ওসি মোস্তফা কামালের আলিশান বাড়ি

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

ওসি মোস্তফা কামালের আলিশান বাড়ি

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নবাবগঞ্জের মানুষের কাছে যেন আতঙ্কের অপর নাম ওসি মোস্তফা কামাল। তিনি অর্থের বিনিময়ে খোদ আওয়ামী লীগের দুই কর্মীকে নাশকতা মামলায় জড়িয়েছেন। তার রুমে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে এমন হুমকিও শুনতে হয়- ‘এই এটা ওসির রুম, একদম সাঁটিয়ে দিব।’

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌরসভার চণ্ডীবর্দী এলাকার গ্রামে ওসি মোস্তফা কামালের কোটি টাকার আলিশান বাড়ি এলাকার সবার নজর কেড়েছে। রাতারাতি তার এ উত্থান নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনা। উপজেলার মানুষের মনে তার আয় নিয়ে নানা প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা রয়েছে। গোপালগঞ্জের নাম ভাঙিয়ে চলা এ পুলিশ কর্মকর্তার অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না কেউ। মোস্তফা কামালের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে। তার বাবা হাইস্কুল শিক্ষক আবু জাফর মিয়া (চান মিয়া) বর্তমানে অবসরে আছেন। আবু জাফর মিয়ার তিন ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে মোস্তফা কামাল দ্বিতীয়। বড় ভাই জামাল তেমন কিছু করেন না।

ছোট ভাই উপজেলায় ছোটখাটো ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে জড়িত। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এরই মধ্যে মোস্তফা কামাল ২০০০ সালে এসআই হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পর অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে রাতারাতি পাল্টে যায় পারিবারিক অবস্থান। সাভার থানার সেকেন্ড অফিসার ও আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নামে-বেনামে মুকসুদপুর, ঢাকা, সাভার ও আশুলিয়ায় গড়ে তোলেন অঢেল সম্পত্তি। এলাকায় তিনি কোটিপতি পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার ওসি মোস্তফা কামাল টাকা পেলে সব অবৈধ কাজকেই বৈধতা দেন। ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই নবাবগঞ্জ থানায় ওসি হিসেবে যোগদানের পর তিনি অবৈধ অর্থ উপার্জনে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। ইছামতি নদীতে মাটি কাটা, বালু উত্তোলন, পরিবহন খাত, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্য এবং নাশকতা মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

চাকরি জীবনের ১৮ বছরে কোটি কোটি টাকার গাড়ি, বাড়ি ও সম্পত্তির মালিক এখন মোস্তফা কামাল। তার কর্মকাণ্ডে থানার একাধিক কর্মকর্তা বিপাকে থাকলেও নাম-পরিচয় প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি, কারণ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে তিনি নির্বিঘ্নে অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। কেস স্টাডি ১ : ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল নবাবগঞ্জের বর্ধনপাড়ায় মহিউদ্দিনের বসতভিটে ভেঙে গুঁড়িয়ে দখলে নেয় পলাশ বাহিনীর লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন ওসি মোস্তফা কামাল। অসহায় পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে থাকে দিনের পর দিন।

এরপরও থানায় মামলা নেয়নি ওসি। বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পেয়ে তিনি সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন। অথচ ওসি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
কেস স্টাডি-২ : এ মাসের প্রথমদিকে নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দা থেকে আল আমিন নামে এক ছেলেকে ধরে আনা হয় তার মোটরসাইকেলের কভারের ভেতর ইয়াবা পাওয়ার অভিযোগে। এরপর তার কাছ থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় ওসি মোস্তফা কামাল।

নবাবগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে এ রকম শত শত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক নির্মূলে সারা দেশে কঠোর অভিযান পরিচালনা করছে, অথচ নবাবগঞ্জের ওসির ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাদকের গডফাদার অথবা কোনো প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েনি এখনও।

ওসি মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত সালিশ মীমাংসার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। থানার পাশেই একটি জমির দ্বন্দ্ব মেটাতে তিনি ৩ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান।

তবে টাকা নেয়ার পরও তার সমস্যার সমাধান করেননি। রাতের আঁধারে নবাবগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত বলে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের পর তাকে ছেড়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ যখন জনবান্ধব প্রশাসন গড়তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ওসি মোস্তফা কামাল অনিয়ম আর দুর্নীতিতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। নবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষ পুলিশ তথা ওসির নাম শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

হোক ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী, ছাত্র, শিক্ষক অথবা কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক। সামাজিক কোনো সমস্যা অথবা পারিবারিক কোনো বিষয়ে ওসির কাছে গেলেই, ‘এই এটা ওসির রুম, একদম সাঁটিয়ে দিব’ বলে হুমকি দেন। দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের আখের গুছিয়ে একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি। ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।

এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার ওসি মোস্তফা কামালের সঙ্গে সোমবার যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর এ বিষয়ে জানতে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুম ভূঞা বলেন, আমাদের কাছে ওসি মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2019
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
232425262728  

সর্বশেষ খবর

………………………..