সিলেটে চিকিৎসার আড়ালে ডাক্তারদের টেস্ট বানিজ্য

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০১৮

সিলেটে চিকিৎসার আড়ালে ডাক্তারদের টেস্ট বানিজ্য

Manual4 Ad Code

জাবেদ এমরান:: সিলেটে চিকিৎসার আড়ালে চলছে ডাক্তারদের টেস্ট বানিজ্য। স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি নীতিমালা কঠোর ও প্রয়োগ না হওয়ার কারণে নগরীতে বিপুলসংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।

Manual4 Ad Code

যত্রতত্র চেম্বার খোলে ডাক্তাররা গভীর রাত পর্যন্ত দেখে যাচ্ছেন রোগী। প্রয়োজন হোক বা না হোক, রোগীর টেস্টের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশনের লোভে অনেক ডাক্তার নানা পরীক্ষা লিখে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশন।

কোন কোন ডাক্তার নিজের মনোনীত জায়গায় পরীক্ষা না করালে পরবর্তীতে সে রোগীকে আর দেখেন না। অনেক চেম্বারে আবার রোগীর চাইতে বেশি দেখা মিলে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের। মানহীন কোম্পানির ঔষধ ডাক্তার রোগীর প্রেসক্রিপশনে লিখতে দেশি-বিদেশী নানা প্রকার সামগ্রী উপহার দেন তারা।

প্রেসক্রিপশনের বই, ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে দেয়া, মাস শেষে লম্বা খামে কমিশন প্রদান করা, কোন ঔষধ কোম্পানি বছর শেষে ডাক্তারকে বিদেশ ভ্রমনে নিয়ে যায়। আর সে সব প্রলুব্ধতায় মুগ্ধ হয়ে ডাক্তার নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন ভেজাল ঔষধ। রোগী ডাক্তার দেখিয়ে চেম্বার থেকে বের হলেই কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রেসক্রিপশন নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে রাখছেন হিসেব। আবার কখনো ডাক্তার অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লেখায় বেশির ভাগ সময় ঔষধ নির্ণয় করা কঠিন হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সিরিয়াল নিতেও ঘুষ দিতে হয়। আবার কারো কারো কাছে অগ্রিম ফি দিতে হয়।

জানা যায়, সিলেট নগরীতে রয়েছে শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনুমোদিতহীন চমকপদক নামে আধুনিক সাজসজ্জায় গড়ে উঠেছে অধিকাংশ চিকিৎসাসেবার প্রতিষ্ঠান। এদের বেশিরভাগেরই উদ্দেশ্য থাকে রোগীর কাছ থেকে কিভাবে চিকিৎসা ও টেস্টের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া যায়।

Manual1 Ad Code

এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটিস্ক্যান ৪ হাজার টাকা, এমআরআই ৪/৫ হাজার টাকা, প্রায় ২ শত ধরনের রক্ত পরীক্ষা ২শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি পরীক্ষা ৪/৮ হাজার টাকা, এফএনএসি (ফাইন নিডল এসপাইরেশন সাইটোলজি) ১ হাজার টাকা, হিস্টো ৬শ’/ ১ হাজার টাকা। সিটি স্ক্যান, ইকো, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ জটিল পরীক্ষাগুলো ডাক্তারের উপস্থিতিতে করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আর যে ওষুধ দিয়ে টেস্ট করানো হয় সেগুলোও অনেক সময় থাকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও জীবাণুতে ভরপুর।

Manual1 Ad Code

সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো- পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট তৈরি করার কথা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের। কিন্তু তা করছেন টেকনিশিয়ান কিংবা ডাক্তারের সহযোগীতাকারী। ডাক্তারের নাম, পদবি সম্ভলিত সিল মেরে তারা নিজেরাই স্বাক্ষর করে রোগীকে সরবরাহ করছেন রিপোর্ট। সে রিপোর্ট ভালো করে না দেখে প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে ডাক্তার লিখে দিচ্ছেন ঔষধ।

রিপোর্ট দেখার দায়িত্বরত ডাক্তাররা নিজেদের নাম, পদবি যুক্ত সিল তৈরি করে মোটা অংকের টাকায় কিংবা মাসিক চুক্তিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিক্রি করছেন। মোটকথা, মহান চিকিৎসাসেবা এখন টাকা তৈরির কারখানায় পরিনত হয়েছে। অপরদিকে, প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী ভর্তি, নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ প্রেসক্রাইব, অপারেশন নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে রোগীকে লাইফ সাপোর্টে পাঠানো, কেবিনে রোগী ধরে রাখাসহ লাশ হস্তান্তর পর্যায়ের নানা ধাপেই কমিশন লেনদেন হয়।

Manual7 Ad Code

গর্ভবতী কোন রোগীর বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়া মানে ছুরির নিচে গলা দেয়া। মা ও সন্তানকে বাঁচাতে হলে এখনি ইমার্জেন্সি অপারেশন প্রয়োজন, দেরি হলে মা বা সন্তান বাঁচানো সম্ভব হবে না, যা করার তাড়াতাড়ি করেন বলে ভয় দেখিয়ে অপারেশ করাতে বাধ্য করার নিয়ম চালু হয়েছে। তার পর কৌশলে পাঁচ থেকে সাতদিন রেখে লম্বা বিল ধরিয়ে দেয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কোথাও আবার ডেলিভারীর জন্য প্যাকেজ সিস্টেম চালু রয়েছে। এসব কারণে দেশের স্বাস্থ্যসেবা মূখ থুর্বে পড়ছে।

তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা স্বাস্থ্য সশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, অনিয়মের কারণে জরিমানা করলেও সংশোধন হচ্ছেনা চিকিৎসা সেবায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। জীবন মৃত্যুর মধ্যখানে থাকা মহান চিকিৎসা পেশার অনিয়ম, দুর্নীতি ও বানিজ্যের লাগাম টেনে ধরতে কঠোর নজরদারীর সাথে চিকিৎসা আইন বাস্তবায়ন জরুরী বলে মনে করছে সচেতন মহল।

সিলেটের সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায়ের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ডাক্তারদের বিবেক যতোদিন পর্যন্ত জাগ্রত না হচ্ছে ততোদিন পর্যন্ত মানুষ প্রকৃত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকবেন। রোগীর পছন্দমতো জায়গায় টেস্ট করিয়ে নিয়ে গেলে ডাক্তার ফিরিয়ে দিলে তার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা তিনি নিবেন। এক প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, এদের ধরতে ও চিকিৎসার মান উন্নয়নে সরকার তিন ক্যাটাগড়িতে অচিরেই আইন প্রণয়ন করছে। শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করে অসৎ ব্যক্তিদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2018
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..