বড় বড় ইয়াবা চালান প্রবেশের তথ্য পায় গোয়েন্দারা। কিছুদিন আগে এরকম একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে প্রথমে গোয়েন্দারা সাদা পোশাকে নজরবন্দি করে যান আস্তানাটি। কিন্তু কাষ্টঘরের রাস্তায় মাদক বিক্রেতাদের তথ্যদাতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের তথ্য পৌঁছে দেয় মাদক ডিলারদের কানে। তাই বিজিবির তিনটি গাড়িতে করে এসেও ইয়াবার বড় চালানটি জব্দ করা যায়নি।
পরে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর পৃথক অভিযান চালিয়ে সামান্য কিছু ইয়াবা বড়ি, হেরোইন ও গাঁজাসহ দুজনকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করে। অথচ এখনো কাষ্টঘর হচ্ছে সিলেটের ইয়াবার নয়া স্টেশন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের পর সহজে দেশব্যাপী ইয়াবা বড়ি পাচার হচ্ছে। আগে এসব মাদক চালান যেত রেল স্টেশনে। সেখানে র্যাবের নিয়মিত অভিযানের কারণে মাদক আস্তানাটি ঝিমিয়ে পড়েছে। সক্রিয় হচ্ছে কাষ্টঘরের আস্তানা।
মাদকের নেপথ্যের ডনেরা হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষকে ব্যবহার করছে। কারণ, কাষ্টঘরে সুইপার কলোনীতে অভিযানে যেতে আইনশঙ্খলাবাহিনীর অপদস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে দিনে দিনে এই নয়া মাদক স্টেশন বিস্তার লাভ করছে। হরিজন সম্প্রদায়ের বাঘা লাল, রতন লাল ও পান্না লাল এখানে ইয়াবা ডিলার। অসংখ্য হরিজন সম্প্রদায় যেখানে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত, সেখানে এই তিনজন মাদক বিক্রি করে রাতারাতি মাদক বিত্তশালীতে পরিণত হয়েছে। অথচ বাকি হরিজন লোকেরা সিসিকের অধীনে বা নানা পেশায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কাষ্টঘরের এই দুতিনজন মাদক ডিলাররা সুইপার কলোনীর তরুণ সমাজকেও বিপথে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ইতোপূর্বে কয়েকবার এই তিন কুখ্যাত মাদক ডিলারকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু তারা নেপথ্য আশ্রয়দাতাদের সাহায্যে জামিনে বের হয়ে আসে দ্রুত। আবার সারা সিলেটজুড়েই শুরু করে মাদক ব্যবসা। নেশাসক্তরা কাষ্টঘরে গিয়েও নেশা খেয়ে চলে আসছে। সেখানে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়ানো থাকে মাদক বিক্রেতারা। এমনকি শিশুদের হাতেও কাগজে মুড়িয়ে মাদকের ঠোঙা দেওয়া হয়। এতে শিশুদের জীবনও বিপন্ন হচ্ছে। আবার সিলেটের বাইরের মাদক স্পটের ব্যবসায়ীরা কাষ্টঘরের ডিলারদের কাছে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের এলাকায়। বড় মাদক চালানের অর্ডার অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারে করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ারও মানুষ আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৯ এর সিনিয়র এএসপি মাইন উদ্দিন বলেন,‘ যেখানে মাদক সেখানেই র্যাবের অভিযান হচ্ছে। রেলস্টেশনকে মাদকমুক্ত করতে র্যাবের পক্ষ থেকে সব ধরণের জোরালো অভিযান করা হয়েছিল। তাই সিলেটের এই পুরাতন মাদক জোন এখন নিষ্ক্রিয়। নতুনভাবে সক্রিয় হয়েছে কাষ্টঘর। এই মাদক এলাকার ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অতীতেও এখানে একবার বড় ধরণের অভিযান করেছিল র্যাব। এবার র্যাব তার নিজস্ব পদ্ধতি অনুসারে নতুন করে অভিযান পরিচালনা করবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd