সিলেট ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯
সিলেট :: মহানগর যুবলীগ নেতা জাকিরুল আলম জাকিকের কথামতো ইয়াবা ব্যবসা ও অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ না নেওয়ায় হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা হয় তেররতন এলাকার বাসিন্দা ফজর আলীর পুত্র মিন্নত আলীকে। হামলায় তিনি পঙ্গ হওয়ায় একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার পরিবার এখন অসহায়। অথচ মামলার প্রধান এজাহার নামীয় আসামী হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও জাকিরকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। বরং উল্টো নিজের প্রাণনাশের চেষ্টা ও পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগ করেছেন মিন্নত আলী। তিনি বুধবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাকিরকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ তেররতন বাজার থেকে বাসায় যাওয়ার পথে আমার পথরোধ করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মহানগর যুবলীগের তথাকথিত সিনিয়র সদস্য ও চাঁদাবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ি ও অস্ত্রবাজ জাকিরুল আলম জাকির, ১৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সেবুল আহমদ সাগর, সাধারণ সম্পাদক সুমেল আহমদ, ছাত্রলীগ নামধারী সাবেক ছাত্রদল ক্যাডার সৈয়দ নাহিদ রহমান সাব্বির উরফে পাঙ্গাস সাব্বির, মামুনসহ ১০/১২ জন বন্দুক, দা, রামদা নিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে আমার উপর চড়াও হয়। তাদের হামলায় আমার বাম হাতের কব্জি দ্বি-খন্ডিত হওয়ার উপক্রম হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটের ডাক্তাররা আমাকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসা শেষেও আমার হাতের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। যার ফলে আমি বর্তমানে পঙ্গু জীবন যাপন করছি। আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকম ছেলে হওয়ায় আজ আমার পরিবার অসহায়। আমার বৃদ্ধা মায়ের ঔষধ কিনে দিতে পারছি না। আমাকে পঙ্গু করার পেছনের মূল হোতা জাকিরুল আলম জাকির আমার মামলার এজাহার নামীয় আসামী হয়েও বর্তমানে সে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। উল্টো সে আমার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন ও আমাকে হত্যা করার মিশনে নেমেছে। নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মিন্নত আলী জানান, জাকিরের সাথে মামাতো ভাই হিসেবে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন যুবলীগ নেতা শামীম ইকবাল। এরপর আমাকে দিয়ে নানা অপকর্ম করানোর চেষ্টা করতেন। একদিন আমাকে টাকা বানাতে হবে বলে ৪/৫ বছর আগে নিয়ে যান নাইওরপুল মসজিদের গলির ভিতর। সেখানে গিয়ে দেখি ৪/৫ জন মিস্ত্রি বাউন্ডারী ওয়াল করছেন। বুঝতে পারলাম উনি জায়গা দখল করার জন্য আমাকেসহ ৪/৫ জনকে নিয়ে এসেছেন। পরে এখান থেকে কেটে পড়ি। প্রায় ৩ বৎসর আগে একদিন জাকির আমাকে ফোন করে নেন ধোপাদিঘির পার শিশু পার্কের সামনে। সেখানে তার সঙ্গীয় ৫/৭ জন ছিলেন। হঠাৎ আমি কিছু বুঝে উঠার আগে দেখি জাকির দা দিয়ে জনৈক ব্যক্তিকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করছেন। আমি ভয় পেয়ে সেখান থেকে চলে আসি। পরে জানতে পারি, ওই ব্যক্তি লন্ডনী রোডের সৈয়দ রুবেল। সে নাকি জাকিরের প্রথম স্ত্রীর সাথে পরকীয়া করতো। তাই তাকে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। ২/৩ বৎসর আগে উপশহর এইচ বø¬ক ২নং রোডে হারুণ নামের শিবগঞ্জের মজুমদার পাড়ার এক ব্যবসায়ীকে মোটরসাইকেলে তুলে এনে বেদম প্রহার করেন জাকির। আমাকেও সেখানে ডেকে নেন। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে জাকিরসহ আমাদের ৯ জনকে শাহপরাণ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সবাই মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাই। মূল ঘটনা ছিল ঐ হারুণও নাকি তার প্রথম স্ত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক করেছিলো। ২/৩ বৎসর আগে আমাকে দিয়ে কানাইঘাটে তার শ্বশুর বাড়ীতে রাতে ককটেল মারতে চেয়েছিলেন জাকির। বিষয়টি জানার পর তার প্রাইভেটকার ছেড়ে আমি সিএনজিতে করে চলে আসি। জাকির তার প্রথম স্ত্রীর খালার (সুলতানার) জৈন্তাপুরের বাড়িতে গিয়ে কাস্টঘর থেকে ৩/৪ জন সুইপার নিয়ে ড্রেনের ময়লা বিষ্টা ছিঠিয়ে দেন। এমন অন্যায় অবিচার দেখে আমি সেখান থেকে চলে আসি। এমনভাবে জাকির উপশহরের এফ ব্লকের ২নং রোডে একটি বাসায় একজন দাতের ডাক্তারকে বন্দি করে রাখেন। সেখানে আমাকেও ডেকে নেন। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে আমিসহ ৩/৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। জাকির পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলাও হয়। পরে আমি এই মামলায় জামিন নেই। পরবর্তীতে এই বাসার মালিকের কাছে ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে জাকির। পরে পুলিশের সহায়তা মালিক জাকিরকে বাসা ছাড়া করেন। এ ঘটনা তৎকালিন কাউন্সিলর ও ঢাকা ব্যাংকের ম্যানেজার আজাদ উদ্দিন অবগত আছেন।
মিন্নত আলী জাকিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভুয়া পরিচয় দিয়ে আরো নানা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার কথা তুলে ধরে মিন্নত বলেন, জাকির আমাকে ইয়াবা ব্যবসার কথা বলে জানান, জকিগঞ্জের কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়েছে। তুই শুধু এগুলো দেখভাল করবে। এতে তুই মাসিক ৩/৪ লক্ষ টাকা রোজগারের সুযোগ পাবে। জাকির আমাকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের কথা বলত। আমি তার এসকল কথায় রাজি না হওয়ায় জাকিরের সাথে আমার মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। আমি জাকিরের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। এর পর থেকে জাকির আমাকে প্রায়ই যেখানে পেতো সেখানে বলত, এই সমস্ত ঘটনা কাউকে বললে সে আমাকে খুন করে ফেলবে। তাই সে আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে ১৩ মার্চ হামলা করে। এ ঘটনায় আমি শাহপরাণ (রহ.) থানায় মামলা দায়ের করি। সে মামলায় জাকির প্রধান আসামী। আর ঐ মামলায় জাকির পলাতক রয়েছে। আমি জাকির ও তাহার সঙ্গীয়দের হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবন যাপন করছি। তিনি জাকির ও তার সঙ্গীয়দের দ্রুত গ্রেফতার ও আদালতের ন্যায় বিচারের দাবি জানান।
মিন্নত আলীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রুহুল আমিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সৈয়দ নিয়াজ আহমদ, সিদ্দিকুর রহমান, তামিম হাসান হৃদয়, রুবেল আহমদ, আরজু প্রমুখ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd