বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেট-২ আসনে সংসদ সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান তার প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন। বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত ২৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত ২ ডিসেম্বর জেলা রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করে মুহিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এম কাজী এমদাদুল ইসলাম।
পরবর্তীতে মুহিবুর রহমান নির্বাচন কমিশনে আপিল দায়ের করলে গত ৭ ডিসেম্বর আগারগাঁও নির্বাচন ভবন এজলাসে আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আপিলেও তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। ফলে তিনি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এরপর সোমবার (১১ ডিসেম্বর) হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট শুনানী শেষে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে মুহিবুর রহমানের প্রার্থীতা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। এর প্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার মুহিবুর রহমানের প্রার্থীতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। নির্বাচনী মার্কা হিসেবে তিনি ডাব প্রতিক পেয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে আওয়ামীলীগ তথা মহাজোটের মনোনয়ন বঞ্চিত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বলয়ের নেতা মুহিবুর রহমান ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপর ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনের পর তিনি জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগের যোগদান করেন এবং ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের মধ্যে সৃষ্টি হয় দন্ধ। তখন দুই নেতার পক্ষ অবলম্বন করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এক পর্যায়ে মুহিবুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেলেও শেষ পর্যন্ত শফিকুর রহমান চৌধুরী দলীয় ও মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন। তখন দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে মুহিবুর রহমান সংসদ নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান।
এরপর উপজেলা নির্বাচনেও মুহিবুর রহমান প্রার্থী হলে শফিকুর রহমান চৌধুরী দলীয় ভাবে সমর্থন দিয়ে এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদকে উপজেলা নির্বাচনে দাঁড় করান। এই নির্বাচনে মুহিবুর রহমান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন ভোট পেয়ে ২য় বারের মত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর থেকে দুই জনের মধ্যে (শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহিবুর রহমান) দন্ধ চরম আকার ধারন করে। এই দন্ধের জের ধরেই ২০১০ সালের জানুয়ারীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে মুহিবুর রহমান’সহ তার অনুসারী ১৫জন নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। পরবর্তীতে মুহিবুর রহমান ছাড়া ১৪ নেতার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচেন ফের শফিক চৌধুরী ও মহিবুর রহমান মনোনয়ন যুদ্ধে অবতির্ণ হলে বঞ্চিত হন দু’জনই। আসনটি চলে যায় জাতীয় পার্টির কব্জায়। মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এমপি হন ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মুহিবুর রহমান বিদ্রুহী প্রার্থী হলেও তিনি পরাজিত হন। নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্য চলে যান মুহিবুর রহমান। সেখানে গিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্ত এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মুহিবুর রহমান।