বিছনাকান্দিতে বৈধভাবে সীমান্তহাট চালু সময়ের দাবি

প্রকাশিত: ৫:২২ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০১৯

বিছনাকান্দিতে বৈধভাবে সীমান্তহাট চালু সময়ের দাবি

দেরশের সীমান্তবর্তী জনপদ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা। উপজেলাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। উপজেলাটির শেষ সীমানায় সাত পাহাড়ের গহীনে রয়েছে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জল পাথরের বিছনাকান্দি।

বিছনাকান্দি পর্যটনকেন্দ্রের সন্নিকটে ভারত অংশে শত বছরের পুরনো একটি হাট অবস্থিত। যুগ যুগ ধরে এই হাটে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বৃটিশ ও পাকিস্থান শাসনামল থেকেই বাংলাদেশ থেকে এই হাটে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল সরবরাহ করা হয়।

অপরদিকে ভারত থেকে ঐ হাটে পান, সুপারি, কমলালেবুসহ বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স সামগ্রী বেচা-কেনা হয়। কিন্তু এ হাটটি বৈধভাবে না বসার কারনে উভয় দেশের  পুলিশ, বিজিবিসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে প্রতিনিয়ত হয়রানিতে শিকার হন উভয় দেশের ক্রেতা বিক্রেতা। এ ক্ষেত্রে পূর্নাঙ্গ বৈধতা নিয়ে উক্তহাটে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে জোরদাবি জানিয়েছেন গোয়াইনঘাটের সীমান্ত এলাকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় অধিবাসিরা।

এব্যপারে রুস্তমপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়জুল হাসান বলেন, যুগ যুগ ধরে বিছনাকান্দি সীমান্ত সংলগ্ন ভারত অংশে একটি হাট বসে এই হাটে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকেরা উভয় দেশের বিভিন্ন ধরনের কাঁচামালসহ দ্রব্যাদি কেনা বেচা করে আসছেন।

যুবলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম, আজিজুল হক, এনামুল হক, হারুনুর রশিদ, মাসুক আহমদ, জসিম উদ্দিন, রিপন দাস, মানিক মিয়া, নেছার আলী, আনিসুল হক ও ইউনিয়ন যুবলীগ’র যুগ্ম-আহবায়ক তাজুল ইসলাম, ফয়সল আহমদ বলেন, অবৈধভাবে বর্তমানে এ হাটটি পরিচালিত হওয়ায় উভয় দেশের সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য আশিকুর রহমান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, বিছনাকান্দি সীমান্ত হাটে দির্ঘকাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের সবজি, মোরগ, ডিম ও কাঁচামালের চাহিদা বিদ্যমান রয়েছে। ফলে দেশ থেকে ঐ হাটে অধিক লাভের আশায় স্থানীয়রা নিয়মিত দ্রব্যাদি ক্রয় বিক্রয় করে আসছেন। হাটটির আইনি বৈধতা না থাকায় স্থানীয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডাক্তার গোলাম নবী হোসেন বলেন, সীমান্ত হাটটির আইনি বৈধতা পেলে উভয় দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

রুস্তুমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ও ইউপি সদস্য কামাল হোসেন জানান, বিছনাকান্দি সীমান্ত হাটটি শত বছরের পুরনো। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য এই হাট দিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার শতাধিক বীরমুক্তিযোদ্ধাগন মেঘালয় রাজ্যে গমন করে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। এ বিষয়টি প্রমান করে এ হাটের সাথে উভয় দেশের মানুষের বন্ধুত্বপূর্ন সু-সম্পর্ক রয়েছে। প্রশিক্ষণকালিন সময়ে মেঘালয় রাজ্যের হাজার হাজার মানুষের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাগনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এ হাটটি সরকারীভাবে বৈধতা না পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাগনের সাক্ষাৎ ঘটেনি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ার কল্যানে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জলপাথরের বিছনাকান্দি ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে। ফলে প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমিরা বিছনাকান্দি দেখতে ছুটে আসেন। সীমান্তহাটটি সরকারীভাবে বৈধ না হওয়ায় উভয় দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদসদের দ্বারা পর্যটকেরা নানা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।

উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মনসুর আহমদ বাবুল জানান, দেশের বিভিন্ন সীমান্তে নতুন করে সরকারীভাবে সীমান্তহাট প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। কিন্তু সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি সংলগ্ন হাটটি শত বছর থেকে অবৈধভাবে পরিচালিত হলেও কার ইশারায় সরকারীভাবে বৈধতা পাচ্ছেনা?

রুস্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন-শিহাব সরকারীভাবে বিছনাকান্দিতে সীমান্তহাট চালুর দাবি জানান।

তিনি বলেন, বৈধভাবে বাজারটি চালু হলে উভয় দেশের জনগনের পাশা-পাশি সরকারও লাভাবান হবে।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারতের সাথে আমাদের দেশের বন্ধুত্ব সম্পার্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশ ও ভারত, দু-দেশের পারষ্পারিক সমোঝতায় এলাকার মানুষের জন্য সীমান্তহাট চালু করা জরুরী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিছনাকান্দিতে সীমান্তহাট সরকারীভাবে চালু করার লক্ষ্যে উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এরই লক্ষ্যে স্থানীয় কোপার বাজারে প্রশাসনিকভাবে সভা, সেমিনার করে সরকারের উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হলেও অদ্যবদি পর্যন্ত কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করেনি কর্তৃপক্ষ।

তিনি জরুরি ভিত্তিতে উক্ত বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করার জোর সুপারিশ করেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, বিছনাকান্দির সন্নিকটে ভারত অংশে স্থাপিত বাজারটিকে উভয় দেশের ব্যসায়িক কার্যক্রম গতিশীল ও মানুষের মধ্যে সু-সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে সরকারীভাবে সীমান্তহাট প্রতিষ্ঠা উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে। উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার কাগজাদি প্রেরণ করা হয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..