নুসরাত হত্যার বিচার চেয়ে গণভবন থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত মানববন্ধন

প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০১৯

নুসরাত হত্যার বিচার চেয়ে গণভবন থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত মানববন্ধন

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর গণভবন এলাকা থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত মানববন্ধন পালিত হয়েছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এই মানববন্ধনে অংশ নেয়।

Manual4 Ad Code

বঙ্গভবন থেকে গণভবন পর্যন্ত এই মানববন্ধনের পথ ধরা হয় রাজউক ভবন-দৈনিক বাংলার মোড়, পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, কাঁটাবন, বাটা সিগন্যাল, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি-কলাবাগান হয়ে আসাদগেট।

বঙ্গভবন সংলগ্ন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান ফটকে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি আগামী ২০ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এটি শুধু সিপিবির কর্মসূচি নয়, এটি দেশের সব মানুষের কর্মসূচি। দল মত নির্বিশেষে সব মানুষ এতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে নারী নির্যাতন দূর করবে।

নুসরাতকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কোনো বিচ্ছন্ন ঘটনা নয়, এদেশে সারাবছরই ধর্ষণের উৎসব চলে। এসব ধর্ষণের শিকার হয় মূলত শিশুরা। কারণ অপরাধী জানে এদেশে কোনো অপরাধেরই বিচার হয় না। সরকার আর সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেই সব অপরাধ মাফ। এরা যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের সঙ্গে যোগ দেয়।

Manual1 Ad Code

প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিল। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা এর আগে তাকে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে আটক করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে নুসরাতের পরিবারতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। তাকে মামলা তুলে নেওয়া কথা বলে ভয় দেখানো হয়। পরে সেখানে বোরকা পরিহিত ৪/৫ ব্যক্তি নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

সোমবার (৮ এপ্রিল) দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ঢামেকের ডাক্তাররা জানান, নাজুক শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব না। শনিবার রাতে অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে নুসরাত মারা যায়।

এদিকে ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যা করতে জেলখানা থেকে নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা। আর নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেন শাহাদাত হোসেন শামীম।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী বোরখা পরিহিত চারজন ভবনের ছাদে নুসরাত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন মেয়েও ছিলো। হত্যাকাণ্ড পরিচালনায় এখন পর্যন্ত দুজন মেয়েসহ ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।

Manual1 Ad Code

এ সময় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।

পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।

সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে ১০ এপ্রিল রাতে না ফেরার দেশে পারি জমান ‘প্রতিবাদী’ নুসরাত।

Manual5 Ad Code

এদিকে ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তারই জেরে মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। ওই মামলার পর সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2019
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..