সিসিক মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাগ্‌যুদ্ধে বিভক্তি প্রকাশ্যে

প্রকাশিত: ৫:৫৯ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২৪

সিসিক মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাগ্‌যুদ্ধে বিভক্তি প্রকাশ্যে

Manual6 Ad Code

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট :: সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকেই দুটি বলয়ে বিভক্ত সিলেট আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি শীর্ষ দুই নেতার বাগ্‌যুদ্ধে আবারও প্রকাশ্যে এল এই বিভক্তি। এটি দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন নেতারা।

Manual6 Ad Code

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান এই বিভক্তি সামনে আনলেন।

Manual3 Ad Code

ওয়ান-ইলেভেনে সিলেট আওয়ামী লীগের ৪০ নেতা-কর্মীর কারাভোগ-নির্যাতনের ১৭ বছর উপলক্ষে আলোচনা সভায় কৌশলে মেয়রকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন নাসির উদ্দিন খান। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন তোলপাড় চলছে, তখনই পাল্টা জবাব দিলেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

মঙ্গলবার রাতে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে নাসির উদ্দিন খান নিজেদের জেল-জুলুমসহ নানা সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘অনেকে বিদেশে বসে মাল কামিয়েছেন। অনেক আন্দোলন করেছি। আজ মনে হয়, আমরা পরগাছা। সুবিধাভোগীরা অনেকে জনপ্রতিনিধি হয়ে গেছেন। এখন কেউ কেউ মনে করেন, তাঁর বাবার সম্পত্তি হয়ে গেছে সিলেট।’

Manual5 Ad Code

নাসির উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘আমরা টাকা খরচ করে অনেককে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছি। সেটা ‍ভুললে চলবে না। আমার পাওয়ার আছে, আমার অমুক আছে-তমুক আছে, সেটা থাকবে না। জনগণ যদি না থাকে, সংগঠন যদি না থাকে, কারও অস্তিত্ব থাকবে না। রাজনীতিতে দুঃসময় এলে তারা থাকবে না, আমাদের দেশে থাকতে হবে—আমাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই। আমি বললাম, তারা চলে যাবে।’

ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সৈয়দ শাহেদ রেজা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ রহমান রাজনৈতিক অভিভাবক পরিবর্তন করে যোগ দিয়েছেন মেয়র বলয়ে। এর আগে তিনি ছিলেন নাসির খানের নিয়ন্ত্রিত তেলীহাওর গ্রুপের সিনিয়র নেতা। তারও আগে একই গ্রুপ ছেড়ে মেয়র বলয়ে যোগ দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজও। দিনে দিনে বলয় বড় করছেন মেয়র আনোয়ার। এই ‘আঘাত’ গিয়ে পড়ছে তেলীহাওর গ্রুপে। এতে ক্ষুব্ধ জেলার প্রভাবশালী নেতা নাসির উদ্দিন খান।

এরপর গত শনিবার এমদাদ রহমানের দেওয়া শোডাউনের মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বক্তব্যের জবাব দিলেন মেয়র। এতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের হাজারো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

শোডাউনের আগে রেজিস্ট্রারি মাঠের সমাবেশে বক্তব্য দেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনিও কারও নাম উল্লেখ না করে প্রতিপক্ষের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবাই ঠান্ডা মাথায় মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। কেউ চোখ রাঙালে কোনো কিছু আসে যায় না। কার দৌড় কতটুকু জানা আছে। আমরা এসব বিষয় নিয়ে বলতে চাই না। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করে নিজেদের নবাব ভাববেন না।’

বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের বোঝাতে চেয়েছি, যারা দলকে মূল্যায়ন করে না, উড়ে এসে জুড়ে বসে, তাদের অবস্থান স্থায়ী হয় না। কাউকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেইনি। এগুলো একটি পক্ষের কাজ। তারা তিলকে তাল বানায়।’ সিলেটে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে বলে দাবি তাঁর।

আর সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতেই এমন বক্তব্য দিয়েছি। কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়। কেউ কেউ এসব নিয়ে নানা আলোচনা রটিয়ে শান্তি পায়।’ তিনিও দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগে কোনো বিভক্তি নাই, আমরা ঐক্যবদ্ধ।’

শীর্ষ দুই নেতার পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং দলের বিভক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মফুর আলী বলেন, ‘রেষারেষি বা এই ধরনের জিনিস পরিহার করা উচিত। এতে দলের নেতা-কর্মী ও জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে। সার্বিকভাবে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এর আগে ২ মার্চ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়। জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে মেয়রসহ দুই এমপিকে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বলয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট রঞ্জিত চন্দ্র সরকার, সদস্য ও সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা প্রমুখ।

অপরদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন মিলে একটি বলয়। প্রতিমন্ত্রী শফিক এই বলয়ের মুরব্বি হলেও মূল নেতৃত্বে নাসির খান।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান গত বছর সিলেট সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে তাঁকে মেনে নিতে পারেননি দলের একটি অংশের নেতা-কর্মীরা। সূত্র- আজকের পত্রিকা

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..